তপন বিশ্বাস: ইসলামপুর
পরিবারের পেটের তাগিদে নাবালক দুই সন্তানকে কলকাতার কাছে জিন্স ধোওয়ার কারখানায় পাঠিয়েছিলেন বাবা-মা। মাস শেষে মজুরির টাকা চেয়েছিল দুই কিশোর। মিলল চোরের অপবাদ। তার চলল অমানুষিক বর্বরতা।
নির্যাতন হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার মহেশতলায়। কারখানা সেখানেই। দুই কিশোরের বাড়ি উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে।
দুই ভাইয়ের একজনকে অত্যাচারের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। পা বেঁধে ঝুলিয়ে দেওয়াই শুধু নয়, ইলেকট্রিক শকও দিতে দেখা গিয়েছে ভিডিও-তে। যদিও সেই ভিডিও-র সত্যতা যাচাই করেনি গণশক্তি ডিজিটাল।
ঘটনা ঘিরে তোলপাড় হতেই মহেশতলা পৌরসভার রবীন্দ্রনগর থানার এই ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়ে সর্বত্র। কয়েকদিন আগে পূর্ব মেদিনীপুরের পাশকুঁড়ায় আরেক কিশোরকে চোর অপবাদ দেওয়ায় আত্মঘাতী হয়েছিল সে। মা-কে লিখে গিয়েছিল ‘আমি চুরি করিনি’। তার পরপরই মহেশতলার এই ঘটনা।
ইসলামপুরে ছোঘরিয়া গ্রামে দুই কিশোরের পরিবার বলেছে, মোবাইল চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাদের ছেলেকে উল্টো করে ঝুলিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে বৈদ্যুতিক শকও। আক্রান্ত ওই কিশোরের নাম সামসাদ আলি (১৪)। পরিবার জানিয়েছে, ছোঘরিয়া এলাকার বাসিন্দা শাহেনশার কারখানা রয়েছে মহেশতলায়। সেই কারখানায় দুই ভাই সামসাদ আলি ও আনসার আলিকে নিয়ে যায় শাহেনশা। প্রায় দেড় মাস ধরে সেখানেই কাজ করছিল ওই দুই কিশোর।
অভাবের সংসার, সামনেই বকরি ঈদ। ওই দুই কিশোরের বাবা দিল মহম্মদ শাহেনশার কাছে দুই ছেলের মজুরির টাকা চান।
দিল মহম্মদের অভিযোগ, দেড় মাস হল দুই ছেলেকে কাজে পাঠিয়েছি। সামনে পরব রয়েছে। ঘরে টাকার খুব প্রয়োজন। তাই টাকা চেয়ে ফোন করেছিলাম শাহেনশাকে। কিন্তু টাকা যাতে না দিতে হয়, সেই কারণে মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে আমার ছেলেকে অমানবিক ভাবে উল্টো করে ঝুলিয়ে বেল্ট দিয়ে, তিন দিন ধরে অত্যাচার চালিয়েছে। অত্যাচারের ভিডিও পাঠানো হয় গ্রামের এক ব্যক্তির মোবাইলে। এমনকি তিনদিন ধরে দুই ছেলেকে কিছু খেতে দেওয়া হয়নি। তারপরেও আমরা বলেছি কোন সমস্যা হলে ছেলেদের বাড়িতে দিয়ে যান তারা অপরাধ করলে তা এখানে বসেই মিটিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।
পরিবার জানিয়েছে, তাদের কোনো কথা না শুনে ওই কিশোরকে দড়ি দিয়ে উল্টো করে ঝুলিয়ে বেধড়ক মারধর ও বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়।
গোটা ঘটনায় ইসলামপুর থানার পাটাগোড়া ফাঁড়ির পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন সামসাদ আলির পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের দাবি, ছেলেকে সুস্থ ভাবে বাড়িতে পৌঁছে দিতে হবে। ইসলামপুর থানার পাটাগড়া ফাঁড়ির পুলিশ মঙ্গলবার বিকেলে ওই দুই কিশোরের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে।
যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কারখানা মালিকের পরিবার সদস্যরা। দাবি করা হয়েছে মারধরের ঘটনা ঘটেনি। মোবাইল চুরিতে বকাঝকা করা হয়েছে মাত্র। অভিযুক্তের বৌদি এমনও দাবি করেন যে ‘মজা করার জন্য ভিডিয়োটি বানানো হয়েছিল।’
এদিকে মহেশতলা রবীন্দ্রনগর থানার আইসি মুকুল মিয়াঁ বলেন, ভিডিওটি আমাদের নজরে এসেছে। ওই দুই কিশোরের পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। ওই ফ্যাক্টরি বন্ধ রয়েছে এবং মালিক পলাতক। এছাড়া অভিযোগের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা করা হবে।
ঘটনার তীব্র নিন্দা করে সিপিআই(এম) উত্তর দিনাজপুর জেলা সম্পাদক আনোয়ারুল হক বলেন, ‘‘আগে ভিন রাজ্যে এই ধরনের ঘটনা ঘটতো। এখন পশ্চিমবঙ্গে নাবালকদের উপর অত্যাচারের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। ওই শিশুদের শিক্ষার অধিকার আইনে স্কুলে থাকার কথা। তাদের বেআইনিভাবে কাজে লাগিয়ে বেতন না দেওয়ার ফন্দিতে মধ্যযুগীয় কায়দায় অত্যাচার চালানো হয়েছে। অবিলম্বে ওই ফ্যাক্টরি বন্ধ করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলছি।’’
Comments :0