ভোট গণনা কেন্দ্রের বাইরে প্রাচীরের পাশে পাওয়া গেল প্রিসাইডিং অফিসারের স্বাক্ষর করা ব্যালট পেপার। যে ব্যালটের অধিকাংশ সিপিআই(এম)’র প্রতীকে ছাপ দেওয়া।
পূর্বস্থলী-২ ব্লকের ভোট গণনা কেন্দ্রের কাছে পড়ে থাকা ব্যালট মিললে ফের ফল লুটের ক্ষোভ তীব্র হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্ট বুথে সিপিআই(এম) প্রার্থীকে মাত্র তিন ভোটে পরাজিত বলে ঘোষণা করা হয়।
পূর্ব বর্ধমানের এই ব্লকের ভোট গণনা কেন্দ্র হয়েছিল পাটুলি কিষান মান্ডিতে। ভোট গণনার পরে কিষাণ মান্ডির প্রাচীরের পাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় গোছা গোছা ব্যালট পেপার পাওয়া যায়। ব্যালট পেপারগুলিতে সিপিআই(এম)’র প্রতীক কাস্তে হাতুড়ি তারায় ভোটদাতাদের ছাপ দেখতে পান স্থানীয়রা। ছড়ায় ক্ষোভ।
সিপিআই(এম) বা কংগ্রেস, আইএসএফ’র প্রার্থীদের ছাপ মারা ব্যালট ফেলে দেওয়ার বিভিন্ন ঘটনাই নজরে এসেছে রাজ্যবাসীর।
প্রত্যেকটি ব্যালট পেপারের নিচের দিকে প্রিসাইডিং অফিসারের স্বাক্ষর করা আছে বলে জানিয়েছেন সিপিআই(এম)’র স্থানীয় নেতারা। ভোট নেওয়ার সময় প্রিসাইডিং অফিসাররা ব্যালট পেপারে সই করেন। এই ব্যালট পেপারগুলি পূর্বস্থলী গ্রাম পঞ্চায়েতের ২২৮ নম্বর বুথের অন্তর্গত কারিগর পাড়ার। এখানে মারিয়া বিবি শেখ সিপিআই(এম) প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাঁকে মাত্র তিন ভোটে পরাজিত করা হয়েছে।
পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে মানুষের রায়ে বেলাগাম লুটের এমন ছবি মিলছে রাজ্যের প্রায় সর্বত্র। সিপিআই(এম), কংগ্রেস এবং আইএসএফ বলেছে যে মনোনয়ন পর্ব থেকে শুরু হয়েছে লুটের প্রক্রিয়া। তৃণমূলের পাশাপাশি রাজ্য নির্বাচন কমিশন এই লুটের প্রক্রিয়ায় যুক্ত। ভোটের দিন সন্ত্রাস চালিয়েও সুবিধা হয়নি। ফলে গণনা কেন্দ্রে চলেছে লুটতরাজ। বিরোধী প্রার্থীদের পক্ষে ছাপ থাকলে ব্যালট ফেলে দেওয়া হয়েছে যত্রতত্র। তারপরও জিততে না পারলে বিরোধী জয়ী প্রার্থীকে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়নি। তৃণমূলের দাবি মেনে ফের গণনা হয়েছে বিরোধী এজেন্টদের বের করে দিয়ে। তারপর তৃণমূল প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
সিপিআইএমের পূর্বস্থলী-২ এরিয়া কমিটির অন্যতম সদস্য কার্তিক দাস বলেন, ‘‘এইরকম ঘটনা ঘটানো হবে বলে আগেই আমরা আশঙ্কা করেছিলাম। তাই পূর্বস্থলী-২ বিডিও’র কাছে দাবি করেছিলাম যাতে ভোট গণনার দিন ব্যালট বক্স আনা নেওয়ায় কোনও অস্থায়ী কর্মচারীকে ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু তা মানা হয়নি।’’
বিডিও সৌমিক বাগচী বলেন, ‘‘ব্যাপারটা বুঝতে পারছি না। এত নিরাপত্তার মধ্যেও কী করে ছাপ মারা ব্যালট বাইরে পাওয়া গেল দেখা হচ্ছে।’’
পঞ্চায়েত ভোটে লুটের মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট ১২ জুলাই একাধিক নির্দেশিকা জারি করেছে। আদালত জানিয়েছে, মামলার ফলাফলের ওপর নির্ভর করে পঞ্চায়েত ভোটের জয় পরাজয়। একগুচ্ছ নির্দেশিকাও জারি করেছে হাইকোর্ট। বলা হয়েছে, প্রতিটি ব্যালট বাক্স সংরক্ষণ করতে হবে কমিশনকে।
কিন্তু সেই বক্স থেকে ছাপ মারা ব্যালট পেপার বেরিয়ে যাওয়াই প্রশ্ন উঠে গেল। ভোট প্রক্রিয়ায় সিপিআই(এম), কংগ্রেস বলেছে যে নকল ব্যঅলট ছাপানো হয়েছে। কমিশন নির্দেশিকায় প্রিসাইডিং অফিসারের সই ছাড়াই ভোট নেওয়ার ব্যবস্থা করে। প্রতিবাদের মুখে পরে তা ফিরিয়ে নিতে হবে।
সিপিআই(এম) গণনা পর্বেই বলেছে, প্রতিটি ব্যালটের হিসেব বা অডিট থাকতে হবে। গণনা কেন্দ্রের সিসিটিভি ফুটেজ রাখতে হবে। এর আগে মনোনয়ন পর্বেও সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করতে বলা হয়েছিল কমিশনকে। কিন্তু তা করা হয়নি। তৃণমূলের এক প্রার্থীর নামে মনোনয়ন পড়েছে যিনি দেশেই ছিলেন না।
পূর্বস্থলীর ব্যালট বেনিয়মের প্রতিবাদ করে সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অঞ্জু কর বলেন, ‘‘এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সর্বত্রই পরিকল্পিতভাবে কারচুপি করা হয়েছে। এটি তার আরেকটি নমুনা। আমরা পূর্বস্থলী দুই ব্লকের এই ঘটনাটি নিয়ে আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছি।’’
পূর্বস্থলী-২ ব্লকের ভোট গণনা কেন্দ্রের বাইরে পাওয়া ব্যালট পেপার ও তার পিছনে প্রিজাইডিং অফিসারের স্বাক্ষরের ছবি
Comments :0