খুনের কারণ ‘কুমারী বলি।’ পুলিশ অন্তত সোমবার পর্যন্ত তাই জেনেছে।
কিন্তু এই অপরাধ ঠেকানো যেত, যদি শ্রমিকের শিশুকন্যাকে খুঁজতে একটু দরদ দেখাতো পুলিশ। অন্তত স্থানীয়দের কথায় এমনই অভিযোগই ফুটে উঠেছে।
যে এলাকায় শিশুকন্যাকে খুন করা হয়েছে, সেটি কলকাতা কর্পোরেশনের ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে। এই ওয়ার্ডে রেকর্ড ভোটে জয় ‘হাসিল’ করেছে তৃণমূল। কাউন্সিলার ফৈয়াজ খান, মন্ত্রী জাভেদ খানের ছেলে। দু’জনের কেউই নিহত শিশুটির বাড়ি যাননি। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, তল্লাশি করে ৭ বছরের মেয়েটিকে উদ্ধারের দাবি নিয়ে রবিবার তাঁরা যখন থানায় যান, তখন খাবারে ব্যস্ত পুলিশ! এর মধ্যেই ফোন করে তৃণমূলের মহিলা এবং যুবক কর্মীদের ডেকে আনে পুলিশ। তৃণমূলের লোকজন এসে থানায় ঢুকে যায়। থানার প্রধান দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাইরে মানুষ চিৎকার করতে থাকেন। ভিতর থেকে পুলিশ আর তৃণমূল কর্মীরা তড়পাতে থাকে।
এদিন এই বিষয়ে জানতে জাভেদ খানকে ফোন করা হলে, তাঁর জবাব, ‘‘দশ মিনিট পরে করুন, আমি বলছি।’’ দশ মিনিট পরে তিনি আর ফোন ধরেননি।
এদিকে শিশুকন্যাকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। ধৃত ওই অভিযুক্তের নাম অলোক কুমার। পুলিশের দাবি, নিজের দোষ কবুল করেছে অভিযুক্ত। তদন্তকারীদের কাছে সে দাবি করেছে, স্ত্রী’র তিনবার গর্ভপাত হয়ে গিয়েছে। তান্ত্রিক পরামর্শ দিয়েছিলো ‘কুমারী বলি’র। তাই সে ওই কাজ করেছে। সোমবার এই খবর পাওয়ার পর কলকাতা পুলিশের একটি দল বিহারে ওই তান্ত্রিককে ধরতে পাড়ি দিয়েছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে খুনের পাশাপাশি পকসো আইনেও মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, যৌন অত্যাচার চালিয়ে ফুটফুটে ওই শিশুকন্যার মাথায় হাতুড়ি মেরে খুন করেছে অভিযুক্ত। খুন করার পর শিশুকন্যাকে সুটকেসে ভরে রান্নাঘরে রেখে সে দুপুরের রান্না-খাওয়া করেছে। এই খবর জানতে পেরে মানুষ শিউরে উঠছেন। চূড়ান্ত অমানবিক কাজের পরেও পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া অলোক কুমারের কোন তাপ–উত্তাপ নেই। জেরায় একের পর এক সব নির্বিকারে স্বীকার করে যাচ্ছে অভিযুক্ত। স্বীকার করেছে যৌন নির্যাতনের কথাও।
নিহত শিশুটি স্থানীয় জাগৃতি বিদ্যাপীঠের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী। তার বাবা শ্রমিক। মা গৃহবধূ। তার ছোট ভাই আছে। একটি ছ’তলা বাড়ির চার তলায় তারা থাকে। একতলায় থাকে অভিযুক্ত। সবাই ভিন রাজ্যের এবং গরিব। নামে ফ্ল্যাট হলেও ঘরগুলি অত্যন্ত ছোট। কোনরকমে দিনগুজরান করেন এখানকার বাসিন্দারা।
কেমন করে খুন করা হয় নাবালিকাকে? পুলিশের দাবি, জেরায় অলোক কুমার খুনের টানা বিবরণ দিয়েছে। জানিয়েছে, শিশুটিকে ঘরে টেনে এনেই যৌন নির্যাতন শুরু করে সে। শিশু কাঁদতে শুরু করলে তার মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে। এরপরে মেয়েটি বেহুঁশ হয়ে গেলে শ্বাসরোধ করে তাকে খুন করা হয়। বেহুঁশ অবস্থায় নাবালিকাকে ধর্ষণ করার কথাও পুলিশের কাছে কবুল করেছে অভিযুক্ত। তাতেই রক্তপাত ঘটে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের সঙ্গে অভিযুক্তের বয়ান মিলিয়ে দেখতে চাইছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই অলোক কুমারের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালাতে গিয়েই সুটকেসে মেলে শিশুকন্যার দেহ। রান্নাঘরে পড়ে থাকা ওই সুটকেস খোলার চেষ্টা করতেই অলোক কুমার বাধা দিতে থাকে, এতেই পুলিশের সন্দেহ দৃঢ় হয়। শেষপর্যন্ত সুটকেস খুলতেই মেলে রক্তাক্ত দেহ। শিশুটির শরীরের মাথা, কান এবং দেহের একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন মিলেছে।
Child murder
খুনের আগে-পরে যৌন নির্যাতনের বর্বরতা কবুল ধৃতের
×
Comments :0