অরিজিৎ মণ্ডল
আইজীবীদের একটা ঘরে বসে রয়েছেন মীনাক্ষী মুখার্জীরা। যুব নেতা চিরঞ্জিত রায়কে জামিন দিয়েছে শিয়ালদহ আদালত। ঘরের ভিতরে তিল ধারনের জায়গা নেই। ভিড় ঠেলেই এগিয়ে এলেন এক ষাটোর্ধ্ব মহিলা। প্রথম কথাই হলো ‘সেলাম তোমাদের তোমরা ওই দিন গাড়িটা না আটকালে এত কিছু হতোই না।’
ধীরে ধীরে কথা এগোলো, পরিচয় জানালেন মহিলা। তিনি শ্যামবাজারে থাকেন তাঁর ছেলে ১৪ আগস্ট প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন, সেটাই তাঁর সব থেকে বড় অপরাধ। মিথ্যা মামলা জেল খাটালো পুলিশ। যুব নেতৃত্বকে জানালেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা।
কোনো দিন থানায় পা না দেওয়া এক মা কি ভাবে গত দু মাসের কোর্টের চক্কর কেটেছেন। বলতে বলতে কেঁদে পর্যন্ত ফেললেন। শুধু শেষে বললেন, ‘তোমরা লড়াই করো আমরা সবাই সাথে আছি’। মীনাক্ষী মুখার্জীও তাঁর লড়াইকে কুর্নিশ জানালেন।
আর জি কর কাণ্ডে প্রতিবাদ করায় ১৭ আগস্ট গ্রেপ্তার করা হয় চিরঞ্জিত রায়কে। বেহালার বাড়ি থেকে রাতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় লালবাজারে।
জামিনের খবর আসতেই শিয়ালদহ আদালতে পৌঁছে যান মীনাক্ষী মুখার্জী ধ্ৰুবজ্যোতি সাহা কলতান দাসগুপ্ত সহ যুব নেতৃত্ব। ধীরে ধীরে জড়ো হন আরও বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা। আইনজীবীদের সাথে কথা বলেন যুব নেতৃত্ব। কি ভাবে শুধু এসএফআই ডিওয়াইএফআই মহিলা সমিতির কর্মী সমর্থক ছাড়াও সাধারণ প্রতিবাদীদের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতরা করেছে দলদাস পুলিশ তা নিয়েই আলোচনা চলছিল আইনজীবীদের মধ্যে।
তারপর শুরু হয় অপেক্ষার পর্ব। চিরঞ্জিত সহ বাকি বন্দিদের বাড়ির সদস্যরা ভাগ করে নিচ্ছিলেন তাঁদের গত প্রায় দুই মাসের অভিজ্ঞতা।
ততক্ষণে ভিড় বাড়ছে কোর্ট চত্বরে। সাথে বাড়ছে মালা। হঠাৎ করে একজন বললো, আরে লাল আবির আনা হয়েছে? মিনিট দশেকের মধ্যেই চলে এলো লাল আবিরও।
তার কিছুক্ষণের মধ্যেই ছাড়া হলো চিরঞ্জিত রায় সহ বাকিদের। শিয়ালদহ আদালতে তখন শুধুই স্লোগান শোনা যাচ্ছে জেল কে তালে টুট গায়ে হামারে কমরেড ছুট গেয়ে। কান্নায় ভেঙে পড়লেন চিরঞ্জিতের পরিবারের সদস্যরা। সবাই শুধু লাল আবিরে মেখে আছেন।
কোর্টে ভিতর থেকে বাইরে আসতেই সময় লাগল প্রায় ১৫ মিনিট। এখন চিরঞ্জিতের গন্তব্য যাদবপুর। সিপিআই(এম) এর বুকস্টলে সংবর্ধনা দেওয়া হবে তাঁকে। কিন্তু এই সংবর্ধনা কোনও জয়ের উপহার নয়। বিগত প্রায় দুইমাস ধরে লড়াইয়ের যে বিপুল অভিজ্ঞতা চিরঞ্জিত সহ বাকিরা পেল জেলের ভিতর সেই অভিজ্ঞতার স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়বে গোটা কলকাতা জুড়ে গোটা রাজ্য জুড়ে।
Comments :0