সরকার নোটবন্দির মতো পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সুপ্রিম কোর্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে সম্মতি কেবল এটুকুই। নোটবন্দির মতো পদক্ষেপের ফলে জনজীবনের মারাত্মক সঙ্কটকে অনুমোদন করছে না এই রায়।
নোট বাতিল সংক্রান্ত মামলায় সোমবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় এই অভিমত জানিয়েছে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো। এদিন পলিট ব্যুরোর বিবৃতিতে মনে করানো হয়েছে যে নোট বাতিলের পক্ষে সরকারের ঘোষণা করা কোনও লক্ষ্যের ধারেকাছে পৌঁছানো যায়নি। বরং, নোট বদলানোর জন্য ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়ানো মানুষ বা অক্লান্ত কাজে যুক্ত ব্যাঙ্ককর্মীদের মৃত্যু হয়েছে। কেবল একমাসেই ৮২ জন প্রাণ হারিয়েছেন নোট বাতিলের সরাসরি প্রভাবে।
এদিন সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারকে বৈধ ঘোষণা করেছে। কিন্তু চার বিচারপতি পক্ষে থাকলেও বেঞ্চে অন্যতম সদস্য বিচারপতি বিভি নাগরত্ন ভিন্নমত জানিয়েছেন।
পলিট ব্যুরো বলেছে, সুপ্রিম কোর্ট কেবলমাত্র বিবেচনা করেছে নোট বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার সরকারের আছে কিনা। সেইসঙ্গে বিবেচনা করেছে ১৯৩৪ সালের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আইনের ২৬(২) ধারার লঙ্ঘন হয়েছে কিনা। ভিন্নমত পোষণ করেছেন যে বিচারপতি তিনি জানিয়েছেন যে এমন সিদ্ধান্তের আগে আইন অনুযায়ী রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে সুপারিশ সরকারকে পাঠানো বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে সরকার নিজেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতামত চেয়েছিল। ফলে সিদ্ধান্ত সংসদে অনুমোদন করানো জরুরি ছিল।
পলিট ব্যুরো রায় প্রসঙ্গে বলেছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতি মনে করেছেন যে সরকারের লক্ষ্যের সঙ্গে এই পদক্ষেপ সাযুজ্যপূর্ণ। ফলে লক্ষ্য পূর্ণ হলো কিনা তা বিবেচ্য নয়। সংখ্যা গরিষ্ঠের রায় নোট বাতিলে সিদ্ধান্তকে বৈধ মনে করলেও তার ফলাফল নিয়ে কোনও কথা বলেনি।
এরপরই পলিট ব্যুরো বলেছে, সংগঠিত ক্ষেত্রকে ধ্বংস করেছে এই পদক্ষেপ। ক্ষুদ্র শিল্প, মাঝারি শিল্প পঙ্গু হয়ে গিয়েছে। কোটি কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছেন। ২০১৬’তে নোট বাতিলের পর থেকে এক মাসের মধ্যে ৮২ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
পলিট ব্যুরো মনে করিয়েছে যে সরকারের ঘোষিত লক্ষ্যগুলি কী ছিল। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কালো টাকা খুঁজে বের করা এবং বিদেশী ব্যাঙ্কগুলি থেকে ফেরত আনা, জাল টাকা ধ্বংস করা, সন্ত্রাসে অর্থ জোগানো বন্ধ করা, দুর্নীতি বন্ধ করা এবং অর্থনীতিতে নগদ প্রবাহ হ্রাস করার লক্ষ্য ঘোষণা করেছিল সরকার। কিন্তু কোনও লক্ষ্যই পূরণ হয়নি। বরং, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্যই জানাচ্ছে যে জনসাধারণের হাতে নোটবন্দির প্রাক্কালে যেখানে নগদে ১৭.৭ লক্ষ কোটি টাকা ছিল এখন ৩০.৮৮ লক্ষ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। নগদের বৃদ্ধির হার তা ৭১.৮৪ শতাংশ।
পলিট ব্যুরো বলেছে, সুপ্রিম কোর্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ রায় শুধুমাত্র সরকারের তরফে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারকে বৈধ বলে জানিয়েছে। কিন্তু কোনোভাবেই এই ধরনের সিদ্ধান্তের পরিণতিকে অনুমোদন করছে না।
Comments :0