জানা অজানা — নতুনপাতা, ২৫ শে বৈশাখ - বর্ষ ৩
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ক্ষিতিমোহন সেন
তপন কুমার বৈরাগ্য
ভারতের বিজ্ঞানচর্চার আদিগুরু বলা হয় ক্ষিতিমোহন সেনকে।তিনি ১৮৮০খ্রিস্টাব্দের ৩০শে ডিসেম্বর ঢাকার
বিক্রমপুরে জন্মগ্রহণ করেন।নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ও দার্শনিক অমর্ত্য সেন তার দৌহিত্র।১৯০২ খ্রিস্টাব্দে
কাশীর কুইন্স কলেজ থেকে সংস্কৃতে এম,এ ডিগ্রি লাভ করেন এবং শাস্ত্রী উপাধি লাভ করেন।প্রথমে ১৯০৭খ্রিস্টাব্দে চাম্বারাজ
এস্টেটে শিক্ষাসচিব হিসাবে যোগদেন।১৯০১খিস্টাব্দের ২২শে ডিসেম্বর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা
করেন।যাকে বলা হয় পাঠভবন।উদ্দেশ্য আত্মশুদ্ধি ও চেতনাবোধের উন্মেষ ঘটানো।তিনি নিজেও এই পাঠভবনে বেশ কিছুদিন শিক্ষকতা করেছিলেন।১৯০৮খ্রিস্টাব্দ।তিনি তাঁর হাতে গড়া ব্রহ্মচর্যাশ্রমের জন্য একজন অধ্যক্ষ খুঁজছিলেন।পন্ডিত হিসাবে ক্ষিতিমোহনের নাম তখন চারিদিকে।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার
নাম শুনলেন।তিনি এমন একজন মহান ব্যক্তিকে তার পাঠভবনে অধ্যক্ষ হিসাবে চান। তিনি ক্ষিতিমোহনকে চিঠি লিখলেন
পাঠভবনের অধ্যক্ষ হিসাবে যোগদানের জন্য। রবীন্দ্রনাথ তার থেকে ১৯বছরের বড়। রবীন্দ্রনাথের চিঠি পেয়ে খুব
আনন্দিত হলেন।ট্রেনে করে বোলপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। ট্রেন থেকে যখন নামলেন তখন সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হয়ে গেছে।
চারিদিকে মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে।তিনি কিছুতেই শান্তিনিকেতনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে পারলেন না।বৃষ্টি থামার লক্ষণ নেই।
অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করতে থাকলেন রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য।সারারাত্রি তিনি বোলপুর স্টেশনে বসে কাটালেন।
সকালে বৃষ্টি ধরে এলে তিনি বেড়িয়ে পড়লেন।হাঁটতে হাঁটতে তিনি শান্তিনিকেতনে চলে এলেন। তখন সকাল হয়ে এসেছে।
রবীন্দ্রনাথ আপন মনে গেয়ে চলেছেন--'তুমি আপনি জাগাও মোরে'।এ গান শুনে ক্ষিতিমোহনের হৃদয় ভরে গেল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে দেখতে পেয়ে গান থামালেন।তার কাছে ছুটে এলেন।ক্ষিতিমোহন তার পরিচয় দিলেন ।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে সাদরে গ্রহণ করলেন। তিনি হলেন শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মচর্যাশ্রমের অধ্যক্ষ।
রবীন্দ্রনাথ তাকে নিয়ে ভারতের অনেক জায়গা ভ্রমণ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ১৯২৪খ্রিস্টাব্দে যখন চিন ভ্রমণে গিয়েছিলেন
তখন তার সবসময়ের সফর সঙ্গী ছিলেন ক্ষিতিমোহন সেন। রবীন্দ্রনাথ ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেন।
ক্ষিতিমোহন ১৯৫৩--১৯৫৪খ্রিস্টাব্দে এখানকার অস্থায়ী উপাচার্য ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের চেয়ে তিনি ছোট হলেও রবীন্দ্রনাথ
তাকে গভীর শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন।ক্ষিতিমোহন রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লিখেছেন রবীন্দ্র প্রসঙ্গ বইটি।তিনিই প্রথম ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে দেশিকোত্তম পান।
Comments :0