জানা অজানা — নতুনপাতা
আত্মহত্যা বৃক্ষ
তপন কুমার বৈরাগ্য
পৃথিবীতে কতো অদ্ভূত অদ্ভূত গাছ আছে।তাদের কথা আমরা
কতটুকু জানি।এর মধ্যে আছে ভয়ঙ্কর বিষাক্ত গাছ। যে গাছের
বিষ সবচেয়ে বেশি বিষধর সাপের চেয়েও শতগুণ বেশি।এই রকম
একটা গাছের নাম সুইসাইড প্ল্যান্ট।যে গাছ অস্ট্রেলিয়ার রেন
ফরেস্ট অথবা উত্তর কলম্বিয়ার গভীর বনে জন্মায়। তাই সেখানকার বনে ঘুরতে হলে সাবধানে ঘুরতে হবে অথবা
সব ধরনের উদ্ভিদ সম্পর্কে ভালো করে জানতে হবে। এই গাছ
একশো ফুটের কাছাকাছি লম্বা হয়।আমাদের দেশের আমগাছের
মতন দেখতে এই গাছ।প্রচুর ডালপালা আছে।ডালে ডালে
প্রচুর পাতা আছে ।এই পাতাগুলো দেখতে আমাদের দেশের
অশত্থ পাতার মতন।এর পাতাগুলো চার ইঞ্চি মতন লম্বা হয়।পাতাগুলো ঘন সবুজ।কোনো কোনো পাতায় আবার নকশা করা থাকে।গাছে অসংখ্য কাঁটা থাকে। এই কাঁটার মধ্যেই থাকে বিষ।কারো গায়ে সামান্য একটু কাঁটার স্পর্শ লাগলে সারা দেহে জ্বলুনি শুরু হয়।ক্রমশঃ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়।একসময় এই জ্বলুনি সীমা ছাড়িয়ে যায়।তখন মানুষ দিগবিদিক জ্ঞান হারিয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়।অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দশকে মেরিনা হারলে নামক একজন উদ্ভিদ বিজ্ঞানী বনে ঘুরতে ঘুরতে এই গাছের সন্ধান পান।তিনি দেখেন এই গাছের আশেপাশে বেশকিছু আদিবাসী শ্রেণির মানুষের মৃতদেহ ।তার মনে প্রশ্ন জাগল এই গাছটার কাছাকাছি অন্য গাছে কেন ঝুলন্ত সব মৃতদেহ। তিনি তার কৌতূহল নিবারণের জন্য গাছের কাঁটাতে একটা ব্যাঙ ধরলেন।কিছুক্ষণ পর ব্যাঙটা ছটফট করতে করতে মারা গেল।মেরিনা বুঝতে পারলেন আসল রহস্য।
তিনি বললেন এই গাছের প্রতিটা কাঁটায় আছে নিউরো অক্সিন নামক বিষ।এর জ্বালা সাংঘাতিক।এর মতন জ্বালাময় বস্তু আর পৃথিবীতে দ্বিতীয়টা নেই। এই গাছে জানুয়ারী ফ্রেব্রয়ারি মাসে মুকুল আছে।মুকুলকে দেখতে আমাদের দেশের আমের মুকুলের মতন।মুকুল এলে গাছকে দেখতে অপূর্ব সুন্দর লাগে।ফলগুলো
আমাদের দেশের আমের মতন।এই গাছের ফল দেখতেও অপূর্ব সুন্দর।
তবে এই গাছ কেউ বাড়িতে লাগায় না।এই গাছের আয়ু
শত বছরের উপর। মেরিনা এই গাছের পরিচিতি দেবার পর,
এই গাছ সম্পর্কে বনযাত্রীরা সাবধান হয়ে গেছেন। তবে
আশার কথা এই গাছের সংখ্যা পৃথিবীতে খুবই নগন্য।সারা
আমাজনের মতন বন খুঁজে এই গাছের সংখ্যা আট থেকে
দশটার বেশি পাওয়া যাবে না।
মন্তব্যসমূহ :0