‘‘শুধু শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষাই নয়, দেশের সমস্ত উৎপাদনশীল ক্ষেত্র কর্পোরেট অধিগ্রহণের থেকে রক্ষা করাই আগামী ৯ জুলাইয়ের ধর্মঘটের বৃহত্তর উদ্দেশ্য। আট ঘন্টা কাজের দাবির মতোই এই আন্দোলনের এক ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। দাবি না মেটা পর্যন্ত শ্রমিকরা আন্দোলনের রাস্তা থেকে সরে দাঁড়াবে না। ৯ জুলাই কেবল শুরুয়াত।’’ সোমবার দিল্লির প্রেস ক্লাবে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের ডাকা সাংবাদিক বৈঠকে এমনই জানিয়েছেন সিআইটিইউ’র সাধারণ সম্পাদক তপন সেন। পাশাপাশি তিনি বলেন, গত ১১ বছর ধরে একনাগাড়ে শ্রমিক শ্রেণির সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে মোদী সরকার। ‘মুক্ত অর্থনীতির’ নাম করে বহু লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে শ্রমিকদের অর্জিত অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। মোট ২৯টি শ্রম আইন বাতিল করে তার বদলে ৪টি শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী শ্রম কোড চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আসলে জনা কয়েক শিল্পপতি আর কিছু বিদেশী বিনিয়োগকারীদের খেটে খাওয়া মানুষকে পিষে মারার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
শ্রম কোড বাতিল সহ মোট ১৭ দফা দাবিকে সামনে রেখে সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনের ডাক দেয় কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশন সমূহ। সিআইটিইউ’র সাধারণ সম্পাদক তপন সেন সহ এদিন উপস্থিত ছিলেন আইএনটিইউসি’র সহ সভাপতি অশোক সিং, এআইটিইউসি’র সাধারণ সম্পাদক অমরজিৎ কৌর, এইচএমএস’র সভাপতি হরভজন সিং, এইআইইউটিইউসি নেতা রাজিন্দর, টিইউসিসি নেতা ধর্মেন্দ্র, এআইসিসিটিইউ’র সাধারণ সম্পাদক রাজীব দিম্রি, ইউটিইউসি নেতা শত্রুজিৎ ও এসইডাব্লুএ’র নেতা লতা বেন। শ্রম কোডের পাশাপাশি, সোমবার ভারত ও আমেরিকার মধ্যে আসন্ন বাণিজ্য চুক্তি নিয়েও সতর্ক করেছেন তপন সেন। তিনি বলেন, ভারতের উপর চড়া হারে শুল্ক চাপিয়ে মার্কিন পণ্যের জন্য এদেশের বাজার খুলে দেওয়ার চাপ দিচ্ছে আমেরিকা। জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে আমেরিকার সামনে একের পর এক প্রশ্নে মাথা নত করেছে মোদী সরকার। বাণিজ্য চুক্তির ক্ষেত্রেও তা করা হলে দেশের শ্রমিক কৃষক বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবেন। এসবের কথা মাথায় রেখে, আগামী বুধবারের ধর্মঘট সর্বাত্মক ভাবে সফল করার ডাক দেন উপস্থিত নেতৃবৃন্দ।
এআইটিইউসি’র সাধারণ সম্পাদক অমরজিৎ কৌর জানান, ট্রেড ইউনিয়নগুলির তরফে বহুবার সরকারের সঙ্গে অর্থপূর্ণ আলোচনায় বসার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে সরকার কোন মতেই শ্রমিকদের কথা শুনবে না বলে ঠিক করেছে। তিনি বলেন, ‘‘গত বছর তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে কোন রকম আলোচনায় আমল দেওয়া হয়নি। গত ২০১৫ থেকে ভারতীয় শ্রম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। কিছু দিন আগে আলাপ আলোচনার জন্য কেন্দ্রের শ্রম মন্ত্রকের তরফে বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের একে একে তলব করা হয়। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এসবই লোক দেখানো। ঠিক সেই কারণেই শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে ধর্মঘটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’
ধর্মঘটের প্রস্তুতিও তুঙ্গে বলে জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ। ইতিমধ্যে কয়লা ও অন্যান্য খনিজ ক্ষেত্র, ইস্পাত, ব্যাঙ্ক, বিমা, বিদ্যুত, ডাক, পরিবহন, টেলিকম, সহ বিভিন্ন রাজ্য সরকারি পরিষেবা ক্ষেত্রের সমস্ত দপ্তরে ধর্মঘটের নোটিস জমা দেওয়া হয়েছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের কর্মচারীরা বুধবার কারখানা কিংবা অফিস গেটের সামনে এক ঘন্টার প্রতিবাদী জমায়েতের ডাক দিয়েছেন। রেল শ্রমিকরাও ধর্মঘট ও বিক্ষোভে অংশ নেবেন। এছাড়াও নির্মাণ শ্রমিক, বিড়ি শ্রমিক, অঙ্গনওয়াড়ি, আশা, মিড ডে মিল কর্মী থেকে গৃহ পরিচারক, হকার, রিকসা চালক, অটো চালক ও ট্যাক্সি চালকরাও ধর্মঘটে অংশ নেবেন।
শ্রমিক সংগঠনগুলির পাশাপাশি ধর্মঘটে অংশ নেবে বিভিন্ন ছাত্র, যুব ও মহিলা সংগঠন। শ্রমিকদের ধর্মঘটে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে সংযুক্ত কিষান মোর্চা ও খেতমজুরদের যৌথ মঞ্চ। দেশের বিভিন্ন জায়গা এদিন বিক্ষোভ মিছিল, অবরোধ ও প্রতিবাদী সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, বিভিন্ন রাজ্যে বনধের পরিস্থিতি তৈরি হবে। প্রায় ২৫ কোটি শ্রমিক কর্মচারী ধর্মঘটে অংশ নিতে চলেছেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। সোমবার সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, ধর্মঘটের প্রভাবে আগামী বুধবার গোটা দেশের ব্যাঙ্ক পরিষেবা, বিমা, ডাক থেকে শুরু করে কয়লা খনি, সড়ক পরিকাঠামো ও নির্মাণ ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। মোদী সরকারের লালিত পালিত কর্পোরেট প্রভুরা এতে মারাত্মক চাপে রয়েছেন।
সোমবার সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক এম এ বেবি বলেন, মোদী সরকারের নয়া উদারবাদী নীতির বিরুদ্ধে এবং শ্রম কোড বাস্তবায়িত হওয়া রুখে দিতেই ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। এই ধর্মঘট শুধু নিছক প্রতিবাদে থেমে থাকবে না। মোদীর সরকারের কর্পোরেট বান্ধব নীতির বিরুদ্ধে তীব্র এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বুধবার সিপিআই(এম)’র প্রত্যেক জন সদস্য ধর্মঘটকে সক্রিয় ভাবে সমর্থন করবে বলে জানিয়েছেন বেবি।
9 july general strike
কাল দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট, ৯ জুলাই কেবল শুরুয়াত,’ বললেন নেতৃবৃন্দ

×
Comments :0