Editorial

বন্ধুর গুঁতো

সম্পাদকীয় বিভাগ

 

যার সঙ্গে গলাগলি কোলাকুলির বিস্তর ছবি দেখেছে দুনিয়া, এমনি বন্ধুকে ভো‍‌টে জেতানোর জন্য খোদ আমেরিকায় গিয়ে প্রচারও করেছিলেন। এতকিছুর পরও ট্রাম্প রেয়াত করলেন না নরেন্দ্র মোদীকে। মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে ঘোষণাই করে দিলেন আগামী ২ এপ্রিল থেকে আমেরিকায় ভারত থেকে যাওয়া সব পণ্যের ওপর বিপ্রতীপ হারে শুল্ক চালু করা হবে। অর্থাৎ আমেরিকা থেকে ভারতের বাজারে আসা পণ্য যে হারে শুল্ক চাপায়, এখন থেকে আমেরিকাও সমস্ত ভারতীয় পণ্যে সমহারে শুল্ক চাপাবে। একেবারে দিনক্ষণ ধরে ট্রাম্পের এমন ঘোষণায় মহা সঙ্কটে পড়েছে ভারতের পণ্য উৎপাদকরা। ঘোষণা অনুযায়ী শুল্ক চাপলে এক ধাক্কায় মার্কিন বাজারে ভারতীয় পণ্যের মূল্য অনেকটা কমে যাবে এবং ভারতের রপ্তানি অনেকটা কমে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে দীর্ঘদিন চাহিদা থমকে আছে। এবার বিদেশের বাজারেও যদি চাহিদা কমে যায় তার ধাক্কা লাগবে ইতিমধ্যে ঝিমিয়ে পড়া ভারতের অর্থনীতি।

বাণিজ্য নিয়ে ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে হুঙ্কার দিয়ে যাচ্ছেন সেই নির্বাচনী প্রচারের সময় থেকেই। ভোটে জেতার পর এবং রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পরও একাধিকবার তাঁর মুখে হুঙ্কার পুনরুচ্চারিত হয়েছে। ইতিমধ্যে নিকটতম প্রতিবেশী মেক্সিকো ও কানাডা এবং চীনের বিরুদ্ধে সেই হুঙ্কার কার্যকরী করাও হয়েছে। মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আমেরিকায় যাওয়া সব পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানো হয়েছে। চীনের পণ্যের ওপর দু’দফায় ২০ শতাংশের বেশি শুল্ক চাপানো হয়েছে। এবার ভারত সহ অন্যান্য সব দেশের পণ্যের ওপর বিপ্রতীপ হারে শুল্ক বাড়ানোর কথা ঘোষণা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, একতরফাভাবে শুল্ক বৃদ্ধির এমন হুমকির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট প্রায় সব দেশই প্রতিক্রিয়া জানালেও এবং পালটা পদক্ষেপ নিলেও একমাত্র ভারত তথা নরেন্দ্র মোদী নীরব। মৌনব্রত অবলম্বন করে এখন পর্যন্ত একটি শব্দও খরচ করেননি। বরং নিরলস চেষ্টা চালিয়ে গেছেন আবেদন-নিবেদন তদ্বির করে যদি ট্রাম্পকে বিরত করা যায়। বিদেশমন্ত্রী একাধিকবার মার্কিন সফর করে নানা মহলে অনেক তদ্বির করেছেন। কয়েকদিন আগে লম্বা সফরে বাণিজ্য মন্ত্রী আমেরিকায় গেছেন। এমনকি গত  মাসে স্বয়ং মোদী আমেরিকায় গিয়ে ট্রাম্পের কাছে অনেক অনুনয়-বিনয় করেছেন। কিন্তু ট্রাম্প কোনও কিছুকেই পাত্তা দেননি। মোদীর মার্কিন সফরের ঠিক আগেও যথারীতি হুঙ্কার দিয়েছেন। এরই পাশাপা‍‌শি ট্রাম্পকে খুশি করার জন্য কয়েক দফায় মার্কিন পণ্য থেকে শুল্ক কমিয়েছেন বা প্রত্যাহার করেছেন। তাতেও কাজ হয়নি। ব্যক্তিগতভাবে শিল্পপতি ট্রাম্প বাণিজ্যের প্রশ্নে বন্ধুকেও ছাড় দেবেন না। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ ষোলো আনা হাসিল করেই তিনি বন্ধুত্ব নিয়ে ভাববেন। তিনি চান আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য করে একা ভারত ফায়দা লুটতে পারবে না। উভয় দেশই সমান সুযোগ পাবে। তাছাড়া ট্রাম্প চান ভারত মার্কিন পণ্য বেশি কিনুক। ভারতের বাজার মার্কিন পণ্যের জন্য উন্মুক্ত করে দিক। বন্ধুর গুঁতো এখন মোদীরা কীভাবে সামলায় সেটাই দেখার।

Comments :0

Login to leave a comment