জিয়াদ আলি
জর্জিয়া ছিল উনিশ শতকের জার সাম্রাজ্যের শোষণের পীঠস্থান। অজস্র গরিব মানুষের বাসভূমি। তবু জর্জিয়ার খ্যাতি ছড়িয়েছিল রাশিয়ার মতো বর্বর পিছিয়ে পড়া দেশের কিছুটা উগ্র স্বভাবের মানুষের কাছে। তার কারণ, বিস্তর দুঃখ ও যন্ত্রণার মধ্যেও জর্জিয়া কিছু ভালো কবির জন্ম দিয়েছিল। সেই কবিদের প্রথম সারিতে উঠে আসে স্তালিনের নাম। ‘ডেডা এনা’ নামের জর্জিয়ার কবিদের একখানা অ্যানথোলজি প্রকাশিত হয় ছোটদের জন্য ১৯১২ সালে। তার ষোড়শ সংস্করণেও স্থান পায় স্তালিনের কবিতা। ১৯৬০ সালেও অর্থাৎ স্তালিনের মৃত্যুর ৭ বছর পরেও সেই কাব্যগ্রন্থ পুনর্মুদ্রিত হয়। রুশ দেশের শাসনকর্তা ব্রেজনেভের আমল বাদ দিলে প্রায় প্রতি সংস্করণেই স্তালিনের ‘মরনিং’ নামের যুব বয়সে লেখা এই কবিতাখানা স্থান পায়। তবে ওই বয়সে স্তালিনের সব কবিতাই পত্রিকায় ছাপা হয় ‘সোসেনো’ নামে।
আসলে ছোট বয়সে মা তাকে ডাকতেন সোসো বলে। স্তালিন ওই নামেই স্কুলের বন্ধুদের কাছে আকর্ষণীয় চরিত্র হয়ে ওঠেন। স্কুলের কয়্যার সঙ্গীতে স্তালিনের মতো সুরেলা কণ্ঠস্বর আর কারও ছিল না। ওই বয়সে বেহালা ও ম্যাডোলিন বাজাতেন। পড়াশোনায় ছিলেন ক্লাসের সেরা ছাত্র। চেহারায় ছিল বুদ্ধির ছাপ ও ছিমছাম শৌর্যের দীপ্তি। রীতিমতো ব্যায়াম, বক্সিং ও খেলাধুলো করা বলশালী পেশি। এর মধ্যে মধুর রঙের মতো মাদকতায় ভরা রোমান্টিক চোখের দিকে তাকালে অনেকেই প্রথম দেখাতেই তার বন্ধু হয়ে উঠত। স্কুলের কয়্যার গানের শিক্ষক তার প্রতি হয়ে ওঠেন খুবই স্নেহময়।
তিনি নজর কেড়েছিলেন তাঁর রুশ সাহিত্যের শিক্ষকেরও। এই দুই শিক্ষকের চেষ্টায় সোসো জন্মস্থান গোরির চার্চ স্কুল থেকে তিফালিসের যাজক হওয়ার বিশাল সেমিনারি শিক্ষা কেন্দ্রে ভর্তি হতে সক্ষম হন। সোসোর মতো বস্তির ভাঙাচোরা ফুটো ছাউনির স্যাঁতসেঁতে ঘরে বাস করা তথাকথিত এক ‘মুচি’ বা গরিব চর্মকারের ছেলে হয়ে তিফলিস শহরের সেমিনারি শিক্ষা কেন্দ্রে ভর্তি হওয়াটা সহজ ছিল না। সেখানে প্রিস্ট পুত্রদের সংখ্যা ছিল বেশি। আবাসিক স্কুল। আর্থিক সক্ষমতারও প্রশ্ন ছিল। সেখানে ভর্তি হয়ে সোসো প্রথম বছরে সাড়ে তিন রুবল স্কলারশিপ পান। তার লেখাপড়ার গুণে দ্বিতীয় বছরে তা দ্বিগুণ হয়ে যায়। টানা ৬ বছর ধরে থিওলজির বিষয় পড়ার পরও তিনি কট্টর নিরীশ্বরবাদী হয়ে ওঠেন। তবে তার মুখে কখনও ‘গড’ বা ‘প্রভু’র মতো বহুল প্রচলিত শব্দও শোনা যেত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে (১৯৩৯-৪৫) আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট ও ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী চার্চিলের সঙ্গে আলোচনায় বসে বলে ওঠেন, জানি, চার্চিল বলশেভিকদের ভয় পান, তবু বলছি Authat is in the past, and the past belongs to God.।
সেই যুদ্ধকালীন ফ্যাসিবদী সঙ্কটের কথা মনে করে যুদ্ধ বিশারদ হিসাবে স্তালিনের বুদ্ধিমত্তার তারিফ করতেন। উইনস্টন চার্চিল আর রুজভেল্টও স্তালিনের প্রশংসা করতেন তাঁর কূটনৈতিক প্রজ্ঞার জন্যই। ১৯৪৫ সালের মে মাসে চার্চিল স্তালিনকে চিঠি দিয়ে জেরুজালেমের এক সভায় আসার জন্য অনুরোধ জানান। চার্চিল লেখেন জেরুজালেমে ‘ফাস্ট ক্লাস’ হোটেল আছে। সরকারি ভবন আছে। মার্শাল স্তালিন মস্কো থেকে স্পেশাল ট্রেনে আসতে পারেন নিশ্চিন্তে। তাঁর আসার জন্য ট্রেনে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তিনি নিজে নজর রাখবেন ওই দিন মস্কো, তিফলিস, আংকারা, বেরুট ও হাইফা হয়ে জেরুজালেম পর্যন্ত পুরো রেলপথ অন্য যাত্রীরা যাতে ব্যবহার করতে না পারে।
স্তালিনের পক্ষে জেরুজালেমে আসা সম্ভব হবে না জেনে চার্চিল ইয়ালটায় সভার আয়োজন করেন। সেই সভায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টের সঙ্গে স্তালিনের বিশেষ কথা হয় হিটলারের নাৎসি বাহিনী প্রায় ৬ মিলিয়ন জিউ সম্প্রদায়ের মানুষকে যে নৃশংসভাবে হত্যা করে তার জন্য নাৎসিদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নুরেমবার্গ ট্রায়ালের কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কথায় কথায় প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট বলেন, তিনি নিজেও জিউ সম্প্রদায়ের মানুষ। নানান দেশের মধ্যে এখনও ছড়িয়ে আছে আরও ১০ মিলিয়ন জিউ জনগণ। তাদের পুনর্বাসনের কথাও ভাবতে হবে।
রুজভেল্টের মুখে একথা শুনে স্তালিন জানান তিনিও নীতিগতভাবে জিউদের সমব্যথী। জিউদের জন্য তিনি তার নিজের দেশে চীন সীমান্তের গায়ে একটা বড় আবাসস্থল নির্মাণ করেছিলেন ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের কয়েক বছর পরে। জায়গাটার নাম বিরোবিডজান। তারপরে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার মতো ক্রিমিয়ার সুন্দর জায়গাতেও সোভিয়েত রাষ্ট্রের বিদেশমন্ত্রী মলোটভের চেষ্টায় আরও এক জিউ আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলা হয়। কিন্তু সেখানেও জিউদের মন টেকেনি। তারা ছড়িয়ে যায় ইউরোপ, আমেরিকা, ইজরাইল, প্যালেস্তাইনেও।
স্তালিন বলেন, বিপ্লবোত্তর সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্রে জিউদের জিদ্দিশ ভাষাকে রুশ ভাষার মতো সরকারি স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো ওই জিউরা খুবই সেমিট-বিরোধী। স্তালিন একথাও বলেন ওই জিউরা শুধু নিজেদের ফায়দা তোলা ফড়েদের মতো। পরগাছা গোছের।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তি ঘটে ১৯৪৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি প্যারিস চুক্তির পর। তখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান। তিনি ১৯৪৭ সালের ২১ জুলাই জিউদের নিয়ে একটু কঠোর মন্তব্যই করেছিলেন। তিনি বলেন The Jews, I find are very, very selfish. তবু রুজভেল্টের মতো জিউদের পুনর্বাসন সমস্যা তাকেও ভাবিয়েছিল। যেমন ভাবিত হন তাদের শাসনকালের অনেক বছর আগে রুশ বিপ্লবের কিংবদন্তিপ্রতিম মহান নেতা ভি আই লেনিনের প্রধানতম বিপ্লবী সহযোগী জর্জিয়ার তথাকথিত ‘মুচির ব্যাটা’ রোমান্টিক কবি জে ভি স্তালিন।
১৯২১ সালের এক লেখায় স্তালিন বলেন, শ্রমিক শ্রেণি তাকে জন্ম দিয়েছে। বস্তুত, বিপ্লবী হয়ে ওঠার আগেই স্তালিনের কবি-পরিচিতি ছড়িয়ে যায় জর্জিয়ায়। ছেলেবেলার স্কুল জীবনে দুটো বিষয় তাঁর চরিত্র নির্মাণের বিশেষ বৈশিষ্ট্যকে চিহ্নিত করে। প্রথমত নতুন বই হাতে পেলে গোগ্রাসে তা পড়ে ফেলা। তাই দেখে গোরির চার্চ স্কুলের বন্ধু লাডো এক বইয়ের দোকান থেকে একটা বই নিয়ে তার হাতে তুলে দেয়। এর জন্য লাডো দোকানদারকে দেয় ৫ কোপেক। সোসো সারারাত জেগে বইখানা পড়ে ফেলেন। বইয়ের নাম ‘দি স্পিশিজ অব ম্যান’। চার্লস ডারউইনের জীবের বিবর্তন নিয়ে লেখা। ১৮৫৯ সালে লন্ডনে ছাপা বই। লেখক একজন জীববিজ্ঞানী। লন্ডনেই থাকতেন। জাহাজে চেপে পৃথিবীর নানা দেশ ঘুরেছেন। জীবাশ্ম সংগ্রহ করেছেন। লন্ডনেই মারা যান ১৮৮২ সালে। অর্থাৎ কার্ল মার্কসের মৃত্যুর (১৮৮৩ সাল) আগের বছর।
কার্ল মার্কস জীবনের শেষ ৩৪ বছর কাটান লন্ডনে। তাঁর পৃথিবী বিখ্যাত গ্রন্থ দাস ক্যাপিটালের ইংরেজি সংস্করণ তিনি চার্লস ডাইউইনকে উৎসর্গ করতে চেয়েছিলেন। ডারউইন রাজি হননি। ডারউইনের দি অরিজিন অব স্পিশিজ পড়ে মাত্র ১৩ বছর বয়সে স্তালিনের মধ্যে বিজ্ঞান চেতনা জন্মায়।
স্তালিনের সে বয়সেই গোরি শহরের জিভারি পাহাড় ও নদীর ধারে ঘুরে বেড়াতেন। ককেশাসের পাহাড়ে জমা শক্ত বরফের দৃশ্যতে আকর্ষিত হতেন। এমনিতেই জর্জিয়ার মানুষেরা ভাবপ্রবণ। ফুরা নদী, পাহাড়, ফুল ও বরফের শুভ্র-সাদা লাবণ্য ছেলেবেলার সোসোকে রোমান্টিক ও প্রেমময় করে তোলে। সোসোর গডফাদারের এক কিশোরী কন্যা ছিল সোসোর ছেলেবেলার খেলার ও গান শেখার সঙ্গী। সোসো মৃত্যুর (১৯৫৩ সালের ৫ মার্চ) কয়েক বছর আগে তার গোরেলি (যারা গোরি শহরবাসী) বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানান কৃষ্ণ সমুদ্রের (ব্ল্যাক সী) তীরে এক বাড়িতে। আর কিছুই নয়। পুরানো বন্ধুদের সঙ্গে সমুদ্রের তীরে বসে প্রাণ খুলে গল্প ও তামাশায় মেতে ওঠা। সেই বন্ধুদের কাছে স্তালিন নিজের ছেলেবেলার খেলার সঙ্গী সেই গডফাদার কন্যার স্মৃতিচারণ করেন ঘরছাড়া উদাসী বাউলের হাহুতাশ নিয়ে। গোরি শহরের যে মেনশেভিক বন্ধু এক সময় স্তালিনকে হত্যার ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিলেন কৃষ্ণ সমুদ্রের তীরে আয়োজিত সেই আড্ডায় তাকেও আমন্ত্রণ জানান তথাকথিত ‘গ্রেট টেরর’ স্রষ্টা জে ভি স্তালিন।
স্তালিনের এই রোমান্টিক ভাবপ্রবণতাই কচি যৌবনে তাকে টেনে আনে কবিতার সংসারে। তখন বয়স ১৬ বা ১৭ বছর। তখন দেশের সব চাইতে বড় কবি প্রিন্স ইলিয়া সাভেহাভাৎন। তিনি হলেন রোমান্টিক ন্যাশনালিস্ট। বিশ্বাস করতেন। আলোকপ্রান্ত আধুনিক অভিজাতদের নেতৃত্ব একদিন দারিদ্রপীড়িত জর্জিয়াকে একটা উন্নত কৃষিপ্রধান দেশ হিসাবে গড়ে তুলবে। স্তালিন তাঁর কবিতা পড়ে বিমোহিত হন।
স্তালিন তিফলিসের সেমিনারি স্কুলে পড়ার সময়ে বেশ কিছু উদ্দীপক কবিতা রচনা করেন। তার মধ্যে ৫ খানা কবিতা প্রিন্স ইলিয়া সাভেহাভাৎন সম্পাদিত বিখ্যাত পত্রিকা ইভেরিয়া-তে প্রকাশিত হয়। সম্পাদক নিজে স্তালিনের কবিতাগুলো সম্পর্কে যথেষ্ট উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তিনি স্তালিন সম্পর্কে বলতেন ‘Young man with burning eyes’।
সোসোর কবিতায় প্রকৃতির সঙ্গে মানব হৃদয়ের অন্তর্লীন অনুভূতির ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বিম্বিত হয় ভাব ভাষা ছন্দ চিত্রকল্প উপমা ইত্যাদি অলংকারের সাজসজ্জায়। তবেই কবিতার শিল্প সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়। কবিতা হয়ে ওঠে লাবণ্যময়। স্তালিনের কবিতায় পাওয়া যায় পারস্য, বাইজানটিয়ান ও জর্জিয়ার চিত্রকল্প। নেক্রামভ ও পুশকিনের কবিতার সঙ্গে স্তালিনের গভীর সম্পর্ক ছিল। ছাত্রজীবনে তিনি গ্যায়টে ও শেকসপীয়রের রচনা পাঠ করেন। গোর্কি তাঁর প্রিয় লেখক ও কমরেড। লন্ডনে ২৭ এপ্রিল থেকে ১০ মে, ১৯০৭ সালে যে গোপন বলশেভিক পার্টির সম্মেলন হয় সেখানে স্তালিন ও গোর্কি উপস্থিত ছিলেন। ওয়ালট হুইটম্যানের কবিতা স্তালিন আবৃত্তি করতেন খুবই চমৎকার কণ্ঠে।
ছাত্রজীবনে পড়ে ফেলেছিলেন ফরাসি লেখক এমিল জোলার জার্মিনাল। ভিক্টোর হুগোর লেখা পড়তেন গোপনে। রাত জেগে অনেক নিষিদ্ধ রাজনৈতিক বই পড়তেন বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ তার পিছনে চর নিযুক্ত করে। দণ্ড হিসাবে তার কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়।
পরবর্তীকালের বলশেভিক কর্মী হিসাবে সাইবেরিয়ার নির্বাসনসহ নানান জেলে কারাদণ্ড ভোগ করেছেন অনেকবার। মার্কসবাদ নিয়ে কারাগারে বলশেভিক কর্মীদের ক্লাস করাতেন। এত ভালো বলতেন যে কারাগারের রক্ষীরা তার আলোচনা শুনতেন। তিফলিসের সেমিনারি স্কুলে ধর্মতত্ত্ব পড়তে এসে স্তালিন পড়ে যান কবিতার প্রেমে। এখানেই তিনি জানতে পারেন আগের এক রেক্টর জর্জিয়ার ভাষাকে সারমেয় বা কুকুরের ভাষা বলে মন্তব্য করায় খুন হয়ে যান অচেনা এক ছাত্রের হাতে। বেশ কিছু ছাত্র বিশপ হওয়ার ট্রেনিং নিতে এসে বিপ্লবী হয়ে ওঠায় প্রাণিত হন। পরবর্তী সময়ে তিফলিস হয়ে ওঠে স্তালিনের বিপ্লবী কেন্দ্র। বলশেভিক পার্টির শক্ত ঘাঁটি।
তিফলিসে ও বাকুতে স্তালিন শ্রমিক আন্দোলন সংগঠিত করেছেন। বিশেষ করে বাকুর তেল কারখানার শ্রমিকরা তাকে রাজনৈতিক বিপ্লবে উদ্দীপ্ত করে। এখানকার এক তেল কোম্পানিতে স্তালিন কিছুদিন চাকরিও করেন। আলফ্রেড নোবেল নামের এক তেল ব্যবসায়ীর অর্থে সুইডেনের নোবেল পুরস্কার চালু হয়। শ্রমজীবী শ্রেণিই যে নতুন শোষণহীন সমাজ গড়ে তুলবে এই বিশ্বাসে স্তালিন সুদৃঢ় হয়ে ওঠেন ১৯০৩ সালের গোড়া থেকেই। তখনই দুটো গ্রুপ তৈরি হয় বলশেভিক ও মেনশেভিক হিসাবে।
কেউ কেউ স্তালিনকে মনে করতেন Devout Marxist of Semi Islamic fervour কেউ বলেন তিনি ‘ফ্যানাটিক মার্কসিস্ট’। আসলে সশস্ত্র বিপ্লব ছাড়া যে সর্বহারা শ্রেণির ক্ষমতা অর্জন সম্ভব হবে না জার শাসিত রুশ সাম্রাজ্যে, এই সত্যটা বিশ শতকের গোড়া থেকেই তিনি আঁকড়ে ছিলেন। ১৬ বছর বয়সে প্রিয় নেতা লেনিনের ‘কী করিতে হইবে’ বইখানা পড়ে স্তালিনের অনুভব ধারালো হতে থাকে।
১৯১৭ সালের ২৬ অক্টোবর রুশ বিপ্লব সম্পন্ন হয়। আগের দিন মেনশেভিক গ্রুপের কাসেনেভ-জিনোনিয়েভরা এই তারিখটাকে আরও পিছিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তখনও স্তালিন দৃঢ়ভাবে কমরেড লেনিনের পাশে ছিলেন। বলেছিলেন আরও দেরি হলে প্রতিবিপ্লবীরাই লাভবান হবে।
বড বিচিত্র বর্ণের মানুষ ছিলেন স্তালিন। রুশ বিপ্লবের আগে শেষবার জার সম্রাটের নির্দেশে তিনি সাইবেরিয়ায় নির্বাসিত হন। এশিয়াটিক সাইবেরিয়ার মাইনাস ডিগ্রিতে অবস্থান করা শীতকে মোকাবিলা করার মতো জামা প্যান্ট ছিল না তার। ট্রেনে চড়ার সময় তার এক প্রিয় মহিলা কমরেড তার হাতে তুলে দিলেন কিছু গরমের পোশাক। আবার অক্টোবর বিপ্লবের আগে তার মস্কো ফেরা চাই। আসার সময় সাইবেরিয়ার এক অনুরাগী মহিলাকে তিনি একটা বই উপহার দিলেন — দি লিটারারি হিস্টরি অব ওয়েস্ট।
স্তালিনের কবিতা
প্রভাত
গোলাপ কুঁড়িরা কেঁপে কঁপে ওঠে সূর্যের চুম্বনে
রাঙা আলো মেখে ঝলমল করে প্রকৃতি
লিলি ফুলগুলো জেগে ওঠে ঘুম ভেঙে
মধুর বাতাসে শ্রদ্ধায় হয় আনত
উঁচু আকাশের মেঘ ছুঁয়ে ওড়ে লার্ক
গান গেয়ে গেয়ে মেঘের মতোই ভেসে যায়
আনন্দে ভরা নাইটিঙ্গেল সুমিষ্ট সুরে বলে
আহা প্রেমময় ভূমি হোক উর্বরা।
আমাদের প্রিয় ইভেরিয়া দেশবাসী
জর্জিয়া ভরা প্রেমময় যত বন্ধু
আনন্দ ধ্বনি জাগুক সকল প্রাণে
নন্দিত হোক স্বদেশের ধূলিকণা।
অনুবাদ : জিয়াদ আলী
Comments :0