সোমনাথ দত্ত: মালবাজার
শীতের আমেজ পড়তেই খাবারের লোভে লোকালয়ে হানা দিতে শুরু করেছে বুনো হাতির দল। বন দপ্তরের ছররাতে আহত একাধিক গ্রামবাসী। মালবাজার ব্লকের কুমলাই গ্রাম পঞ্চায়েতের নেপুচাপুর বস্তি এলাকায় বুনো হাতির একটি দল লোকালয়ে হানা দিল। শুক্রবার ভোর থেকে বুনো হাতির দলটি ওই এলাকায় অবস্থিত একটি প্রজেক্ট চা বাগানে আটকে পড়ে। বুনো হাতির দল লোকালয়ে হানা দেবার খবর চাউর হতেই ভিড় জমান স্থানীয়রা। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে মালবাজার বন্যপ্রাণ বিভাগের কর্মীরা। বুনো হাতির দলটিকে জঙ্গলে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে বন কর্মীরা। সাধারণ মানুষজন বুনো হাতির দলটিকে যাতে উত্তক্ত না করে সেদিকেও নজর রেখেছে বনকর্মীরা। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার রাতে মালবাজার ব্লকের পশ্চিম ডামডিম এলাকায় হাতি দেখতে গিয়ে বন দপ্তরের ছররা গুলিতে আহত হলেন প্রায় আট থেকে নয়জন গ্রামবাসী। আহতদের উদ্ধার করে ওদলাবাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর সকলকেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এই ঘটনার পর বন দপ্তরের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে স্থানীয়রা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ধান পাকার মরশুমে প্রতিবছর ওই এলাকায় বুনো হাতির হানা লেগেই থাকে। মূলত খাবারের লোভেই লোকালয়ে বেরিয়ে আসে বুনো হাতির দল বলেই মত স্থানীয়দের। শুক্রবার ভোরে বুনো হাতের দল নেপুচাপুর বস্তি এলাকায় হানা দিলে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায় স্থানীয়দের মধ্যে।
বন দপ্তরের ছররাতে আহত সঞ্জয় রায় ও নোকুল গোপ অভিযোগ করে বলেন, “আমরা শুধু হাতিটিকে দেখতে গিয়েছিলাম। হঠাৎ কোনো কিছু না জানিয়ে বনকর্মীরা আমাদের দিকে ছররা গুলি চালায়। এতে আমাদের কয়েকজন আহত হয়। কারো হাতে, পায়ে, কপালে, পেটে লাগে। এলাকার বাসিন্দা সুরেশ কেরকাট্টা জানিয়েছেন, তাঁরা বন দপ্তরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করবেন।
অন্যদিকে, বন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই একটি বুনো হাতি পশ্চিম ডামডিম এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল। বনকর্মীরা হাতিটির গতিবিধির ওপর নজর রাখছিলেন। তাদের দাবি, বারবার গ্রামবাসীদের দূরে সরে যেতে বলা হলেও অনেকেই কথা শোনেননি। সন্ধ্যার সময় হাতিটি যখন স্থানীয়দের দিকে তেড়ে আসে, তখন চেল নদীর নিচ থেকে বাধের দিকে আকাশে ছররা গুলি ছোঁড়া হয়। সেই গুলির কিছু অংশে গ্রামবাসীদের শরীরে লাগে।
তারঘেরা রেঞ্জার স্বপন কুমার রায় ফোনে জানিয়েছেন,"তিনটি গাড়িতে ১৫ জন কর্মী নিয়ে ওই এলাকায় উপস্থিত ছিলাম। বহুবার অনুরোধ করেছি যাতে কেউ হাতির কাছে না যায়। কিন্তু কেউ শুনছিল না। হাতিটি তেড়ে আসলে শুন্যে গুলি ছোড়া হয়। দুর্ভাগ্যবশত কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
ঘটনার খবর পেয়ে মালবাজার থানার আইসি সৌম্যজিৎ মল্লিকের নেতৃত্বে বিরাট পুলিশ বাহিনী নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছান। তিনি আহতদের খোঁজখবর নেন ও পরবর্তীতে তাঁদের গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দেন। এই ঘটনার পর থেকে পশ্চিম ডামডিম এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
Comments :0