মিথ্যাচার করলে প্রশ্ন তো উঠবেই। তা বিদেশেই হোক অথবা দেশের মাটিতে, মুখ্যমন্ত্রী পার পাবেন কি করে? মানুষ জবাবতো চাইবেনই। এমনই জবাব চাইবার সাক্ষী হয়ে রইলো খোদ লন্ডনও, মমতা ব্যানার্জির বিদেশ সফরের এক অনুষ্ঠানে। প্রশ্ন লন্ডনে বসবাসকারী অনাবাসী ভারতীয়, পড়তে যাওয়া ছাত্র-ছাত্রী, সেখানকার এসএফআই সমর্থক-কর্মীদের। লন্ডনের কেলক কলেজের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বক্তৃতা চলাকালীন প্রশ্ন উঠলো আরজি করের পড়ুয়া চিকিৎসক অভয়ার খুন ধর্ষণের বিচারের প্রসঙ্গে। প্রশ্ন উঠলো পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে অসত্য তথ্য তুলে ধরার জন্য। আর মুখ্যমন্ত্রী নিজেকে আড়াল করলেন যথারীতি তাঁর স্বভাবভঙ্গিতে পালটা আক্রমণ করে। তাতে কি আর সত্য চাপা পড়ে?
প্রশ্নের মুখোমুখি মুখ্যমন্ত্রীকে হতেই হবে, যতদিন পর্যন্ত না পশ্চিমবঙ্গে অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা পাচ্ছে, তা সে ছাত্র-ছাত্রীদেরই হোক কিংবা সাধারণ মানুষের, এরাজ্যের নাগরিকদের। এরাজ্যের অবস্থা ভয়াবহ। কলেজে কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নেই। ড্রপ আউট বাড়ছে, বাল্য বিবাহ বাড়ছে, রাজ্যে শিশু শ্রমিক বাড়ছে। শিল্পের দেখা নেই, কর্মসংস্থান নেই, পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। গ্রামে কাজ নেই, শহরে কাজ নেই। আর মুখ্যমন্ত্রী বিদেশে গিয়ে ভুয়ো তথ্য দিচ্ছেন। কেলক কলেজে যখন ভাষণ দিচ্ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, সেই সময় শান্তভাবেই তার ভাষণের কিছু অংশের প্রতিবাদ জানায় এসএফআই ইউকে শাখার কর্মীরা। মুখ্যমন্ত্রী উত্তেজিত হয়ে পালটা বলতে থাকেন, বামফ্রন্ট সরকারের সময় তাঁকে অত্যাচারের শিকার হতে হয়েছে। পালটা প্রশ্ন ওঠে অভয়ার বিচার কবে হবে? কেন তার সরকার দোষীদের আড়াল করছে? উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রীর সাথে থাকা বেশ কিছু তৃণমূল নেতা যারা নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে লন্ডন সফরে গিয়েছেন তারা তেড়ে আসেন। কলেজে অধ্যাপক, নিরাপত্তা কর্মীরা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন।
আসলে নিজেকে বড় প্রমাণ করতে গিয়ে রাজ্যকেই ছোট করছেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। প্রতি ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই যদি মিথ্যাচারের আশ্রয় নেন তার পরিণতিতে বিক্ষোভ তো হবেই। মুখ্যমন্ত্রীর এই লন্ডন সফর ঘিরেও রয়েছে মিথ্যাচার। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ দেওয়ার জন্য কোনও আমন্ত্রণই আসেনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি লন্ডনে গেছেন কেলক কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং কোবরা বিয়ার কোম্পানির মালিক গুজরাটি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ শিল্পপতি করণ বিলিমোরিয়ার আমন্ত্রণে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী, গবেষক এবং বিশিষ্টদের সামনে মুখ্যমন্ত্রী ভাষণ দেবেন বলে প্রচার করা হয় সোশাল মিডিয়ায় এবং তৃণমূলের পক্ষ থেকে। সরকারি সূত্র উল্লেখ করে বড় বড় বাণিজ্যিক প্রচার মাধ্যমেও একই প্রচার চলে। মমতা ব্যানার্জি বাংলার সাফল্যকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ডে তুলে ধরবেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু খোঁজ খবর করার পর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সফর সম্পর্কে অবহিতই নয়। শিল্পায়নের ধুয়ো তুলে এর আগেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ব্রিটেন এবং স্পেন সফরে গিয়েছেন। আগেও একবার রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীকে অক্সফোর্ড থেকে আমন্ত্রণ পাঠিয়েছে ভাষণ দেওয়ার জন্য। কিন্তু পরে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রীর সেই বিদেশে সরকারি সফরের অনুমতি মেলেনি।
ইস্ট জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়ো পিএইচডি থেকে শুরু করে প্রভাব খাটিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি-লিট এবং এখন মদ কোম্পানির মালিকের ডাকে লন্ডনে গিয়ে অক্সফোর্ডের নামে মিথ্যা প্রচার, এসবই আসলে প্রতারণার রাজনীতি। অথচ সবদিক থেকেই রাজ্যের বেহাল দশা। সেগুলির সমাধান না করে মুখ্যমন্ত্রী যখন লন্ডনে মিথ্যাচার করেন তখন প্রতিবাদ ওঠাই তো স্বাভাবিক।
If you lie, questions will arise
মিথ্যাচার করলে প্রশ্ন তো উঠবেই

×
Comments :0