সঞ্জীব কর্মকার
(প্রয়াগরাজে কুম্ভমেলায় দর্শনার্থী)
বারাসতের দত্তপুকুর থেকে গিয়েছিলাম প্রয়াগরাজ, মানে এলাহাবাদে। কুম্ভস্নানের জন্য পৌঁছেছিলাম ২৮ ডিসেম্বর। তবে আজ ভোররাতে যে দৃশ্য দেখতে হলো, এককথায় ভয়াবহ।
মাঝরাতেই ভিড় দেখছিলাম। ‘মৌনি অমাবস্যার’ স্নানের জন্য এদিন প্রচারও ছিল। ভোররাতে আমরা উঠেছিলাম একটি আখাড়ার তাবুতে। রাত ২টোর সময় স্নানের জন্য যাই। ফেরার সময় বুঝতে পারি ভিড় মারাত্মক বেড়ে গিয়েছে।
স্নানের জন্য যে রাস্তা পেরতে পনেরো মিনিট সময় লাগল ফেরার সময় দেখি সে রাস্তাই পার করতে পারছি না দু’ঘন্টাতেও।
হঠাতই দেখলাম ভিড় প্রচণ্ড বেড়ে গিয়েছে। আসা-যাওয়ার রাস্তা একদম সরু। তার মধ্যে দু’দিক দিয়ে লোক আসছিল কাতারে কাতারে। ছুটোছুটি শুরু হয়েছে।
আমরা কোনও রকমে জায়গা করে বের হচ্ছি। ঠেলাঠেলির মধ্যে দেখতে পেলাম রাস্তায় পড়ে রয়েছে এক শিশু। পাশে তিন মহিলা। তাদের ঘিরে কাঁদছেন পরিজনেরা।
একেবারে অচেনা। তবু এমন দৃশ্য দেখে নিজেদেরই চোখে জল চলে এল। ভিড়-ঠেলাঠেলির মধ্যে জায়গাটা পার করলাম। বারবার মনে হচ্ছিল কেন এমন হলো?
দেখলাম আমাদের মতো লোকজনের জন্য খোলা রয়েছে কেবল একটিই সরু রাস্তা। অস্থায়ী ব্রিজের রাস্তায় আমাদের ঢোকা বন্ধ। এর মধ্যে সেই সরু রাস্তাতেই দাঁড়িয়ে পড়ছে এখানকার বিভিন্ন আখাড়ার গাড়ি। এর মধ্যে দিয়ে চলাই দুষ্কর। তারপর রয়েছে ঠিক সময়ে স্নানের তাড়া। এক-দু’জন নয়, জনস্রোত ছুটছে স্নান করতে।
বারবারই দেখছিলাম রাস্তায় অনেক দূর থেকে মাথায় মালপত্র নিয়ে এসে চলতে না পেরে বসে পড়ছেন অনেকে। ফেরার সময় তাঁদের তাড়া লাগালাম। বললাম, বসে থাকলে বেশি বিপদ হয়ে যাবে। শুনলেন কারা জানি না, আমরা স্রোতের মধ্যে চললাম।
এখানে গাড়িও আটকে দেওয়া হচ্ছে। অযোধ্যা বা লক্ষ্ণৌ যাওয়ার বাস সরাসরি পাওয়া যাচ্ছে না। এ আরেক অব্যবস্থা। ঠিক করেছিলাম বারাণসী ফিরব। কোনও গাড়িই পাচ্ছিলাম না। ভেঙে ভেঙে এ গাড়ি-ও গাড়ি ধরে মাঝরাস্তায় আসতে পেরেছি।
কিন্তু যারা আর ফিরতেই পারলেন না বা গুরুতর আঘাত পেলেন, তাঁদের জন্য কষ্ট হচ্ছে খুব। চোখে পড়েছে হাসপাতালের সামনে বহু লোকের ভিড়। সন্ধ্যায় খবরে জেনেছি সরকার ৩৯ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে। কিন্তু বহু লোককে দেখেছি ছুটোছুটি করতে। মৃতের সংখ্যা এর চেয়ে যথেষ্ট বেশি হতে পারে।
Comments :0