আগামী ১৪ মার্চ দোল উৎসব। তার দু’দিন আগে ১২ মার্চ কলকাতা কর্পোরেশনকে দোল নিয়ে কীভাবে উৎসব করতে হবে তার বিস্তারিত বর্ননা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। নয় দিন পরে ডান্ডিয়া নাচের আয়োজন করতে বলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াকে পিষে মারার ঘটনা নিয়ে একটি কথাও বললেন না।
কালীঘাট মন্দিরে স্কাইওয়াক থেকে দীঘার জগন্নাথ মন্দির স্থাপনা থেকে যজ্ঞ নিয়ে শিল্পের বৈঠকে দিনক্ষণ জানালেন। কিন্তু এরাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ ভোটের দাবি তোলার প্রতিবাদীদের ওপর নির্মম আক্রমণের ঘটনা নিয়ে নীরব থাকলেন মুখ্যমন্ত্রী। বরং সরকারি উদ্যোগে দোল উৎসবে ইন্দ্রনীল সেন, বাবুল সুপ্রিয় কী গান গাইবেন তাও জানিয়ে দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে এবারই সরকারি কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা হলো দোল-হোলি উৎসব পালন। সোমবার নবান্নে রাজ্যে শিল্পায়নের কাজে গতি আনতে গড়া রাজ্যস্তরের সমন্বয় কমিটির বৈঠক ছিল। ওই বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রী কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়রকে দোল- হোলি উৎসব পালন করার জন্য নির্দেশ দেন। আগামী ১২ মার্চ কলকাতার ধনধান্য স্টেডিয়ামে এই উৎসব আয়োজনে মুখ্যমন্ত্রী নিজে থাকবেন বলে ঘোষণাও করেন। বিকাল ৫টায় ধনধান্য স্টেডিয়ামে এই প্রথমবার সরকারি খরচে আয়োজিত হতে চলেছে দোল-হোলি উৎসব।
শিল্প সমন্বয় কমিটির বৈঠকে কর্পোরেশনের মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন,‘‘ কলকাতা কর্পোরেশনকে বলব, দোল আর হোলি মিলিয়ে একসাথে উৎসব করে দিতে। ১২ মার্চ ধনধান্য স্টেডিয়ামে বিকাল ৫টায় অনুষ্ঠান হবে। আমি(মুখ্যমন্ত্রী) থাকব।’’ কলকাতা কর্পোরেশনের পাশাপাশি এদিন বৈঠক থেকে রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের প্রধান সচিব শান্তনু বসুকেও মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। জেলাস্তরে গুজরাটি, মারোয়াড়ি, উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশানকেও ১২ মার্চ ধনধান্য স্টেডিয়ামে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন,‘‘ ১২ মার্চ প্রথমে দোলযাত্রার উৎসব হবে। সেখানে বাবুল সুপ্রিয় ও ইন্দ্রনীল সেনরা গান গাইবে। পাঁচ মিনিটের এই অনুষ্ঠানের পরই হবে হোলি উৎসব। ডান্ডিয়া নাচ হবে। গুজরাটি, মারোয়ারি, বিহারি সহ সমস্ত কমিউনিটিকে ডেকে নিতে হবে।’’ কলকাতা কর্পোরেশন বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশনকে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দেবে। একইভাবে জেলাস্তরের অ্যসোসিয়েশনকে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ১২ মার্চ বিকাল ৪টার মধ্যে ধনধান্য স্টেডিয়ামে প্রবেশ করানোর জন্য বৈঠক থেকে জানিয়ে দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি।
দু’দিন আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পড়ুয়া ছাত্র রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রীর বেপরোয়া গাড়ির সামনে পড়ে গুরুতর জখম হয়ে এখন হাসপাতালে ভর্তি। আরও বেশ কয়েকজন ছাত্র গুরুতর জখম। রাজ্যের অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয়ে এহেন ন্যাক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে এদিন বিশ্ববিদ্যালয় ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল এসএফআই। ক্যাম্পাসের ভিতরে শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর গাড়ির ধাক্কায় প্রাণঘাতী হামলার প্রতিবাদে এদিন রাজ্যজুড়ে পথে নামে নাগরিক সমাজও।
ঘটনার পর থেকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া আসেনি। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই শিল্প নিয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি গড়া ১৯টি দপ্তরকে নিয়ে গড়া সমন্বয় কমিটির প্রথম বৈঠক ছিল। বিকাল সাড়ে পাঁচটার এই বৈঠক সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি সম্প্রচারেরও ব্যবস্থা ছিল। বাণিজ্য সম্মেলনের পর রাজ্যে শিল্পায়নের গতি আনতে গড়া এই কমিটির বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী শিল্পের বাইরে একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। কিন্তু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশবিক ঘটনা নিয়ে টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করেননি। বরং হোলির উৎসবে ডান্ডিয়া নাচের আয়োজনে ব্যস্ত থেকেছেন।
বৈঠকে রাজ্যের ১৯টি দপ্তরের প্রধান সচিব, রাজ্য পুলিশের শীর্ষকর্তাদের কাছে আগামী অন্নপূর্ণা পুজো, রামনবমীর উৎসব তো বলেইছেন। সেইসঙ্গে দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনকে বিশেষ এক উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার স্পষ্ট করেছেন। ‘‘ ২৯ এপ্রিল জগন্নাথ মন্দিরের যজ্ঞ হবে ও মন্দির স্থাপনার জন্য পুজো পাঠ হবে। ৩০ এপ্রিল জগন্নাথ ধামের উদ্বোধন। আমি কোনও হাইপ তুলতে চাইছি না। তবে ভিড় এড়াতে সবাই ২৮ এপ্রিল চলে আসুন। কারণ মন্দিরের ৩ থেকে ৪ কিমির মধ্যে কোনও গাড়ি ওইসময় যাতায়াত করবে না। সবাইকে দীঘা প্রবেশের গেটের কাছ থেকে হেঁটে আসতে হবে।’’ বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
আগামী ১৪ এপ্রিল উদ্বোধন হবে কালীঘাট মন্দির ও স্কাইওয়াকের। ২৯ থেকে ৩০ এপ্রিল দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনের আগাম ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যেই জায়গা করে নিয়েছে দোল- হোলি উৎসব। স্থান পায়নি শুধু ছাত্রদের পিষে মারার ঘটনা থেকে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি।
Mamata Banerjee
গাড়ির তলায় পড়ুয়া পিষে দেওয়া নিয়ে নীরব মমতার ডান্ডিয়া নাচের দিন ঘোষণা

×
Comments :0