উদ্বিগ্ন অসহায় রাজ্যবাসীকে এখনই বামপন্থার প্রয়োজনীয়তা স্মরণ করিয়ে দিতে হবে। শুক্রবার সিপিআই(এম)’র উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নেতৃস্থানীয় কর্মীদের একটি সভায় একথা বলেছেন পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এদিন বারাসতে শান্তিময় ঘোষ স্মৃতি ভবনে এই সভায় তিনি বলেন, রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন যে ক্রমাগত ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়া, লুট দুর্নীতি আর সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে নিরাপত্তা ও অধিকারগুলি হারাতে থাকা রাজ্যবাসী এসআইআর নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। এই অবস্থায় মানুষের পাশে দাঁড়াতেই আমরা কোচবিহার থেকে কামারহাটি ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’ করতে চলেছি। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারলেই বামপন্থীদের সমস্ত জনবিচ্ছিন্নতা কেটে যাবে, রাজ্যে বামপন্থার পুনর্জাগরণ ঘটানো যাবে।
রাজ্যের মানুষের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে, তাঁদের আতঙ্কিত করতে যারা এসআইআর’র নামে মানুষের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে সেলিম বলেছেন, মানুষকে বুঝিয়ে ভয়মুক্ত করে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরে জনজীবনের প্রকৃত দাবিগুলি নিয়ে লড়াইয়ের ময়দানে মানুষকে টেনে আনতে হবে। তৃণমূল বিজেপি নকল যুদ্ধের অভিনয় করে নজর ঘোরাতে চাইছে, আমাদের কর্মীদের গরিব কৃষক, খেতমজুর, শ্রমিকদের মহল্লায় গিয়ে তাঁদের জীবনের সমস্যাগুলির দিকে নজর টেনে আনতে হবে। তাঁদের অভাব অভিযোগ, সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে হবে, মহল্লায় মহল্লায় পোস্টার লাগাতে হবে। এভাবেই রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণ প্রান্তের মানুষের অধিকার রক্ষার দাবিতে ‘বাংলা বাঁচাও পদযাত্রা ’ শুরু হবে ২৯ নভেম্বর থেকে। অতীতে অনেক রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বামপন্থীরাই বাংলাকে তিল তিল করে গড়ে তুলেছিল। এখন ধ্বংসের কিনারায় থাকা বাংলাকে বাঁচাতেই এই যাত্রায় মানুষকে শামিল করাতে হবে। মানুষের স্মৃতিতে বামপন্থার গুরুত্ব ফিরিয়ে এনে রাজ্যে বামপন্থার পুনর্জাগরণ ঘটাতে হবে।
সেলিম বলেন, তৃণমূল বিজেপি এসআইআর নিয়ে মানুষকে আতঙ্কিত করছে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে। সিপিআই(এম) কর্মীরা এসআইআর আতঙ্ক থেকে মানুষকে বাঁচাতে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরছেন, শিবির করছেন, মানুষকে ভরসা দিচ্ছেন। মানুষের উদ্বেগ দূর করতে আমরা বলেছি, ভুয়ো, মৃত এবং যে সকল মানুষ স্থানান্তরিত হয়েছেন কিংবা যাদের ভোটার তালিকায় একাধিক জায়গায় নাম আছে তাদের নাম বাদ দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। কিন্তু কোনও প্রকৃত ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া চলবে না। বামপন্থীদের এই ভূমিকা মানুষ দেখতে পেলে মানুষের ভরসাস্থল হয়ে উঠবে বামপন্থীরাই, জনবিচ্ছিন্নতা শ্রেণি বিছিন্নতাকে কাটিয়ে দুর্বল, অবহেলিত, বঞ্চিত, তফসিলি জাতি, আদিবাসী, সংখ্যালঘু, প্রান্তিক মানুষের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
এদিনের সভায় পার্টির উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির সম্পাদক পলাশ দাশ বলেন, অতীতে পার্টির নিবিড় উপস্থিতি ছিল গ্রাম ও শহরের বুথে বুথে। তৃণমূলের লুট সন্ত্রাসে, বিজেপি’র সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে এই শিকড় দুর্বল হয়েছিল। এখন এসআইআর থেকে মানুষকে ভয়মুক্ত করতে বাড়ি বাড়ি যেতে হবে, পাড়ায় পাড়ায় শিবির করতে হবে, এটাই এবারের নভেম্বর দিবসে এখনই করণীয় হিসাবে আমাদের শপথ হোক।
এদিনের সভার সভাপতি ছিলেন পার্টিনেতা মানস মুখার্জি। সভায় জেলার মধ্যে ২০২৪ সালে গণশক্তি বিক্রয়ে প্রথম স্থানাধিকারী নৈহাটি এরিয়া কমিটি, দ্বিতীয় স্থানাধিকারী বিধাননগর ১ এরিয়া কমিটি, তৃতীয় স্থানাধিকারী বিধাননগর ২ এরিয়া কমিটির প্রতিনিধিদের হাতে লাল পতাকা ও স্মারক তুলে দেন মহম্মদ সেলিম। এছাড়াও গণশক্তি’র সাপ্তাহিক ও বিশেষ সংখ্যা বিক্রিতে, দেশহিতৈষী পত্রিকা বিক্রিতে, শারদীয়া, দীপাবলি সহ উৎসবের দিনগুলিতে মার্কসীয় ও প্রগতিশীল সাহিত্য পত্রিকা বিক্রিতে কৃতিত্ব প্রদর্শনের জন্য পার্টির এরিয়া কমিটিগুলির প্রতিনিধিদের হাতে স্মারক ও লাল পতাকা তুলে দিয়েছেন সেলিম।
এদিকে নভেম্বর বিপ্লব দিবস উপলক্ষে এদিনই সিপিআই(এম)’র জেলা দপ্তরে রক্ত পতাকা উত্তোলন করেন পার্টিনেতা আহমেদ আলি খান। লেনিনের প্রতিকৃতিতে মালা দেন পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, জেলা সম্পাদক পলাশ দাশ সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও নভেম্বর দিবস উপলক্ষে জেলাজুড়ে বহু কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
Md Salim
অসহায়ের পাশে থাকুন, আসল সমস্যায় নজর টানুন: সেলিম
×
Comments :0