পশ্চিমি ঝাঞ্ঝার উপস্থিতি মারাত্মক কনকনে ঠান্ডার হাত থেকে সাময়িক স্বস্তি দিলেও আগামী সপ্তাহ থেকে ফের জোরালো হবে শৈত্য প্রবাহ। প্রবল শৈত্য প্রবাহের কারণে উত্তর ভারত জুড়ে আবার হাড় কাঁপানো ঠান্ডা নামবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। এদিকে, প্রবল তুষারপাতের জেরে ধস নামায় সোনমার্গে দু’জন শ্রমিক মৃত্যু হয়েছে। জোজিলা টানালের নির্মাণের কাজে তাঁরা যুক্ত ছিলেন। তুষার ধসে চাপা পড়ে মৃত দুই শ্রমিক সন্দীপ সিং এবং বাল কৃষ্ণার বাড়ি কাশ্মীর উপত্যকার কিস্তেওয়ার অঞ্চলে। তাঁদের দেহ উদ্ধার করে সোনামার্গে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকার মৃত বলে ঘোষণা করেন। তাঁদের মৃতদেহ ময়ণাতদন্ত করা হচ্ছে। এই কাজ শেষ হলেই শেষকৃতের জন্য তাঁদের মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে পুলিশ সূত্রে জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে পশ্চিমি ঝঞ্ঝা কেটে গেলেই আগামী সপ্তাহ থেকে প্রবল শৈত্য প্রবাহের জেরে পারদ আরও নামতে শুরু করবে দিল্লি, হরিয়ানা, পাঞ্জাব রাজস্থান উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ এবং জম্মু ও কাশ্মীরে। সর্বত্র দিনে ও রাত্রে তাপমাত্রা অন্তত ৩-৫ ডিগ্রি কম হবে বলে জানিয়ছে আবহাওয়া দপ্তর। আগামী ১৫ জানুয়ারি থেকেই হাড় কাঁপানো ঠান্ডা পড়বে এই অঞ্চলে। অন্তত ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত এই অঞ্চলে শৈত্য প্রবাহের দাপট থাকবে বলে পূর্বাভাস আবহাওয়া দপ্তরের।
দীর্ঘ সময় ধরে পশ্চিমি ঝঞ্ঝার অনুপস্থিতির কারণে গত কয়েকদিনে দিল্লি সহ উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিও প্রবল ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। মঙ্গলবার থেকেই ঠান্ডার দাপট কমতে থাকে। পশ্চিমি ঝঞ্ঝা ফের তৈরি হওয়া এদিন উত্তর ভারতের সর্বত্রই পারদ ঠান্ডার কাঁপুনিও অনেকটাই কম ছিল। একই সঙ্গে দিল্লি, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং পশ্চিম উত্তর প্রদেশে এদিন কুয়াশা অনেকটাই কম ছিল। উত্তর প্রদেশের পূর্ব অংশের জেলাগুলি এবং বিহারে সর্বত্রই ঘন কুশায়ায় মোড়া ছিল।
গত একদশকে দীর্ঘতম মারাত্মক ঠান্ডার মেয়াদ কাটানোর পর এদিনও দিল্লির পারদ বেশ কিছুটা উঠল। রাজধানীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়াল ৯.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। অথচ গত ৫ থেকে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রির নিচে নেমে গিয়েছিল। এরকম টানা গত দশবছরে পড়েনি দিল্লিতে। টানা কয়েকদিন ঘন কুয়াশায় মোড়া থাকার পড় এদিন চণ্ডীগড়ের আকাশ ছিল পরিষ্কার এবং রোদ ঝলমলে। গোটা দিনই নরম রোদের উষ্ণতা উপভোগ করেছেন এখানকার বাসিন্দারা। পাঞ্জাব, হরিয়ানাতেও ছিল একই চিত্র।
কয়েকটি শৈল শহরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এদিনও বেশ কিছুটা উপড়ে উঠেছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। তবে, জম্মু ও কাশ্মীরের সোনমার্গ, গুলমার্গ, পহেলগাঁওয়ে তুষারপাত হয়েই চলেছে। প্রবল তুষারপাতের জেরে এই অঞ্চলগুলি সর্বত্র বরফে বরফে ঢেকে রয়েছে। ইতিমধ্যে শ্রীনগর সহ রাজ্যের সর্বত্র তাপমাত্রা অনেকটাই নেমেছে।
আগামী ৪৮ ঘণ্টায় পশ্চিমি ঝঞ্ঝার কারণে দিল্লি সহ উত্তর ভারতের বেশ কিছু জায়গায় আকাশ আংশিক মেঘলা এবং বিক্ষিপ্তভাবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস আবহাওয়া দপ্তরের। শীতের মরশুমে উত্তর ভারতের উপর ঘনঘন পশ্চিমী ঝঞ্ঝা তৈরি হয়। যা কড়া ঠান্ডার হাত থেকে সাময়িক স্বস্তি দেয় এখানকার বাসিন্দাদের। কিন্তু ডিসেম্বের শেষ সপ্তাহে থেকে নতুন করে এই ঝঞ্ঝা তৈরি না হওয়ায় প্রবল ঠান্ডার কবলে পড়ে দেশের উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল। এবারের পশ্চিমি ঝঞ্ঝা অস্বাভাবিক দেরিতে তৈরি হওয়ায় প্রবল ঠান্ডায় ভুগতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে।
গত কয়েকদিন ধরে ঠান্ডায় সবচেয়ে করুণ অবস্থা হয়েছে গৃহহীন ও ফুটপাত বাসিন্দাদের। প্রবল ঠান্ডায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে রাজ্যে রাজ্যে। মৃতদের অধিকাংশই গৃহহীন। ২০১১ সালের জনগণার ভিত্তিতে সরকারিভাবে রাজধানী দিল্লিতে নিরাশ্রয় মানুষের সংখ্যা ৪৬ হাজার বলে জানানো হয়েছিল। বর্তমানে তা বেড়ে অন্তত দেড় থেকে দু’লক্ষের ওপর হবে। কিন্তু শীতের হাত থেকে বাঁচাতে তাঁদের জন্য রাত কাটানোর উপযুক্ত আশ্রয়স্থল একেবারে নেই বললেই চলে। এই কারণে প্রবল ঠান্ডায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নিরাশ্রয় মানুষের মৃত্যুর ঘটনা বেড়ে চললেও সরকার এখনও উদাসীন। শুধুমাত্র দিল্লিতেই ২০২১-২২ সালের ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি মাসে ঠান্ডায় ৫৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই গৃহহীন ছিলেন। খোদ রাজধানীতে যদি এই চিত্র হয়ে দেশের অন্যত্র এই চিত্র আরও ভয়াবহ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
Comments :0