Editorial

‘বাংলাদেশি ভাষা’

সম্পাদকীয় বিভাগ

অমিত শাহর দিল্লি পুলিশের কোনও এক আধিকারিক ‘বাংলাদেশি ভাষা’র হিন্দি ইংরেজি তর্জমার জন্য লোক চেয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে দিল্লিতে আটক কয়েকজনের কাছে বাংলায় লেখা কিছু কাগজপত্র পেয়েছে। সেগুলির পাঠোদ্ধারের জন্য অনুবাদক দরকার। তার জন্যই চিঠি। যিনি বা যারা চিঠির বয়ান লিখেছেন আরও নির্দিষ্ট করে বললে বাংলা ভাষা না লিখে বাংলাদেশি ভাষা লিখেছেন তাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ থেকে যাচ্ছে। ভারতের সংবিধানে স্বীকৃত ভাষাগুলির অন্যতম বাংলাভাষা। এটা যে পুলিশ আধিকারিকের জানা নেই তিনি পুলিশ আধিকারিক হলেন কি করে। একদা অবিভক্ত ভারতের অংশ বাংলাদেশ এখন স্বতন্ত্র দেশ। তাদের ভাষা বাংলা। আবার অবিভক্ত বাংলার যে অংশ ভারতের মধ্যে সেই পশ্চিমবঙ্গের ভাষাও বাংলা। তাছাড়া ত্রিপুরা, আসাম সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের বিস্তীর্ণ অংশের মানুষের ভাষা বাংলা। বিশ্বের কম-বেশি সবদেশেই বাংলাভাষী মানুষ বাস করেন। বাংলা ভাষায় সারা বিশ্বে কথা বলেন অন্তত ৩০ কোটি মানুষ। কথোপকথনের ভাষা হিসাবে বাংলা বিশ্বে পঞ্চম। এতসব বিদ্যেবুদ্ধি থাকলে আর যা-ই হোক অমিত শাহর পুলিশের আধিকারিক হওয়া যায় না। স্বাভাবিকভাবেই এমন মূর্খামির ফল বাংলা ভাষাকে বাংলাদেশি ভাষা বলা।
অবশ্য এই মূর্খামিটা অজ্ঞতাবশত হয়েছে বলে মনে হয় না। গত কয়েক মাস ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে যেভাবে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসাবে দাগিয়ে দিয়ে বাংলাভাষী ভারতীয় নাগরিকদের হেনস্তা করা হচ্ছে সেটা সচেতন ষড়যন্ত্র মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে। বাংলা (পশ্চিমবঙ্গ) বাঙালি ও বাংলাভাষাকে অবহেলা, অপমান এবং কার্যত অস্বীকার করার প্রবণতা বি‍‌জেপি’র তরফ থেকে বাড়ছে। হিন্দুত্ববাদীরা এই ধারণা চাপিয়ে দিতে চায় যে, যে ভাষায় বাংলাদেশি অর্থাৎ মুসলিমরা কথা বলে সেই ভাষা ভারতের হতে পারে না। তাই হিন্দুত্ববাদীরা বাংলা ভাষাকে বাংলাদেশি ভাষা হিসাবে ভারতে বর্জন করতে চাইছে। একইভাবে তারা বলে থাকে উর্দু মুসলিমদের ভাষা তাই উর্দুও ভারতের ভাষা হতে পারে না। ইতিহাস, বিজ্ঞান, যুক্তি থেকে শত যোজন দূরে থাকা অন্ধভক্তরা এমনটাই ভাববে সেটাই স্বাভাবিক। জ্ঞানের আলো এতটুকু যদি এমন ভক্তদের উপর পড়ত তাহলে তারা উপলব্ধি করত ভাষার কোনও ধর্ম হয় না, কোনও দেশ হয় না। যাদের জ্ঞানের বহর গোষ্পদেই সীমাবদ্ধ তারা হিন্দু, হিন্দি, হিন্দুস্থানেই ডুবে থাকবে।
শুঁড়ির সাক্ষ্মী মাতালের মতো দিল্লি পুলি‍‌শের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিজেপি মুখপাত্র। তিনি এতবড় ভাষাবিদ যে বাংলাভাষাকে ভাষাই মনে করেন না। কারণ বাংলা ভাষার হাজারো রূপভেদ। এই সবটাকে বাংলা ভাষা বলা যায়। অমিত মালব্য বোধ হয় জানেন না হিন্দিরও হাজারো রূপ‍‌ভেদ দেশে ছড়িয়ে আছে। কমবেশি সব ভাষারই এমন রূপভেদ থাকে। মালব্যে নির্বোধ ব্যাখ্যা অনুযায়ী পৃথিবীতে কোনও ভাষাই আর ভাষা থাকে না। অতএব স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে বাংলাভাষীদের উপর জুলুমবাজি সচেতন প্রয়াসেরই অংশ। বাংলাভাষী ভারতীয়দের বাংলাদেশি বলে জিগির তুলে বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে দেশে বাংলাদেশি মুসলিম ভরে যাচ্ছে। একে ব্যবহার করে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক বিভাজনকে আরও তীক্ষ্ণ করতে চাইছে। আরএসএস-বিজেপি’র এটাই আসল রাজনীতি।
 

Comments :0

Login to leave a comment