Atique Ahmed murder

যোগী-রাজ মানে জঙ্গলরাজ-মাফিয়ারাজ, নিন্দার ঝড় তুলে বললেন ক্ষুব্ধ বিরোধীরা

জাতীয়

পুলিশি ঘেরাটোপে গ্যাংস্টার-রাজনীতিক আতিক আহমেদ ও তার ভাই আশরফের হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে নিন্দার ঝড় উঠেছে। চারপাশে পুলিশ, সামনে সাংবাদিক ও চিত্রসাংবাদিকদের ভিড়। তার মধ্যেই যেভাবে তিন দুষ্কৃতী অনায়াসে গুলি চালিয়ে খুন করেছে এই দুই বিচারাধীন বন্দিকে, তা নিয়ে বিরোধী দলগুলির প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছে যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বাধীন উত্তর প্রদেশের বিজেপি সরকার। বিরোধীরা বলেছে, যোগী-রাজে আইন বলে কিছু নেই— দেখিয়ে দিল এ‍‌ই ঘটনা। উত্তর প্রদেশে চলছে জঙ্গলের রাজত্ব ও মাফিয়ারাজ, এই ঝাঁঝালো প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছে বিরোধীরা। দাবি উঠেছে বিচারবিভাগীয় তদন্তেরও। আইনের শাসন ও আদালতকে নস্যাৎ করে গণতন্ত্রকে আক্রমণ করা হচ্ছে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে বিরোধীদের তরফে। 
রবিবার এক বিবৃতিতে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো বলেছে, এ এক বিভৎস হত্যাকাণ্ড। পুলিশি হেফাজতে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের সামনেই আতিক ও তার ভাই আশরফকে খুন করা হয়েছে। এই ঘটনা বুঝিয়ে দিল, উত্তর প্রদেশে এখন সম্পূর্ণ নৈরাজ্য চলছে। আইন বলে সেখানে আর কিছু অবশিষ্ট নেই। ব্যাপক পুলিশ প্রহরার মধ্যে এ‍‌ই খুন সরকারি যোগসাজশকেই ইঙ্গিত করছে। উত্তর প্রদেশে এনকাউন্টারের নামে যেভাবে বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করা হচ্ছে, তার পরিপ্রেক্ষিতেই এই ঘটনাকে দেখতে হবে। আদিত্যনাথ সরকারই এই সবের জন্য দায়ী। হাইকোর্টের কর্মরত বিচারপতিকে দিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করাতে হবে আতিক ও আশরফের হত্যাকাণ্ডের। এই খুনের পিছনে যারা আছে, তাদের সবাইকে চিহ্নিত করতে হবে এবং কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সিপিআই(এমে)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি টুইটারে লিখেছেন, উত্তর প্রদেশে বিজেপি’র যোগী সরকারের আমলে জঙ্গলরাজ চলছে। এই সরকারের অনন্য বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে এনকাউন্টারের নামে হত্যাকাণ্ড, বুলডোজার রাজনীতি এবং অপরাধীদের প্রশ্রয়দান। সুনিশ্চিত করতে হবে আইনের শাসন, গ্রেপ্তার করতে হবে চক্রান্তকারীদের এবং তাদের দিতে হবে কঠোর শাস্তি। 
কংগ্রেস বলেছে, অপরাধীদের কঠোরতম শাস্তিই হওয়া উচিত। কিন্তু তা হতে হবে দেশের আইন অনুযায়ী। কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আইনের শাসনকে ধ্বংস করা গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক। দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খার্গে পরপর টুইটে এই মন্তব্যের পাশাপাশি আরও বলেছেন, অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য আদালত রয়েছে। এই অধিকার কোনও সরকার বা নেতা বা ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়া যায় না। তাতে আইন লঙ্ঘন করা হয়। আইন-শৃঙ্খলাকে নিয়ে যা খুশি তা-ই করলে নৈরাজ্য জন্ম নেয়। এই ঘটনাকে ঘিরে যাঁরা বন্দুকের শাসনের পক্ষে সওয়াল করছেন, তাঁরা আসলে সংবিধানকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যাঁরা দেশের বিচারব্যবস্থায় এভাবে হস্তক্ষেপ করছেন, তাঁদেরও অপরাধীদের সঙ্গে শাস্তি হওয়া উচিত। আতিক ও তার ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে আইনের শাসন ও বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতাকে সুনিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন দলের নেতা জয়রাম রমেশ এবং উত্তর প্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। 
বিএসপি’র বিধায়ক রাজু পালের খুনেই অভিযুক্ত ছিলেন আতিক। কিন্তু সেই আতিকের হত্যাকাণ্ডের সমালোচনায় মুখ খুলেছেন বিএসপি নেত্রী মায়াবতীও। তিনি রবিবার লক্ষ্ণৌয়ে বলেছেন, আতিক ও আশরফের হত্যাকাণ্ড উত্তর প্রদেশ সরকারের কাজের ধরন নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিল। এই মারাত্মক ঘটনা খতিয়ে দেখা উচিত সুপ্রিম কোর্টের। উত্তর প্রদেশ কি আইনের শাসনের রাজ্যের বদলে এনকাউন্টার রাজ্যে পরিণত হলো, ভেবে দেখার দরকার আছে। রাজু পালকে খুনের সাক্ষী উমেশ পালের হত্যাকাণ্ডের মতোই নৃশংস আতিক ও আশরফের হত্যাকাণ্ড। আরজেডি’র সাংসদ মনোজ ঝা বলেছেন, এ শুধু দুই ব্যক্তির হত্যাকাণ্ড নয়, আসলে খুন করা হয়েছে আইনের প্রক্রিয়াকে। মধ্য প্রদেশের কংগ্রেস সভাপতি কমল নাথ সুপ্রিম কোর্টের তদারকিতে এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তৃণমূলের সাংসদ মহুয়া মৈত্র টুইটে ব‍‌লেছেন, উত্তর প্রদেশে চলছে মাফিয়ারাজ। কাশ্মীরের পিডিপি’র নেত্রী মেহবুবা মুফতি বলেছেন, জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক পুলওয়ামার ঘটনা নিয়ে যে চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করেছেন, আতিক ও আশরফের হত্যাকাণ্ড হলো তা থেকে নজর ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য ধূর্ত কৌশল। 
 

Comments :0

Login to leave a comment