ব্যাঙ্কে চাকরি করতে পারতেন, অর্থনীতিবিদ বা আইএএস আধিকারিক হতে পারতেন। কোনটাই হননি। হয়েছেন বিপ্লবী। কারণ মার্কসবাদকে আত্মস্থ করেছিলেন কমরেড সীতারাম ইয়েচুরি।
প্রয়াত নেতাকে এই ভাষাতেই স্মরণ করলেন তাঁর প্রায় পাঁচ দশকের সঙ্গে এবং সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাত।
তিনি বলেন, সীতারাম ইয়েচুরি যখন জে এন ইউ তে ছাত্র হিসাবে আসেন তখন তিনি উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। নিজে একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। অনেকে মনে ছিলেন সে একটি বড় চাকরি করবে। কিন্তু না সীতারাম একজন বিপ্লবী হলেন।
মার্কসবাদের সাথে তার পরিচয় হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার অধ্যাপকদের সাহায্যে মার্কসবাদের বিষয় তার ধারণা তৈরি হয়। এস এফ আইয়ের সদস্য হওয়ার পর রাজনৈতিক জীবনের সাথে মার্কসবাদের গুরুত্ব বুঝতে পারেন।
তিনি বলেন, ১৯৭৩-৭৪ থেকে সীতারামের সাথে আমার পরিচয়। প্রথমে দলের একজন সাধারণ সদস্য থেকে শীর্ষ নেতৃত্বে সে উঠে আসে।
দলের মতাদর্শ গত প্রশ্নে, মার্কসবাদের লেনিনবাদের দৃষ্টি ভংগিতে দেশ এবং বিশ্বকে চেনার ক্ষেত্রে বর্ধমান প্লেনামে সিপিআই (এম)-কে অন্যান্য বামপন্থী দলগুলি থেকে ভারতে বিশিষ্ট করেছে। সীতারাম এই সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সীতারামের ওপর দায়িত্ব পরে নতুন করে মতাদর্শ গত প্রশ্নে দলিল প্রস্তুত করার।
তিনি বলেন, ২০১২ আমরা সীতারাম দায়িত্ব দিয়েছিলাম মতাদর্শগত দলিল তৈরি করার ক্ষেত্রে। কারণ সে এক মাত্র যোগ্য, বর্তমান পুঁজির বিরুদ্ধে কি ভাবে লড়াই সম্ভব।
৫০ দশক কাছ থেকে সীতারামের সাথে কাজ করে দেখেছি, আমাদের দেশের সামনে হিন্দুত্ববাদের যেই আগ্রাসন তার সঠিক মূল্যায়ন করার। ১৯৯৩ সীতারাম একটা ছোট বই লিখেছিলেন গলওয়ালকারের we and our nation hood define সেখানে লেখাচিল হিটলার যে ভাবে জিউ দের শেষ করেছে আমাদের দেশেও সংখ্যালঘুদের সাথে তা করতে হবে। এই বই এখন আর আর এস এস বিক্রি করে না।
এই বইয়ের এবং আর এস এস এর বিশ্লেষণ করেছিলেন সীতারাম। মানুষের সামনে আর এস এস এর চরিত্র তুলে ধরে। আমাদের দেশে দক্ষিণপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই কি ভাবে হবে তার স্বচ্ছ ধারণা ছিল সীতারামের।
তিনি বলেন, প্যালেস্টাইন সংকট হোক, কিউবার ওপর মার্কিন আগ্রাসন হোক তার সবের বিরুদ্ধে সেখানকার কমিউনিস্ট নেতৃত্বের সাথে তার যোগাযোগ ছিল। সীতারামের প্রয়াণের পর আন্তর্জাতিক স্তরে বিভিন্ন কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে শোকবার্তা পাঠানো হয়েছে। এটাই প্রমাণ করে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের সাথে তার ঘনিষ্ট যোগাযোগ।
কেন্দ্রে বিজেপি সরকার গঠনের পর সীতারাম সাধারণ সম্পাদক হন। সেই সময় বিজেপিকে হারাতে আমাদের যেই রাজনৈতিক লাইন তা ঠিক করা এবং বাস্তবায়িত করা তাতে সীতারামের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
দিল্লিতে তার স্মরণ সভা থেকে দেখা গিয়েছে বিরোধীদের ঐক্য বদ্ধ করতে সীতারামের কতটা ভূমিকা ছিল। বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়া সীতারামের কাছে স্বস্থির ছিল।
তিনি বলেন, সীতারাম চেয়েছিলেন পার্টি কংগ্রেস থেকে এমন লাইন নিতে যাতে বামপন্থী, গণতান্ত্রিক শক্তিকে শক্তিশালী করা যায় এবং বিজেপিকে হারানো যায়।
রাজনৈতিক প্রস্তাব, রিপোর্ট তৈরি করার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির সূচি তৈরি করেছিল। হাসপাতালে দেখতে গেলে এই নিয়ে আলোচনা করতেন। শেষদিন পর্যন্ত ওর চিন্তা ছিল পার্টি কংগ্রেসের প্রস্তুতি।
তিনি বলেন, এই দায়িত্ব আমাদের ওপর এসেছে, যৌথ ভাবে আমাদের সেই কাজ করতে হবে, তবেই সীতারাম শ্রদ্ধা জানানো হবে
Comments :0