Panchayat Board

সিপিআই(এম)’কে ঠেকাতে তমলুকের বোর্ডে বিজেপি’কে সমর্থন তৃণমূলের

রাজ্য জেলা

Panchayat Board


সিপিআই(এম)-কে রুখতে তমলুক ব্লকের বিষ্ণুবাড়-২ গ্রাম পঞ্চায়েতে জোট করল বিজেপি ও তৃণমূল। তৃণমূলের সমর্থনে প্রধান এবং উপপ্রধান পদে জয়ী হয়েছেন বিজেপি প্রার্থীরা। 
তমলুক ব্লকের বিষ্ণুবাড়-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট আসন ১৪। এর মধ্যে তৃণমূল পায় ৩টি আসন। সিপিআই(এম) জয়ী হয়েছে ৩টি আসনে। সিপিআই(এম) সমর্থিত নির্দলও ৩টি আসনে জয়ী হয়েছে। অন্যদিকে বিজেপি পায় ৫টি আসন। অঙ্কের হিসেবে সিপিআই(এম) এবং সমর্থিত নির্দল মিলিয়ে ৬ জনের মধ্যে থেকেই প্রধান নির্বাচিত হওয়ার কথা। কিন্তু এই পঞ্চায়েতে তা হয়নি।


বৃহস্পতিবার বোর্ড গঠনের দিন দেখা গিয়েছে যে প্রধান ও উপপ্রধান নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থীরা পেয়েছেন ৮টি ভোট। নিজেদের ৫ সদস্য ছাড়াও তৃণমূলের ৩ সদস্যের সমর্থন মিলেছে বলেই এই ফলাফল। সিপিআই(এম)-ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে, পেয়েছে হিসেব মতোই ৬ সদস্যের সমর্থন।
এই গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধান হয়েছেন বিজেপির মৌসুমী জানা দিন্ডা, উপপ্রধান হয়েছেন বিজেপির অসিত পট্টনায়েক। বোর্ড গঠনের পর তৃণমূলের জয়ী পঞ্চায়েত সদস্য বিকাশ মাইতি সরাসরিই বলেন, ‘‘আমরা তৃণমূলের জয়ী সব সদস্যই বিজেপিকে সমর্থন করেছি’’।
ঘটনা প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, ‘‘সিপিআই(এম) তার নিজস্ব শক্তি নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। তৃণমূলকে কিনে নিয়ে বিজেপি সিপিআই(এম)’র বিরুদ্ধে বোর্ড গঠন করছে। মুখ্যমন্ত্রী বলে চলেছেন জগাই, মাধাই, গদাইয়ের জোট। জোটের অভিযোগ তৃণমূল এবং বিজেপি’র ক্ষেত্রেই খাটে। তৃণমূল তার স্বাভাবিক মিত্রর সঙ্গেই যুক্ত হ্য়েছে। এরা বিজেপির সঙ্গে বোঝাপড়া করেই চলে’’।

বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী অনিমেষ প্রামানিক বলেন, ‘‘তমলুক ব্লকের বিষ্ণুবাড়-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট আসন ১৪। তৃণমূলের ৩টি আসন, সিপিআই(এম) ৩টি, সিপিআই(এম) সমর্থিত নির্দল ৩টি ও বিজেপির ৫টি আসন। আমরা ৬ টি আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছি। আমরা ছয়জন বামপন্থার পক্ষেই লড়াই করেছি। তৃণমূল-বিজেপি গোপন আঁতাত করেছে।’’ 
প্রামাণিকের অভিযোগ, বালিচক গেষ্ট হাউসে ১৯ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিজেপি’র কাছে বিক্রি হয়ে গেছে তৃণমূল। তিনি বলেন, ‘‘দিল্লিতে মোদী ও রাজ্যে দিদি যে এক এটা প্রমাণ হয়ে গেছে। সিপিআই(এম)’কে রুখতে দিদি ও মোদী এক হয়েছেন।’’


অন্যদিকে বুধবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ২২৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ন’টি ব্লকের ৫২ টি পঞ্চায়েত গঠন হয়। তার মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরের সন্ত্রাসের বহু ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূলের এক সময়ের নেতা নান্টু প্রধানের গড়েও নিজের জোরে বোর্ড গড়তে পারল না তৃণমূল। বিজেপি’র সমর্থন নিয়ে বোর্ড গঠন করতে হলো তৃণমূলকে। 
এলাকার মানুষের অভিযোগ, নান্টুর মাধ্যমে চাকরি সংক্রান্ত টাকা পার্থ চ্যাটার্জির কাছে যেত। নান্টু প্রধান খুন হওয়ার পরে এলাকার দাদাগিরির রাশ হাতে নিয়েছিল তার ভাই তৃণমূল নেতা পিন্টু প্রধান। ভগবানপুর -১ ব্লকের মহম্মদপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল এবং বিজেপির সেটিং এর ঘটনায় রাজনৈতিক মহলের তোলপাড় পড়ে গিয়েছে। মহম্মদপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৩টি আসনের মধ্যে একটি আসনে বাম প্রার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় ভোটগ্রহণ হয়নি। বাকি ১২ টি আসনে তৃণমূল ৯টি আসন পেয়ে জয়লাভ করেছে। বাকি ৩টি বিজেপির দখলে। বোর্ড গঠন নিশ্চিত তৃণমূলের ছিল। কিন্তু দলীয় কোন্দল প্রকাশ্যে আসে। প্রধান উপপ্রধান পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। নান্টুর ভাই পিন্টু প্রধানের নেতৃত্বে তৃণমূল পূর্ণিমা মিদ্দা সাঁতরাকে মনোনীত করেছিল। কিন্তু দলের অপর গোষ্ঠী রাজীব হাজরা অসন্তুষ্ট ছিল। রাজীবের স্ত্রী শ্রাবন্তী হাজরা ভঞ্জ পঞ্চায়েতের সদস্য। তাঁকেই প্রধান করার দাবি তোলে রাজীবের গোষ্ঠী। বিজেপির তিনজন সদস্যের সমর্থন আদায় করা হলে উভয় পক্ষেরই ৬-৬ সংখ্যা হয়ে যায়। রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতিতে লটারির মাধ্যমে পিন্টু ঘোষিত প্রার্থী পরাজিত হন। রাজীব হাজরার স্ত্রী শ্রাবন্তী হাজরা ভঞ্জ প্রধান হন। 


প্রসঙ্গত এই রাজীব ভগবানপুর থানার সিভিক ভলেন্টিয়ার থাকাকালীন একটা সময় নান্টুর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। নান্টুর মৃত্যুর পর একাধিক ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আখেরে বিজেপি-তৃণমূল সেটিং করে দখল করল মহম্মদপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েত। 


 

Comments :0

Login to leave a comment