Red Fort Blast

ভালোবাসার উল্কিই হলো পরিচয়ের শেষ প্রমাণ

জাতীয়

হাসপাতালের করিডরে ভিড় করা অসংখ্য পরিবার তখনও আশা আঁকড়ে রয়েচেন। খুঁজছেন নীল শার্টটাই, কিংবা গলার ডানপাশের সেই উল্কিটাই। কিন্ত মন চাইছে যেন না মেলে। যতক্ষণ না কোনো নীল শার্ট, কোনো ছেঁড়া হাতা বা শরীরের এক টুকরো উল্কি ওঁদের ভয়াবহ নির্মম সত্যের মুখোমুখি করে, ততক্ষণই যেন আশা।
মহাম্মদ জুনমান (৩৫)—চাঁদনি চকে ই-রিকশা চালাতেন। সোমবার রাত নয়টার পর থেকেই তাঁর জিপিএস সিগন্যাল নিখোঁজ। চাচা ইদ্রিস বলেন, “হাসপাতালে চারটি দেহ দেখানো হয়েছিল, কারও চেনা যাচ্ছিল না। পরে ফোন এল—একটি দেহ পাওয়া গেছে।” পরিবারের সদস্যরা গিয়ে দেখেন, দেহের কিছু অংশ নেই, পা উধাও। “নীল শার্ট আর জ্যাকেট দেখে চিনতে পারলাম,” বলেন ইদ্রিস।
জুনমান ছিলেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ওঁর স্ত্রী সারারাত দেহের পাশে বসে ছিলেন নির্বাক। “তিনটি সন্তান আছে ওর,” ইদ্রিস বলছিলেন, “এখন তাদের আর কেউ নেই।”
ওই নীল শার্টের মতোই লালকেল্লার কাছে গত সন্ধ্যার ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর ছাই, ছেঁড়া জামাকাপড় আর শরীরে খোদাই করা উল্কিই ছিল প্রিয় মানুষটিকে চিনে নেওয়ার অন্তিম চেষ্টা। 
চাঁদনি চক-এর ওষুধ ব্যবসায়ী অমর কাটারিয়া (৩৪)। ওঁর দেহ এতটাই পুড়ে গিয়েছিল যে চেনা দায়। কিন্তু মা-বাবা আর স্ত্রীর নামে খোদাই করা উল্কিগুলোই প্রমাণ দিল, তিনিই অমর। ভালোবাসার নিদর্শনই শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠল পরিচয়ের একমাত্র প্রমাণ।
অন্য অনেকের ক্ষেত্রে, শেষ সূত্র ছিল শুধু জামাকাপড়—কোনও ছেঁড়া জ্যাকেট, কোনও জ্বলে যাওয়া শার্ট।
ক্যাবচালক পঙ্কজ সাহানি (৩০) সোমবার বিকেলে পুরানো দিল্লিতে এক যাত্রী নামাতে গিয়েছিলেন। রাত সাড়ে নয়টার দিকে টিভিতে বিস্ফোরণের খবর দেখেই বাবা রাম বলক সাহানি ছেলের ফোনে কল শুরু করেন। কোনও সাড়া মেলেনি। সারারাত খোঁজাখুঁজি শেষে মঙ্গলবার সকালে পুলিশ ফোন করে জানতে চায়, ছেলের পরনে কী ছিল। “বলেছিলাম—শার্ট আর নীল জিন্স,” রাম বলক জানালেন।
পরিবারকে ডাকা হলো এলএনজেপি হাসপাতালে। “ভাবলাম আহতদের ওয়ার্ডে নিয়ে যাবে, কিন্তু নিয়ে গেল দেহ রাখার ঘরে,” বলছিলেন রাম বলক। “আমার আত্মীয় গিয়ে চিনল পঙ্কজকে।” মঙ্গলবারই শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন তিনি।
পঙ্কজের গাড়ি ঘটনাস্থলেই দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছিল। বাবা বললেন, “ওই ছিল পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। এখন গাড়িও নেই, ছেলেও নেই, তাই রোজগারও...।”
লালকেল্লার চারপাশের সরু গলিতে এখনো ভাসছে জ্বলে যাওয়া লোহা আর পুড়ে যাওয়া কাপড়ের গন্ধ।
যারা সারারাত হাসপাতাল আর থানার বাইরে কাটিয়েছেন, তাঁদের কাছে কোনও উল্কি বা পোশাকের ছেঁড়া অংশ হয়ে উঠেছে ভালোবাসার শেষ সেতুবন্ধন।
বিস্ফোরণ শুধু ধাতু আর কাচ নয়, ছিন্নভিন্ন করেছে পরিবারগুলোকে। যারা এখন প্রিয়জনের অস্তিত্ব খুঁজে ফেরে আগুনে বেঁচে থাকা সেই অল্পটুকু চিহ্নে।

Comments :0

Login to leave a comment