SFI RALLY JADAVPUR

স্বপ্ন হত্যার বিচার চাইল সমাবেশ, আহ্বান লুট-ভাগাভাগি হটানোরও (ভিডিও)

রাজ্য কলকাতা

মঙ্গলবার যাদবপুরের সমাবেশে বলছেন মহম্মদ সেলিম।

প্রতীম দে

অ্যান্টি র‌্যাগিং সেল কোথায়? কেন তারা নিশ্চুপ? ছাত্র সংসদের দাবিতে সুদীপ্ত, স্বপন খুন হয়েছে। ছাত্র সংসদ না হলে কী হয় আজ সবাই তা দেখতে পাচ্ছে। দুর্নীতি বেড়েছে। লুঠ হচ্ছে। বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় মানে স্বাধীন চিন্তা, বিশ্ববিদ্যালয় মানে বিভাজন না। গ্রাম শহরের মধ্যে বিভাজন তৈরি করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধেই রুখে দাঁড়াতে হবে। লুটের রাজত্বে মানুষকে ভাগ করা হয়। আমরা লুটের বিরুদ্ধে। 

মঙ্গলবার যাদবপুরে এসএফআই’র ডাকে সমাবেশে এ কথা বলেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। যাদবপুরে র‌্যাগিং বন্ধ করার দাবিতে এই সমাবেশের ডাক দিয়েছে এসএফআই। দাবি উঠেছে, যাদবপুরের হস্টেলে প্রথম বর্ষের ছাত্রহত্যায় দোষীদের কড়া সাজা দিতে হবে। মিছিলে মিছিলে ‘স্বপ্ন হত্যার বিচার চাই’ স্লোগান তুলে দলে দলে ছাত্রছাত্রীরা সমবেত হয়েছেন সমাবেশে।

সেলিমের সঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুই প্রাক্তনী এবং সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য নীলোৎপল বসু এবং কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য সুজন চক্রবর্তী বক্তব্য রাখেন সমাবেশে। শিক্ষা ক্ষেত্রে তৃণমূল এবং বিজেপি, রাজ্য ও কেন্দ্রে আসীন দুই দলের রাজনীতির প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাঁরা। র‌্যাগিংয়ের বিরোধিতার নামে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে আক্রমণের কেন্দ্র করে গণতান্ত্রিক, মুক্তমনা চিন্তার ওপর আঘাতের রাজনীতিকে রোখার আহ্বান জানিয়েছেন। ‘স্বাধীন ছাত্র সংগঠন’-র নাম করে তৃণমূল এবং বিজেপি’র তল্পিবাহকের ভূমিকা নেওয়ার বাস্তবতা ব্যাখ্যা করেছেন তাঁরা।

৩১ আগস্ট খাদ্য আন্দোলনের শহীদ দিবসে সমাবেশ বামফ্রন্টের। সেই প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি যখন খাদ্য মন্ত্রী ৩০ লক্ষ বাঙালি না খাতে পেয়ে মারা গিয়ে ছিল ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে। আজ মমতা মোদী আদানি আম্বানিদের দিয়ে সেই খাদ্য সঙ্কট তৈরি করতে চাইছে। ৩১ তারিখে পুলিশ বলছে অনুমতি দেবে না সভার। আমরা কোনও অনুমতি নেব না। এই পুলিশ ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ বাঁধে। ৩১ তারিখ ১ লাখ মানুষ আসবেন। কাল যদি অনুমতি না দেয় তবে ২ লাখ মানুষ আসবে।

এদিন নীলোৎপল বসু বলেন, আমরা জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলাম। কিন্তু বামপন্থীদের সরকার গঠন হওয়ার পর রাজ্যে ছাত্রদের দাবি প্রতিষ্ঠা পেল। তখন স্বাধীন সংগঠনের নামে ডিএসএফ তৈরি হয়। মোহিত রায়, যিনি বিজেপি নেতা, তিনি ডিএসএফ’র প্রতিষ্ঠাতা। বসু বলেন, রাজ্যপাল কোন নিয়ম না মেনে উপাচার্য নিয়োগ করেছেন। তৃণমূল প্রতিদিন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে বিরোধীদের ঢুকতে বাধা দিচ্ছে যাতে তাদের মৌরসিপাট্টা বজায় থাকে।

সুজন চক্রবর্তী বলেন, লড়াই আসলে সৃষ্টি বনাম ধ্বংসের। মানুষে মানুষে ভাগাভাগির রাজনীতিকে পরাস্ত করার লড়াই। বাংলা ভাগ করার চক্রান্ত চলছে। অনন্ত মহারাজকে রাজ্যসভায় পাঠাচ্ছে বিজেপি। লক্ষ্য হলো, মানুষকে ভাগ করো। লেখা পড়া বন্ধ করো। মুক্ত চিন্তার ওপর আক্রমণ করতে চায়তাই যাদবপুর প্রেসিডেন্সি লক্ষ্য।

সেলিম বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থাকে শেষ করেছে তৃণমূল। লুটের রাজত্ব কায়েম করেছে। যাদবপুরে ভুয়ো মিলিটারি আনা হচ্ছে। উপাচার্য বলছে যে কেউ আসতে পারে। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে যখন ছাত্ররা হস্টেল সহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করেছে তখন বিজেপি বলছে ট্যাংক বসাতে। 

তিনি বলেন, তিনি বলেছেন, সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ভাইপোকে গ্রেপ্তার করে জেরা করুক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। যদি না হয় তবে ইডি সিবিআই দপ্তরে যাব আমরা। শ্রীলঙ্কা দেখিয়েছে মানুষ খেপলে কেউ রেহাই পায় না। মানুষের মধ্যে রাগ জমছে। ছাত্র কমছে। স্কুল বন্ধ হচ্ছে। সিট খালি থাকছে। ড্রপ আউট বাড়ছে গোটা দেশে, শিশু শ্রমিক বাড়ছেকোথায় শিশু শ্রম বিরোধী আইন?

সেলিম বলেন, যাদবপুরকে টার্গেট করা হচ্ছে যাতে গরিব ঘরের ছেলে মেয়েরা উচ্চশিক্ষিত হতে না পারে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি স্কুলশিক্ষাকে ধ্বংস করছেন আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জাতীয় শিক্ষা নীতির মাধ্যমে গোটা দেশে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করছেন। 

মুখ্যমন্ত্রী কোনও প্রমাণ ছাড়াই যাদবপুরে ছাত্র খুনের জন্য সিপিআই(এম)’কে আক্রমণ করে চলেছেন। সেলিম বলেছেন, মমতা যাদের ‘মার্কসবাদী’ বলছেন তাদেরই নিয়ে গিয়েছিলেন জঙ্গল মহলে। এই দালালরা চায় সংগঠিত ছাত্র আন্দোলন বাম আন্দোলনকে শেষ করতে। দোষীদের আড়াল করতেই সিপিআই(এম)’র ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন, তদন্তকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন।

সেলিম বলেন, আরএসএস মমতাকে প্রেসক্রিপশন লিখে দিয়েছে। সেই মতো মমতা চলছেন। চ্যালেঞ্জের সুরে সেলিম বলেন, ‘‘মমতা, পুলিশ কমিশনার মাথা খুঁড়ে মরলেও র‌্যাগিংয়ে সিপিআই(এম)’কে পাবে না। সিপিআই(এম) স্বপ্ন দেখায়,  স্বপ্ন খুন করে না।

দত্তপুকুরের প্রসঙ্গ তুলে সেলিম বলেন, মানুষ তৃণমূলের বোমা কারখানায় মারা গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী কোনও কথা বলেননি। প্রতিদিন রাজ্যে খুন ধর্ষণ হচ্ছে, কোন কথা বলছে না। মণিপুর নিয়ে মোদী যেমন চুপ, মমতা তেমন চুপ। সেই সঙ্গেই তিনি বলেন, কতো খেল কত কালীঘাটে আছে তার হিসাব চাই। ইডি সিবিআই কিছু করবে না। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী হাইকোর্টে গিয়েছিলেন যাদবপুরের তদন্তে এনআইএ চেয়ে। হাইকোর্ট শোনেনি। অভিনন্দন আদালতকে। যাদবপুরের ছাত্র মৃত্যু নিয়ে তৃণমূল বিজেপি গলা ফাটাচ্ছে। কিন্তু খড়্গপুর আইআইটি’তে ছাত্রমৃত্যু নিয়ে চুপ এরা। সেই ঘটনাতেই খুনিদের বাঁচানোর জন্য মমতার পুলিশ আদালতে গিয়েছে। 

সেলিমের দাবি, খুনের মামলা রুজু করে যাদবপুরে ছাত্র মৃত্যুর তদন্ত করতে হবে পুলিশকে। তিনি বলেন, যে ১৩ জন যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তারা এসএফআই বিরোধী। মমতা যে মিথ্যাবাদী তা প্রমাণিত

Comments :0

Login to leave a comment