Radio

রেডিও শিল্প ভাটা, মন খারাপ কারিগর ব্রজকেশ দাসের

জেলা

শঙ্কর ঘোষাল : বর্ধমান 
রাত পোহালেই মহালয়া, একসময় মহালয়া মানেই রেডিও। মহালয়ার ভোর থেকে ঘরে ঘরে বেজে উঠত রেডিও। সেসব আজ অতীত। বর্তমান সময়ে মানুষের মধ্যে রেডিও বাজানোর প্রবণতা কম তাই ব্রজকেশ দাসের মন খারাপ। রাত পোহালেই মহালয়া। কিন্তু সেই দিন আর নেই, রেডিও’র রমরমা। এক সময় ব্রজকেশ দাসের মনে যে আলোর বেনু ফুটিয়ে তুলে ছিল রেডিও শিল্প আজ তা ভাটা পড়েছে। ব্রজকেশ দাসকে বর্ধমান শহরের মানুষ রেডিও কারিগর হিসাবে চেনেন। মুখে মুখে কথিত আছে মরা রেডিও নাকি তাঁর হাতে পড়
লে বেঁচে ওঠে। প্রায় ৩৫ বছর হাতে কলমে কাজ করছেন। বয়স এখন ৬২। শনিবার সন্ধ্যায় তাঁর সাথে কথা হচ্ছিল তিনি অতীত স্মৃতি চারনা করতে গিয়ে শুনিয়েছেন রেডিও’র রমরমার কথা। তখনই তিনি অনেক আশা নিয়ে কাজ শিখে ছিলেন। খুব কম সময়ের মধ্যেই একজন দক্ষ কারিগর হয়ে ওঠেন তিনি। সেই অতীতের কথা বলতে গিয়ে ব্রজকেশ দাস শুনিয়েছেন তাঁর বাড়ি বর্ধমান শহরের রায়নগরে। তখন রেডিও’র এত চলন ছিল যে অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করতে হতো তাঁকে। মহালয়ার আগে কয়েকটা রাত জেগে তাঁকে রেডিও সারাতে হতো। তাতেও কাস্টমারদের সার্ভিস ঠিক মতো দিতে পারতেন না। এখন ১০ ঘন্টা পর মহালয়া কিন্তু হাতে তেমন কাজ নেই। যা ছিল সবই করে দিয়েছেন সন্ধ্যার পরই বাড়ি ফিরবেন। এখন শুধু রেডিও সারিয়ে পেট ভরে না। বি সি রোড থানার সামনে দ্বিতলে ছোট্ট তাঁর দোকান কিন্তু সেই দোকানে একসময় জৌলুস ছিল চোখে পড়ার মতো। খদ্দের আসতেন দোকান খোলার পর থেকেই। এখন রেডিও’র রমরমা নষ্ট হবার পর সেই জায়গা নিয়েছে মোবাইল। অনেকেই বলেন মোবাইল মিস্ত্রি হতে কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে চোখ সেই চাপ নিতে পারবে না। তাই সংসার চালাতে এলইডি ল্যাম্প সারিয়ে কোন রকমে সংসার চালাচ্ছেন। বর্ধমান শহরে এখন রেডিও মেরামত করার দোকান হাতে গোনা দু-চারটে। নতুন রেডিও বিক্রি হয় দু-চারটে তাও আবার এই মহালয়ার সময়। এখানেই পরিচয় হল অমল চন্দ্র বসাকের সাথে। তিনিও রেডিও সারাতে এসেছেন ব্রজকেশ দাসের কাছে। তাঁর মুখেই শুনলাম মহালয়া টিভিতে শুনতে ভালো লাগে না। বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র’র মহালয়া তাঁর এতটাই ভাল লাগে যে তাঁর একজন ভক্ত হিসাবে কলকাতায় বাড়িতে গিয়ে দেখা করে এসেছিলেন তিনি। বর্ধমান শহরের কাঞ্চননগরের বাসিন্দা অমল চন্দ্র বসাক বলেছেন, ওই ভয়েস কোথায় পাবো? টিভিতে যা দেখায় তা ভালো লাগে না। তাই অবসরপ্রাপ্ত এই কর্মচারী বলেছেন আমি যতদিন বেঁচে আছি রেডিও’তেই শুনবো মহালয়া। তারপর কি হবে জানি না। এমনই অনেক প্রবীণ মানুষের সাথে পরিচয় হলো যাঁরা রেডিও মেরামত করতে এসেছেন কিন্তু তাঁদেরও আফসোস রেডিও’কে তাঁরা ভালো বেসে এখনও শুনছেন খবর, মহালয়া, এফ এম।  
ধীরে ধীরে রেডিও’র বিলুপ্তি বহু মানুষের রুটি-রুজির উপর আঘাত হেনেছে। বড়নীলপুরের এক রেডিও কারিগর বলেছেন আর হয়তো কয়েকটা বছর তারপর রেডিও’র কথা বর্তমান প্রজন্মের ছেলে-মেয়ে’রা ভুলে যাবে। তেমনই একথাও বলেছেন তাঁদের প্রজন্মের আর কেউ রেডিও’র কারিগর হবে না। বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র’র সেই চেনা কন্ঠস্বর হয়তো শোনা যাবে অন্য কোন মাধ্যমে.......।

Comments :0

Login to leave a comment