গল্প / কবিপক্ষ, বর্ষ ৩
নাড়ির টান....
অভীক চ্যাটার্জী
এক না গল্প
ছেলেটা খাড়া দাঁড়িয়ে আছে নাগাসাকি শ্মশানের বাইরে।কতইবা বয়স ছেলেটার! বড়জোর দশ। এটুকু বললে ঠিকই ছিল। কিন্তু ছেলেটার কাঁধে দড়ি দিয়ে বাঁধা এক ছোট্ট দুধের শিশুর লাশ! চোয়াল শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে সে দাঁড়িয়ে আছে।
কেউ এসে বলল, খোকা, বোঝা নামিয়ে রাখো, কষ্ট হচ্ছে যে। সে আরও দৃঢ় অথচ শান্ত গলায় একটাই কথা বলে, যে কথা তাকে কালজয়ী করে দেয়, "ও বোঝা নয়, ও আমার ভাই। "
তারপর এক সময় তার পালা আসে। কাঁধের বাঁধন খুলে সে নামায় তার ভাইকে । তুলে দেয় শেষ যাত্রায়। অনন্ত আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করে ছোট্ট শিশুটির তুলতুলে শরীর। ছেলেটা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে দেখে। চোয়াল তখন আরও শক্ত। কামড়ে ধরে ঠোঁট। তারপর ঘুরে মিলিয়ে যায় রহস্যের অমানিশায়।
গল্পটা সবার জানা। কিন্তু এই গল্প তার নয়। এই গল্প তাদের , যারা সম্পর্কের সঠিক সময়ে সঠিক মূল্যায়ন করতে পারেনি। সম্পর্কের জটিল সমীকরণ হয়তো অতটাও জটিল নয়, যদি আমরা সে সম্পর্ককে সঠিক মূল্যায়ন করি। কিংবা, দেনাপাওনার নিক্তিতে বাঁদরের পিঠেভাগ করতে না বসি। একবার ভাবুনতো,আপনার মা কি কখনও দাড়িপাল্লাতে মেপে তার স্নেহময় পরশ দিয়েছেন? কিংবা, আপনার বাবা মাছের পেটিটা আপনাকে খাওয়ানোর আগে দুবার ভেবেছেন? তাহলে তার বার্ধক্যে কেনো বৃদ্ধাশ্রমের ছোট্ট খাটটা তার জন্যে বরাদ্দ হয়?
এ গল্প আমাদের বলে এক অটুট সম্পর্কের কথা, এক পাশে থাকার কথা, অন্তত এক বিশ্বাসের কথা, ভয় পেওনা, পাশে আছি। আপনার ভাই যদি পিছিয়ে পড়ে, তাকে টেনে তুলুন, তাকে বলুন, আপনি তার পাশে আছেন।
আজকের দিনের সংখ্যাগরিষ্ট সম্পর্কের মূল্যবোধ যতটা তলানিতে এসে ঠেকছে, তাতে এই ছেলেটির বড় দরকার। আজ হয়তো তাকে পেলে একটা খুব ছোট্ট সাধারণ প্রশ্ন করতাম, হ্যাঁরে, আমার ভাই হবি?
Comments :0