গল্প — মুক্তধারা, বর্ষ ২
ছেড়ে যাওয়া
বীথি কর
গণেশবাবুর দোকানে ভোর থেকে আড্ডা শুরু হয়। সকালে যারা শরীরের কসরত করে পার্ক থেকে ফেরে, ঘন্টাখানেক গল্প করে তারা এখানে "মর্নিং টি" খেয়ে বাড়ি যায় । গপ্পের বিষয় ঠিক করে জটলা পার্টি, মানে ওই প্রবীণ সম্প্রদায়। লেগে যায় তর্ক, চিৎকার । মাঝে মাঝে প্রায় মারপিট। নবীনরা নাম দিয়েছে বটে কিন্তু এই জটলা পার্টি পাড়ার প্রাণ। সকলেই একসময়ের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ আধিকারিক, কবি, শিল্পী, লেখক এবং শিক্ষক। নবীনরা কথায় কথায় এই জটলা পার্টির দ্বারস্থ হয়।
: ওহে গণেশ, আজ কাউকে দেখছি না যে। গেল কই সব? একটু তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে প্রশ্নটা প্রায় ছুঁড়ে দিলেন রমেন দাশগুপ্ত। পাড়াতে তাঁকে গোপনে জ্ঞানবাবু বলে ডাকে। কারণ সবেতেই তিনি তাঁর শিক্ষার প্রায় কেষ্টপুজো করে ছাড়েন। স্বভাবে কিপটে, একপয়সা গলে না আঙুলের ফাঁক দিয়ে।
: রমেনদা, শোনেননি? ওদিকে গতকাল রাতে রায়বাবু যে সংসারের মায়া ছেড়ে চলে গেলেন । হঠাৎ কি যে হল! বউদিও বুঝতে পারলেন না! এমন করে কেউ যায়, বলুন তো?
: বলো কি গণেশ? ডঃ রায় নেই? চলে গেলেন? আমি তো ভাবতেই পারছি না। ইস্! আসলে আমরা বড়াই করি নিজেদের নিয়ে, কিন্তু কখন যে কার ডাক আসে, কেউ বলতে পারবে না!
কথাগুলো বিড়বিড় করে বলতে বলতে বেঞ্চিতে বসতেই দেখে রাস্তার ওপার থেকে ডঃ রায় আসছেন, সাথে জটলা পার্টি আর কিছু অচেনা লোক।
সামনে আসতেই প্রায় সবকটা দাঁত বের করে রায়বাবু বললেন, "এক কাপ কড়া করে চা বানা দেখি গণেশ। সবাই মিলে এরা ধরে নিয়ে এল। এই হল হাত বড়ো বন্ধুত্বের ফল। বিধান মুখার্জি ঠিক খোঁজ পেয়ে গেল! কাউন্সিলরের দাদা বলে কথা! সোজা লাল বাতির গাড়ি হাজির আমার সামনে! ধুর.. "
Comments :0