STORY / MRIDUL PAL / RABITHAKUR / MUKTADHARA / KABIPAKHSHA - 18 MAY 2025 / 3rd YEAR

গল্প / মৃদুল পাল / মৃত শহরের শুকনো গন্ধ / মুক্তধারা / কবিপক্ষ, ১৮ মে ২০২৫, বর্ষ ৩

সাহিত্যের পাতা

STORY  MRIDUL PAL  RABITHAKUR  MUKTADHARA  KABIPAKHSHA - 18 MAY 2025  3rd YEAR

গল্প / কবিপক্ষ, বর্ষ ৩

মৃত শহরের শুকনো গন্ধ

মৃদুল পাল

রবীন্দ্র ভবনে মুক্তধারা নাটকের প্রদর্শনী দেখে একজন দীর্ঘ বয়স্ক ভদ্রলোক বাইরে বেড়িয়ে এলেন।প্রসারিত ধবল চুল-দাড়ি,খড়্গনাশা ভদ্রলোকের নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।নাটকের পরিবেশনা দেখে তিনি খুবেই আশাহত।এত চুখ ধাঁধানো আলো,বহুমাত্রিক অভিনয়,সেট ডিজাইনের কারুকার্য, রাজকীয় পোশাক,এন এস ডি ফেরৎ নটপটু পরিচালকের যাদু,সবকিছু মিলে মিষেও মুক্তধারাকে উজ্জীবিত করতে পারল না।পরিচালক নাটকে নিজস্বতা বজায় রাখার স্বার্থে অনেকগুলো অভিযোজনা করলেন।কিন্ত রাজা রনজিৎ চরিত্রের কোনো হেরফের করলেন না।কিন্ত রাজার দিনতো ফুরিয়ে গেছে।এখন রানীমার শাসন।উত্তর আধুনিক যুগের মুক্তধারায় রানী থাকবে।রানী বিনে মুক্তধারা পরিবেশনার স্বার্থকতা কোথায়?রবীন্দ্রনাথের তা একদম পচ্ছন্দ হয়নি।

মেজাজ সপ্তমে চড়লেও তা জনসন্মুখে প্রকাশ করা ঠাকুরবাড়ির ঐতিহ্য বিরুদ্ধ।তাই মনকে প্রফুল্ল করার জন‍্য সে ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে থাকে।অনেক কাল আগে যে রাস্তা দিয়ে সে জুড়িগাড়িতে চড়ে বেড়াতেন,সেই রাস্তার ফুটপাতে এখন পা ফেলার জো নেই।কোলকাতার ফুটপাতেরও চরিত্র বদলাচ্ছে।ফুটপাতের ওপর এত দোকান-হাট,খদ্দরের ভির।শুধু যে গ্রাম-গঞ্জ থেকে আগত পদপথের ব‍্যবসায়ীরা ফুটপাত দখল করে ব‍্যবসা চালাচ্ছে তা নয়,অনেক বসত ব‍্যবসায়ীরাও দোকানের সন্মুখের ফুটপাতের অংশে দোকানের মাল পত্তর সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছে।রবীন্দ্রনাথের হাঁটতে অসুবিধা হচ্ছে।  

মূলপথ ছেড়ে রবীন্দ্রনাথ আবাসিক অঞ্চলে প্রবেশ করে।হট্টগোল অনেকটাই কম।নিরিবিলি থাকতে সে ভালোবাসে। একটি আবাসন থেকে কোনো এক কিশোরীর সংগীত চর্চার সুর ভেসে আসছে।ওরে নতুন যুগের ভোরে...।রবীন্দ্রনাথের একটু দাঁড়াতে মন গেল।তার চা-তৃষ্ণা পেল।সেই রাস্তার মোড়ে রাধাচূড়া গাছতলায় একটি চায়ের দোকান দেখতে পেল।সুনীলের চায়ের দোকান।দোকান থেকে চায়ের ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে অবিরত।সেই ধোঁয়ার মধ‍্যে চায়ের কেটলি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন সুনীল।রবীন্দ্রনাথ দোকানের সামনে গিয়ে হাজির হতে না হতেই সুনীল রবীন্দ্রনাথকে হাত জোড় করে সম্ভাষন জানায়।

-নমষ্কার গুরুদেব।কেমন আছেন?

-ভালো।

-কি চা খাবেন?দুধ,লিকার,সবুজ,কফি...

-কবিতা...কবিতা চা।

গ্রাহকের চাহিদা শুনে সুনীলের ঠোঁটে একটি হাসি ফুটে।অনেকদিন হলো কবিতা চা বিক্রি হয়নি।অনেক দিন নয়,অনেক বছর।আজ একজন গ্রাহক পাওয়া গেল।সুনীল এককাপ চায়ের সাথে একটি হাতে লেখা কবিতা দেয়।কবিতার শিরোনাম 'তিনি এবং আমি'।রবীন্দ্রনাথ চায়ে দুচুমুক দিয়ে ছানাবড়া চোখে দোকানীর দিকে তাকাল।জলকাচা ধুতির ওপর পেঁজা শার্ট পরে দোকানী দুধ থেকে সর তুলে একটি কাঁচের গ্লাসে ঢালছে।পায়ে রবারের স‍্যান্ডেল।পাশের আবাসনের মেয়েটি তখনও গেয়েই চলেছে ...এই সংশয়ের মাঝে তোর কি ভাবনা মিশাবি?

রবীন্দ্রনাথের মন ভরে গেল আনন্দে।উত্তরাকাশের ধ্রুবতারা কে দেখে নয়,নবারুণ সন্ধের রবীন্দ্র সংগীত চর্চা শুনে নয়।একটি চায়ের দোকানীও কবিতা লিখতে জানে।নতুন কিছু সৃষ্টির তাড়নায় এই শহর এখনো বাঁচে।গান্ধী পরিবারের ছোকরা রাজীব বলেছিল এই শহর মৃত।কিন্তু এই শহর সঞ্জীবনী সুধায় পরিপূর্ণ।মনের আনন্দে রবীন্দ্রনাথ সুর ধরলেন-চলায় চলায় বাজবে জয়ের ভেরী,পায়ের বেগেই পথ কেটে যায়,করিস নে আর দেরি...

 

Comments :0

Login to leave a comment