STORY — SOURAV DUTTA — NAGASAKI — NATUNPATA | 9 AUGHST 2025, 3rd YEAR

গল্প — সৌরভ দত্ত — পোড়া সাইকেলের গল্প — নতুনপাতা, ৯ আগস্ট ২০২৫, বর্ষ ৩

ছোটদের বিভাগ

STORY  SOURAV DUTTA  NAGASAKI  NATUNPATA  9 AUGHST 2025 3rd YEAR

গল্পনতুনপাতা

পোড়া সাইকেলের গল্প
সৌরভ দত্ত

ধূ-ধূ নির্জনতা।কয়েক মিনিট আগেও খেলছিল বাচ্চারা। নিজেরা খুনশুটি করছিল। প্রতিদিনের মতো টকটকে লাল সূর্য উঠেছিল ।সুজুকি ভাইবোন কি ভেবেছিল এরকম হবে!ছবি আঁকছিল তারা । সুস্থ পৃথিবীর ছবি।ঝলসে গেছে ঘোড়ার গাড়ি, মার্সিডিজ। সভ্যতার বুকে পরপর নেমে আসে বর্বরোচিত আঘাত।

সকাল থেকে আকাশে কিচিরমিচির করতে করতে উড়ছিল পাখির ঝাঁক। গাছগুলো দাঁড়িয়ে সমান্তরাল। সুস্নাত সকালে ব্যালকনিতে বসে কোনো কবি লিখছিল হাইকু। সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছিল অস্থির সময়কাল।জাপানি উপকথা বুড়ি আজো শোনায় তার নাতিকে। কেউ ভাবতেই পারেনি এর মধ্যে ঘটে যাবে ইতিহাসের আলোয় ভাসমান শতাব্দীর নৃশংস ঘটনা।যার আঁচ ছড়িয়ে পড়বে অলিতে গলিতে। তখনও বহতা নদীর জল নীল।

কিছুক্ষণের মধ্যেই কালো মেঘের আস্তরণে ঢেকে গিয়েছিল প্রকৃতি। সুন্দর সেজে স্কুল গাড়ি করে মর্নিং স্কুলে যাচ্ছিল ইয়োটা নামের মেয়েটা।দুটো বাচ্চা খেলছিল ছাদে। বলছিল– দ্যাখ দ্যাখ চারিদিক কেমন অন্ধকারে গাঢ় হয়ে আসছে।পুড়ে গেল‌ শহর।পোড়া মাংসের গন্ধ।শরীরে আঠালো আস্তরণ। পারমাণবিক ফোস্কা চোখে মুখে। হিরোশিমার অভিশাপ। দীর্ঘ শূন্যতা।চোখে ঠুলি পরা রাষ্ট্রনায়কদের দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে প্রশ্ন তোলে।পরপর দুটো দিন ৬ ও ৯ আগস্ট হিরোশিমা-নাগাশাকির ব্যাপার দুটো মানুষকে বিচলিত করে। যুদ্ধের দামামা পিষ্ট করে মানবতা।

ছোট্ট তিনিশির ধ্বংস প্রাপ্ত বাই সাইকেল এখনো রাখা আছে জাদুঘরে।যা ৩ বছর ১১ মাস বয়সী বাচ্চাটি সেদিন ঘটনার সময় বাড়ির বাইরে চালাচ্ছিল।মৃত শরীর পুড়তে পুড়তে ছাই হয়ে গেছে।সে সকালে বিড়ালটা ম্যাও করে ডেকে ওঠে। জাপানি মানুষের চোখের মণি ফেটে বেরিয়ে আসে রক্ত । জানোয়ারের মতো ছটফট করতে থাকে বেঁটে মানুষের দল। রাস্তায়,বন্দরে থরে থরে মৃত দেহের স্তূপ।সেই স্তূপ থেকে বেরিয়ে আছে একটা সরল শিশুর আঙ্গুল। পরিত্যক্ত বাড়ি ।যুদ্ধ মানুষকে শেষ করে দেয়।ডানা ঝাপটায় পাখি। হাসপাতালে কাতরাতে থাকে প্লুটোনিয়াম বোমায় বিধ্বস্ত লোকজন।তুলো-গজ লাল ওষুধ ক্যানভাস জুড়ে। শিল্পীর অ্যাক্রেলিকে ফুটে ওঠে ফ্যাসিবাদের মিনিয়েচার।

আজো আশি বছর পেরিয়ে এসে হিরোশিমা নাগাসাকির শিশুদের স্মৃতির ভিতর দগদগে ক্ষত। হাত ধরাধরি করে হেঁটে চলে সুজুকি ভাইবোন।কফিনের ছবি ভেসে ওঠে। সিনেমা হয়।টপটপ করে ঝরে অশ্রুকণা।হার্সি বই লেখেন -‘হিরোশিমা’। অচেতনে একটা পোড়া বাই সাইকেল হঠাৎ চলতে শুরু করে…

Comments :0

Login to leave a comment