প্রকৃতির ধাক্কা সামলে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে ডুয়ার্স। ভয়াবহ বন্যায় জলপাইগুড়ি জেলার এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলটি যে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছিল, সেই ক্ষত ভুলিয়ে এখন ঘুরে দাঁড়ানোর পালা। গত কয়েকদিন আগেও তিস্তা, জলঢাকা-সহ একাধিক নদীর জলস্ফীতিতে মানুষ থেকে শুরু করে বন্যপ্রাণ পর্যন্ত বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। গন্ডার, বাইসন, হরিণ-সহ বহু বন্যপ্রাণীকে ভেসে যেতে দেখা গিয়েছিল। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছিল ডুয়ার্সের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক ভিত্তি পর্যটনের উপর। বন্যার কারণে একের পর এক বুকিং বাতিল করেছিলেন পর্যটকরা। তবে এখন পরিস্থিতি অনেকটাই ইতিবাচক। গত রবিবার থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় জলস্তর কমতে শুরু করেছে। এর পাশাপাশি প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপে ক্ষতিগ্রস্ত সেতু, কালভার্ট ও রাস্তাঘাট মেরামতির কাজও দ্রুত গতিতে সম্পন্ন হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় স্বাভাবিক হয়েছে।
বন্যায় বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়েছিল বিন্নাগুড়ি–নাগরাকাটা জাতীয় সড়ক। কালিখোলা সেতুর এপ্রোচ রোডের মাটি ধসে পড়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বুধবার থেকেই সেই রাস্তায় গাড়ি চলাচল শুরু হয়েছে। এর ফলে দূরপাল্লার যাত্রীদের পাশাপাশি পর্যটকদের যাতায়াতও সুগম হল। বন্যার কারণে জল ঢোকার আশঙ্কায় কয়েকদিন বন্ধ রাখা হয়েছিল বিভিন্ন বনাঞ্চলের জঙ্গল সাফারি। পর্যটকদের জন্য সেই জঙ্গল সাফারির রুটগুলি ইতিমধ্যে ফের চালু করা হয়েছে। স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, সামনেই কালীপুজোর মরসুমে পর্যটকের ভিড় আবার ডুয়ার্সে ফিরবে।
ইতিমধ্যে পর্যটনকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে নতুন উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে। আপার কলাবাড়ির একটি বেসরকারি রিসর্টে সম্প্রতি চালু হয়েছে একটি টয় ট্রেন সার্ভিস। রিসর্টের ঢালাই রাস্তার উপর দিয়ে চলবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই ট্রেন, যা রিসর্টের এলাকা ঘুরে পর্যটকদের ডুয়ার্সের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ দেবে। স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ী শেখ জিয়াউর রহমানের দাবি, বন্যার কারণে ডুয়ার্সের প্রকৃতির কোনও স্থায়ী বড়সড় ক্ষতি হয়নি, সৌন্দর্য আগের মতোই অমলিন রয়েছে। তাই তাঁর আহ্বান, "ডুয়ার্সে আসুন, প্রকৃতির কোলে ফিরে যান, এখানকার সৌন্দর্য উপভোগ করুন।" বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলা করে যেভাবে দ্রুত ডুয়ার্স আবার পর্যটকদের স্বাগত জানানোর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, তাতে কালীপুজোর ছুটিতে উত্তরবঙ্গের এই অঞ্চলের পর্যটন শিল্প আবার পুরোদমে ঘুরে দাঁড়াবে বলেই মনে করছেন সকলে।
Comments :0