গল্প — নতুনপাতা
গুরুদক্ষিণা
সৌরীশ মিশ্র
"বাবাই কোথায় গো পিসিয়া?"
কলেজ থেকে সোজা পিসির বাড়ি চলে এসেছে আজ মাম। আর এই বাড়িতে পা দিয়েই এই ভাবেই ওর পিসির কাছে ওর ছোট্ট পিসতুতো ভাইটার খোঁজ করল সে।
"ওর পড়ার ঘরেই আছে। আজ খেলতে যায়নি মাঠে। এই তো একটু আগেও দেখলাম, কি আঁকছিল যেন!" বলেন তৃপ্তি দেবী।
মাম সোজা এবার পা বাড়ায় বাবাই-এর পড়ার ঘরের দিকে। কয়েকক্ষণে পৌঁছেও যায়। ঘরের বাইরে থেকেই দেখতে পায়, চেয়ারে বসে পড়ার টেবিলে ড্রইং খাতা রেখে ঘাড় গুঁজে এক মনে আঁকছে বাবাই।
"কি রে কি আঁকছিস?" হাসি হাসি মুখে ঘরেতে ঢুকতে ঢুকতে বাবাইকে বলে মাম।
"আরে মামদিদি? কখন এলে? কলিংবেল বাজে নি তো? বসো বসো।" মামকে হঠাৎই দেখে যেমন বিস্মিত হয় বাবাই, তেমনই খুশিও হয় কম না। মাম যেমন ওর এই ছোট্ট ভাইটাকে ভালোবাসে খুব, ঠিক ততটাই ভালোবাসে বাবাইও মামকে। মামের ভীষণই ন্যাওটা ও।
"এই তো এলাম। আর, কলিংবেল বাজাইনি কেন? তোর মা ফেরিওয়ালার কাছ থেকে কি যেন কিনছিল, তাই দরজা খোলাই ছিল। তা, কি আঁকছিলিস দেখি?" মামের কাঁধে ছিল একটা ব্যাগ, আর হাতে আর একটা বড় প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ; দুটো ব্যাগই পাশের কাঠের চেয়ারটায় রেখে, বাবাই-এর পড়ার টেবিল থেকে আঁকার খাতাটা তুলে নেয় সে। তারপর একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে সেটায়।
"ঘুড়ি ওড়ানোর ছবি আঁকছিলাম মামদিদি। কাল বিশ্বকর্মা পুজো, না! কেমন হয়েছে গো ড্রইংটা?"
"ভালোই হয়েছে। তবে শুধু ঘুড়ি ওড়ানোর ছবি আঁকলেই হবে, ঘুড়ি ওড়াবি না? তুই তো ঘুড়ি ওড়াতে ভীষণই ভালোবাসিস। আর সেই তুই কিনা বিশ্বকর্মা পুজোর আগের দিনের বিকেলে ঘুড়ি না উড়িয়ে, ঘুড়ি ওড়ানোর ছবি আঁকছিস! ব্যাপার কি?"
"ঘুড়ি নেই। আজ বাবা অফিস থেকে ফেরার সময় নিয়ে আসবে। কাল ওড়াবো।"
"কাল অবধি অপেক্ষা করতে হবে না তোকে।" ড্রইং খাতাটা ফের পড়ার টেবিলের উপরে রেখে বলে মাম।
"তার মানে?" জিজ্ঞেস করে বাবাই।
"এই নে, তোর জন্য চারটে ঘুড়ি এনেছি।" কাঠের চেয়ার থেকে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগটা তুলে নিয়ে এগিয়ে দেয় সেটা বাবাই-এর দিকে সে। কিন্তু, বাবাই যেই হাত বাড়িয়ে নিতে যায় ব্যাগটা, ওমনি কেন জানি ফের নিজের দিকে টেনে নেয় সেটা মাম! আর বলে ওঠে, "ঘুড়িগুলো দেবো, তবে একটা শর্ত আছে।"
"কি শর্ত, আবার?" একটুখানি বিরক্ত হয়েই শুধোয় বাবাই।
"আমার অনেকদিনের ইচ্ছা, আমিও ঘুড়ি ওড়াই। তুই কি সুন্দর ঘুড়ি ওড়াস! আমাকে শেখাবি তুই ঘুড়ি ওড়ানো? শেখালে, তবেই দেব ঘুড়িগুলো।" বলে মাম।
"এই ব্যাপার! চলো এক্ষুনি ছাদে। এখুনি শিখিয়ে দিচ্ছি তোমায়।" হেসে উঠে বলে বাবাই।
"তাহলে নে তবে এগুলো তুই।" ঘুড়ির প্যাকেটটা বাবাই-এর দিকে হাসি-হাসি মুখে এগিয়ে দেয় মাম। তারপর ফের বলে ওঠে, "এটা তোর গুরুদক্ষিণা, ইন অ্যাডভান্স, বুঝলি?"
মাথা নেড়ে হ্যাঁ ব'লে ঘুড়ির ব্যাগটা হাতে নেয় বাবাই। তারপর টেনে বের করে একটা টুকটুকে লাল রঙের ঘুড়ি সেটা থেকে।
মাম লক্ষ্য করে, তার ছোট্ট ভাইটার মুখটা ঝলমল করছে খুশিতে। বাবাইকে এতো খুশি দেখে, মামেরও আনন্দ হয় খুব।
মন্তব্যসমূহ :0