Malda Salim

মিডিয়ায় বিজেপি, তৃণমূলের বিরুদ্ধে ময়দানে লড়ছে বামপন্থীরাই: সেলিম

রাজ্য পঞ্চায়েত ২০২৩

 পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইতে বামপন্থীরাই আছে, বিজেপি ময়দানে নেই। বুধবার মালদহে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এই মন্তব্য করে বলেছেন, তৃণমূল এবং বিজেপি মিডিয়ার সঙ্গে সেটিং করে এখনও দুই পক্ষের মধ্যে মেরুকরণ প্রচার করছে। পেইড নিউজ আর এবিসিডি সমীক্ষা দেখাচ্ছে। বাস্তবে এরাজ্যের রাজনৈতিক ময়দানে পাতে দেওয়ার মতো একজন নেতাও বিজেপি’র নেই। সেই কারণেই দিল্লি থেকে অমিত শাহের নির্দেশে রাজ্যপালকে কোট প্যান্ট পরিয়ে মাঠে ঘোরানো হচ্ছে। 
  এদিন মালদহের মানিকচকে প্রবল প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে বাম ও কংগ্রেস প্রার্থীদের সমর্থনে মিছিল ও সভা হয়েছে। শঙ্করটোলাঘাটের কাছে রাস্তার ওপরেই প্রথমে সভা হয়, তারপর বিরাট মিছিল শুরু হয় লাল ঝান্ডা এবং কংগ্রেসের তেরঙা ঝান্ডা নিয়ে। মিছিল মথুরাপুর এলাকা পরিক্রমা করে। তার আগে সভায় ভাষণ দেন মহম্মদ সেলিম সহ বাম ও কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ। 
  মালদহে সাংবাদিক বৈঠকও করেছেন মহম্মদ সেলিম। তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, বিজেপি এবং তৃণমূলের কেউই চায়নি এখন পঞ্চায়েত নির্বাচন হোক, লোকসভা নির্বাচনের আগে কোনও ভোট ওরা চায়নি। আমরা বামপন্থীরা পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ঘোষণার দাবি করেছিলাম, শেষপর্যন্ত সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় পঞ্চায়েত ভোট হচ্ছে। এরাজ্যে বিজেপি হাওয়া পাতলা হয়ে গেছে। নির্বাচনে তাদের কোনও নেতা দিল্লি থেকে আসেনি। বিজেপি থেকে অনেক নেতা বিধায়ক তৃণমূলে ফিরে গেছে। ২০১৮ সালে ভোট লুটে তৃণমূলে নেতৃত্ব দেওয়া, দুর্নীতিতে মূল হোতা ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি এখন বিজেপি’কে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। রাজনৈতিক ময়দানে পাতে দেওয়ার মতো একজন নেতাও বিজেপি’র নেই বলেই রাজ্যপালকে মাঠে ঘোরানো হচ্ছে। রাজ্যপালের কাজ কী? রাজভবন কখনো গণতন্ত্রের প্রহরী হয় না। বরং গণতন্ত্র নিধনের কেন্দ্র হিসাবে রাজ্যভবনগুলি কাজ করেছে। রাজ্যের মন্ত্রীসভাকে শপথ গ্রহণ করান রাজ্যপাল। তাহলে রাজ্যপাল আইনশৃঙ্খলা নিয়ে রাস্তায় না ঘুরে কেন মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিবকে ডাকছেন না? শুধু হাতে খড়িতে ডাকলেই হবে?
সেলিম বলেছেন, গণতন্ত্র বাঁচানোর জন্য রাজ্যের মানুষ লড়ছেন। নতুন প্রজন্মের বহু মানুষ এবারের নির্বাচনে বামপন্থীদের পাশে এসেছেন। সন্ত্রাসের বাতাবরণে মানুষ অতিষ্ঠ, তাঁরা সন্ত্রাস মুক্তি চান। লাল ঝান্ডার তলায় তাই গণসমাবেশ ঘটছে। বামফ্রন্টের সঙ্গে কংগ্রেস, আইএসএফ এবং আরও অনেক গোষ্ঠী সংগঠন এক জায়গায় এসেছে তৃণমূল বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়তে। 
তিনি বলেছেন, পুলিশ ভোট প্রচারে বাধা দিয়েছে। তাও লড়াইয়ের ময়দানে বামফ্রন্ট ও সহযোগীরা আছে। স্থানীয়ভাবে অনেক জায়গায় কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা হয়েছে। প্রতিদিন বোমা ফাটছে, মানুষ মারা যাচ্ছে। মমতা ব্যানার্জির মতোই পুলিশের ডিজি বলেছেন, ‘কয়েকটা ছোট ঘটনা’। নির্বাচন কমিশনার আর ডিজি দু’জনেই কানে ব্লু টুথ লাগিয়ে বসে আছেন, কালীঘাট থেকে যা নির্দেশ আসছে তাই বলছেন। পুলিশ প্রশাসন কালীঘাটের বিবৃতি না দিয়ে বলুক, আর রক্তপাত হবে না, বোমা ফাটবে না। বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার করুক। পুলিশ যদি ভূমিকা পালন না করে, রাজ্য নির্বাচন কমিশন যদি অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা না করে তাহলে মানুষকেই সজাগ ও সতর্ক ভূমিকা পালন করতে হবে। সিভিল সোসাইটিকেও দায়িত্ব পালন করতে হবে। শাসকদলের অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে মনোনয়ন জমা দেওয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা সবকিছু মানুষ করেছেন, এখন ভোটের দিন ভোট লুটের চেষ্টা হলে, গণনার দিনেও লুটের চেষ্টা হলে তা রোখার জন্য যা করার করতে হবে। মানুষ রায়কে প্রতিফলিত করতে বদ্ধপরিকর। 
পঞ্চায়েত ভোটের মুখে বিজেপি নেতারাও লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে টাকা বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এই প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, দেশের ভাণ্ডার লুট করে বলছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার! বিজেপি’র তো আদানির ভাণ্ডারের কথা বলা উচিত। কার টাকা কে দেয়? জনগণের করের টাকা থেকে মাত্র পাঁচশো টাকা দিয়ে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বলছে। বেকার ভাতা, বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের ভাতা, সংখ্যালঘুদের স্টাইপেন্ড, এসসি এসটিদের ভাতা, হস্টেল ভাতা বামফ্রন্ট সরকার চালু করেছিল। বামপন্থীরাই এই ধরনের সমাজ কল্যাণ প্রকল্পে টাকা বরাদ্দ করে। দক্ষিণপন্থীরা নয়। মোদী তো রেউড়ি বলেছিল, সার গ্যাস জ্বালানি বিদ্যুতে সব ভরতুকি তুলে দিয়েছে। বামপন্থীরা ক্ষমতায় এলে লুট বন্ধ করবে, অপচয় বন্ধ করবে, সরকারি টাকা যে যা পাচ্ছে তার থেকে বেশি পাবে। 
সভায় সভাপতিত্ব করেন সিপিআই(এম) নেতা মোজাফ্‌ফর হোসেন। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির নেত্রী রত্না ভট্টাচার্য, কংগ্রেস নেতা মোত্তাকিন আলম, জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক ও সিপিআই(এম)’র জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র এবং জেলা পরিষদের প্রার্থী দেবজ্যোতি সিনহা। পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতার উল্লেখ করে অম্বর মিত্র সভায় বলেছেন, ওরা কেন্দ্রীয় বাহিনী যাতে বুথে না থাকে সেটাই চাইছে। কিন্তু বুথে ভোট লুট করতে দেবেন না, লুট করতে এলে তাড়া করে তাড়াবেন। মালদহ জেলার পনেরোটা ব্লকে যে গণনা কেন্দ্র থাকবে সেখানে ২৪ ঘণ্টা পাহারা দিতে হবে। ব্যালট বাক্স রক্ষা করতে হবে। গণতন্ত্রকে পদদলিত করতে যাতে না পারে তার জন্য প্রস্তুত থাকবেন। পাঁচবছর পরে সুযোগ পাচ্ছেন, সেটা মনে রাখবেন।

Comments :0

Login to leave a comment