TAMLUK SAYAN BANERJEE

হলদিয়ার যুবরাই কাজের খোঁজে অন্য রাজ্যে, প্রচারে সরব সায়ন

রাজ্য জেলা লোকসভা ২০২৪

সেলফি প্রচারের ফাঁকে। তমলুক কেন্দ্রে সিপিআই(এম) প্রার্থী গ্রামে শহরে পাচ্ছেন এমনই সাড়া।

অনিন্দ্য হাজরা ও রামশঙ্কর চক্রবর্তী, তমলুক

দিল্লির আনন্দ বিহার স্টেশনের জন্য ট্রেন ছাড়ে হলদিয়া থেকে। তমলুক আর হলদিয়া বা নন্দীগ্রাম থেকে কমবয়সীর সারি সেই ট্রেন ধরার জন্য। দলে দলে পাড়ি দিচ্ছেন দিল্লিতে, কাজের খোঁজে।
নিমতৌড়িতে সিপিআই(এম) পূর্ব মেদিনীপুর জেলা দপ্তরে এই অভিজ্ঞতা জানাচ্ছেন সায়ন ব্যানার্জি। তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে বামফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী সায়ন। বলছেন, ‘‘প্রচারের প্রধান বিষয় বেকারত্ব। হলদিয়া শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলেছিল বামফ্রন্ট সরকার। সেখান থেকে শিল্প বিদায় নিচ্ছে। এখানকারই কমবয়সীদের কাজের খোঁজে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে যেতে হচ্ছে অন্যত্র।’’


তৃণমূলের নেতা, রাজ্যের মন্ত্রীও ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। এখন বিজেপি’তে। সিপিআই(এম) সহ বামপন্থীদের ওপর মারাত্মক সন্ত্রাস চলেছে তাঁরই নেতৃত্বে। তমলুক লোকসভার মধ্যে তিনটি বিধানসভা- হলদিয়া, তমলুক এবং পাঁশকুড়ায় ২০১৬’র বিধানসভা ভোটেও জয়ী হয়েছিল বামপন্থীরা। তারপর থেকে সন্ত্রাসের তীব্রতা আরও বাড়ে। 
আবদুল সোবান সে সময়ে ছিলেন সিপিআই(এম) হলদিয়া গ্রামীণ লোকাল কমিটির সম্পাদক। এখনও সিপিআই(এম) নেতা কর্মীরা মনে করাচ্ছেন যে তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন হলদিয়ার সে সময়ের অ্যাডিশনাল এসপি। সোজা তৃণমূলের মঞ্চে তুলে পতাকা ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মানুষকে দেখানো হয়েছিল সিপিআই(এম) ছেড়ে দিচ্ছে নেতারাই। এমন বহু ঘটনার সাক্ষী তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভাই। ঘটনা হলো আবদুল সোবান আবার বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন। তাঁর কাধে থাকছে লাল পতাকা।
বামপন্থী সমর্থকরা ফিরছেন বিজেপি থেকেও। তৃণমূলকে হারাবে মনে করে গিয়েছিলেন বিজেপি’তে। ভুল ভাঙছে, ফের হাতে তুলে নিচ্ছেন লাল পতাকা।  
সিপিআই(এম) পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহির বক্তব্য, তৃণমূল এবং বিজেপি দু’দলকেই দেখেছেন মানুষ। দেখেছেন দল বদলা বদলি। মানুষের জীবন বদলায়নি। কেবল তমলুকেই অন্তত ৪০ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক। গোটা জেলায় এই সংখ্যা অন্তত ১ লক্ষ। 
এই কেন্দ্রে এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই চায়ের দোকান থেকে হাটে বাজারে ঢুকে পড়ছে। কথা বলছে নানা অংশের সঙ্গে। প্রতিদিনের জীবন যন্ত্রণার নানা কথা উঠেও আসছে।  
বিভিন্ন রাজ্যে এই শ্রমিকরাই কাজ করছেন একেবারেই অসুরক্ষিত অবস্থায়। তমলুক কেন্দ্রে বিজেপি’র প্রার্থী প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলি। তৃণমূলের প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্য। কাজ আর রোজগারের সঙ্কট দু’দলকেই প্রশ্নের মুখে ফেলছে। কেন্দ্রে এবং রাজ্যের দুই সরকার কাজের ব্যবস্থা করেনি, এই ক্ষোভ ধরাও পড়ছে। 
রাজ্যে একের পর এক নিয়োগে দুর্নীতি রয়েছে আলোচনায়। আসছে সিপিআই(এম) প্রার্থীর প্রচারেও। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলির রায়ের প্রসঙ্গ তুলছে বিজেপি। আবার ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের পর এই কথাও এসেছে যে কৃতিত্ব আসলে সেই আইনজীবীদের যাঁরা দিনের পর দিন মামলা লড়েছেন, আন্দোলনে যুক্ত থাকা বিভিন্ন অংশের, কোনও বিচারপতির নয়। আর তৃণমূল প্রার্থীকে ঘিরে প্রশ্ন এবং ক্ষোভ দুই-ই থাকছে তাঁর দলের নীতির জন্য। 
২০২৩’র পঞ্চায়েতের লড়াই সাহস দিয়েছে বামফ্রন্টের কর্মীদের। তার আগে ‘গ্রাম জাগাও চোর তাড়াও’ বা ‘চোর ধর জেল ভর’ স্লোগানে জনতাকে জুড়ে নিয়েছে সিপিআই(এম) গরিব মহিলা আরজুনা বিবিকে জেলে থাকতে হয়েছে কেবল আবাসের একটি ঘরের দাবি তোলার জন্য। 
লোকসভা কেন্দ্রের কয়েকশো বুথে পঞ্চায়েতের সময় থেকে জনতা শক্তি দিচ্ছে সিপিআই(এম)’কে। ভোট লুট চালিয়ে একগুচ্ছ আসনে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে ঠিকই। তবে চক শ্রীকৃষ্ণপুর, সোনামুই, শীতলপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গিরিরচক, শীতলপুর, শ্রীধরপুর, লৌহজং, চনসরপুর বা সুতাহাটার চৈতন্যপুর, মহম্মদপুর, নন্দীগ্রামের শামসাবাদ, দাউদপুর, সরস্বতী বাজার, তেরপেকিয়ার মতো এলাকায় স্পষ্ট প্রভাব লাল পতাকার। তার মধ্যে রয়েছে সংখ্যালঘু প্রধান একাধিক এলাকা।
সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ বলছেন, জনতার পাশে থাকাই সবচেয়ে বড় ভরসা। দেওয়াল লেখা, প্রচার, প্রার্থীকে নিয়ে এলাকায় ঘুরতে বেরলেই মিলছে সাড়া। চলছে লড়াই।

Comments :0

Login to leave a comment