pahalgam attack salim

দুই মৌলবাদী শক্তির ফাঁদ থেকে সাবধান থাকার আহ্বান সেলিমের

রাজ্য

পহেলগামের ঘৃণ্য সন্ত্রাসবাদীদের মতোই আরএসএস-বিজেপি’র আইটি সেল এবং কিছু মিডিয়া দেশবাসীকে ধর্মের নামে ভাগ করার উসকানি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সেই সঙ্গে কঠিন সময়ে দেশবাসীকে সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় করে ঐক্যবদ্ধ থাকার আবেদনও করেছেন। শনিবার মেদিনীপুরে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেছেন, সাম্রাজ্যবাদীদের পরিকল্পনা মতো ভারতকে ধর্মের নামে আফগানিস্তান বা বাংলাদেশ বানাতে দেবেন না। সন্ত্রাসবাদীরা গুলি বন্দুক দিয়ে যা করেছে আইটি সেল এবং কিছু মিডিয়া একই কাজ করছে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক প্রচার করে। সাম্রাজ্যবাদীদের টাকায় মুসলিম মৌলবাদী এবং হিন্দু মৌলবাদীরা একই লাইনে কাজ করছে, ওদের ফাঁদ থেকে সাবধান।
শনিবার সিপিআই(এম)’র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির বৈঠকে যোগ দেন মহম্মদ সেলিম। তার মাঝে সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি বলেছেন, কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রতিবাদে আমরা বামপন্থীরা সারা রাজ্যে বিক্ষোভ মিছিল করছি, ঘটনার পর থেকেই আমরা রাস্তায় আছি। এই কঠিন সময়ে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করতে হয়, কারণ সন্ত্রাসবাদীরা দেশের মানুষের ঐক্যে ফাটল ধরাতে চায়। পাকিস্তানের মাটিতে মার্কিনী সাম্রাজ্যবাদী টাকায় ট্রেনিং দিয়ে সন্ত্রাসবাদী তৈরি করা হয়েছিল আফগানিস্তানে কমিউনিস্টদের খতম করতে। ওরা নাজিবুল্লাহকে ফাঁসি দিয়েছিল। তখন অনেকে হাততালি দিয়েছিল। কিন্তু তখনই আমরা বলেছিলাম দক্ষিণ এশিয়ায় বিপদ ডেকে আনা হচ্ছে। বাংলাদেশেও তাই দেখা যাচ্ছে। আর ভারতের বুকে হিন্দুত্ববাদীরা একই লাইনে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের উসকানি দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে মানুষকে ধর্মের নামে ভাগ করতে পোস্টার দিচ্ছে! সোশাল মিডিয়াতে কাশ্মীর দেখিয়ে কার দোকান থেকে জিনিস কিনবেন, কাকে কাজ দেবেন, কাকে বয়কট করবেন তা নিয়ে ফতোয়া দিচ্ছে! এরা দেশের শত্রু। আমরা এভাবে আমাদের দেশকে আফগানিস্তান্, বাংলাদেশ বানাতে দেবো না। 
পাকিস্তানের উসকানিদাতাদেরও একই পংক্তিতে ফেলে সেলিম বলেছেন, কিছু লোক এপারে আছে, কিছু লোক ওপারেও আছে, যারা মানুষ মারা গেলে ভাষণবাজি করে নিজেদের রাজনীতির রুটি সেঁকে। উসকানি ছেড়ে দুই দেশের সরকার নিজেদের দেশের মানুষের সমস্যার সমাধান করায় মন দিক। 
পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার জন্য মোদী সরকারের ব্যর্থতার দিকে আঙুল তুলে সেলিম বলেছেন, কাশ্মীরের নিরাপত্তার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের, এই ঘটনায় তাদের ব্যর্থতা স্পষ্ট। সেটা দেখা হোক, যাতে আর এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দপ্তরের দায় নেওয়া উচিত। কিন্তু তাদের কোনও স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নেই। এখনও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার কোনও সাড়া শব্দ পাইনি। ছয় বছর আগে পুলওয়ামার ঘটনা কীভাবে হয়েছিল তা তৎকালীন রাজ্যপাল ফাঁস করে দিয়েছেন। 
বিজেপি’র নেতা মন্ত্রীরা যেভাবে পহেলগামের সঙ্গে মুর্শিদাবাদের তুলনা করে ধর্মীয় উসকানি দিচ্ছেন তার নিন্দা করে সেলিম বলেছেন, মুর্শিদাবাদের সঙ্গে পহেলগামের তুলনা নির্বোধের কাজ। এই তুলনা পাকিস্তানকেই সাহায্য করছে। কাশ্মীরে নিরীহ পর্যটকদের মেরেছে সন্ত্রাসবাদীরা। আর মুর্শিদাবাদে তৃণমূল এবং বিজেপি হিন্দু মুসলিম ধর্মের নামে উসকানি দিয়ে দাঙ্গা করেছে। এই সাম্প্রদায়িক উসকানির রাজনীতি করতেই শুভেন্দু অধিকারী এখন সিদ্দিকুল্লা চৌধুরিকে মুসলিম মৌলবাদী বলছেন। কিন্তু নন্দীগ্রামে মানুষ মারার সময়ে তিনিই সিদ্দিকুল্লাকে অভিনন্দন আর কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন। তখন মনে ছিল না? 
সেলিম বলেছেন, সর্বদলীয় বৈঠকে আমাদের পার্টির পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ দাবি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নোটবন্দিতে আতঙ্কবাদ শেষ, সন্ত্রাসবাদীদের টাকা আদান প্রদান বন্ধ বলে দাবি করেছিলেন। কিন্তু পর্যটনের সিজনের শুরুতেই কাশ্মীরে হামলায় নিরীহ পর্যটকদের প্রাণ গেছে, ওখানকার অর্থনীতি তছনছ করে দিতে চায় সন্ত্রাসবাদীরা। ২১-২২ হাজার কোটি টাকার পর্যটন ব্যবসার ওপরে ওখানকার ছোটখাট ব্যবসা করা মানুষের জীবন নির্ভর করে। তাঁরা ওখানে পর্যটকদের বাঁচাতে চেষ্টা করেছেন, প্রাণ দিয়েছেন। এমনকি বিজেপি নেতার পরিবারকেও বাঁচিয়েছেন। বড় বড় কর্পোরেট মালিকরা বিপদের সময়ে প্লেনের ভাড়া বাড়িয়েছেন, আর কাশ্মীরের গরিব অটো রিকশা চালকরা পর্যটকদের সাহায্য করেছেন। গরিব মানুষ ধর্ম জাত দেখে না। বড় ব্যবসায়ীরা ঝোপ বুঝে কোপ মারে।
এদিকে কলকাতায় বিকাশ ভট্টাচার্য সহ আইনজীবীদের ওপরে হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন সেলিম। তিনি বলেছেন, দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগের কারণে আদালতের রায়ে এখানে শিক্ষকদের চাকরি গেছে, তার জন্য রাজ্যজুড়ে তোলপাড় হচ্ছে। লিপস অ্যান্ড বাউন্সে টাকা গেছে। যোগ্য অযোগ্য কে কত মার্কস পেল তার তথ্য আদালতে দিতে বলা হয়েছিল। ক্যাবিনেট আর কালীঘাটের নির্দেশে তা দেয়নি, বরং চাল ও কাঁকড় মিশিয়ে দিয়েছে। অথচ এই দুর্নীতিগ্রস্তরাই কিছু লোককে উসকে দিয়ে গতকাল বিকাশ ভট্টাচার্য সহ আইনজীবীদের ওপরে হামলা করেছে। আইনজীবীরা আদালতে দাঁড়িয়ে পেশাদারি কাজ করেছেন। তাঁদের ওপরে হামলা নিন্দনীয়, সব আদালতে এর নিন্দা হওয়া উচিত।

Comments :0

Login to leave a comment