নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ জুটি ফের প্রমাণ করলেন মণিপুরে শান্তি ফেরাতে তারা চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ। উগ্র হিন্দুত্ববাদী ও স্বৈরাচারী মানসিকতার কারণে তাঁরা মনে করেন পেশি শক্তি আর বন্দুকের জোরে বাঘ ও হরিণকে এক ঘাটে জল খাইয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন। সমস্যার উৎস বা কারণ যাই হোক না কেন তাঁরা নিজেদের শর্ত সব পক্ষকে মানতে বাধ্য করবেন। কিন্তু তেমনটা যে সবক্ষেত্রে হবার নয় সেই শিক্ষা এবার তাদের মণিপুর থেকে গ্রহণ করা উচিত। ক্ষমতার দম্ভ দিয়ে সব কিছুকে অবনত করানো যায় না। সমস্যার গভীরে গিয়ে নিরপেক্ষ জায়গা থেকে সমাধানের রাস্তা খুঁজতে হয়।
হিংসা জর্জরিত মণিপুরে আজকের এই অরাজকতা মোদী-শাহদের আগ্রাসী ক্ষমতা লোভেরই পরিনতি। বিভাজনের রাজনীতির মূল যে ভিত্তির ওপর আরএসএস -বিজেপি দাঁড়িয়ে তার বিষফল মণিপুরকে আজ এই অবস্থায় এনে দাঁড় করিয়েছে। কখনও ধর্মের ভিত্তিতে, কখনও জাতপাতের ভিত্তিতে বিভাজনই বিজেপি-র প্রধান হাতিয়ার। কোথাও মুসলিম বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়িয়ে হিন্দু ভোটের মেরুকরণের চেষ্টা করে, কোথাও দলিত-আদিবাসীদের বিরুদ্ধে বর্ণহিন্দুদের এককাট্টা করে ভোটে ফায়দা তুলতে চায়। মণিপুরে মুসলিম নেই বললেই চলে। মুসলিম বিদ্বেষী সাম্প্রদায়িক রাজনীতি মণিপুরে বিজেপি-কে ভোট ডিভিডেন্ড দেবে না। তাই মণিপুরে অনাদিবাসী বনাম আদিবাসী এবং হিন্দু বনাম খ্রিস্টান বিভাজনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করতে গিয়ে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
মণিপুরে সমতলে হিন্দু মেইতেই গোষ্ঠী সংখ্যাগরিষ্ঠ। আর পার্বত্য অঞ্চলে আদিবাসী খ্রিস্টানরা সংখ্যালঘু। আরএসএস -বিজেপি সুপরিকল্পিতভাবে এই দুই গোষ্ঠীর বিভাজন সৃষ্টি করে সংখ্যাগুরু মেইতেই গোষ্ঠীর প্রতি পক্ষ পাতিত্ব করে যাতে মেরুকরণের ফলে মেইতেই ভোটে ক্ষমতা দখলে রাখতে পারে। এই নোংরা রাজনীতি আজ রাজ্যটাকে আড়াআড়ি দু’ভাগ করে দিয়েছে। একদিকে সমতলে মেইতেল অন্যদিকে পাহাড়ে আদিবাসী কুকি-জো। দু’পক্ষের বিরোধ এমন জায়গায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে একে অন্যের শত্রুতে পরিণত হয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে আদিবাসীরা তাদের এলাকার জন্য পৃথক প্রশাসন দাবি করছে।
মণিপুরের বিজেপি সরকার মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং-য়ের নেতৃত্বে এই বিভাজন তীব্রতর করেছে। পরে দলের মধ্যেই বিভাজন তৈরি হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর অপসারণের দাবি ওঠে। মোদী-শাহরা সরকার পতনের ভয়ে তাকেই মুখ্যমন্ত্রী করে পরিস্থিতি আরও জটিল করেন। অবশেষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে মোদীরা বাধ্য হয় মুখ্যমন্ত্রীকে সরাতে। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও দ্বিতীয় কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করতে না পেরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে সরাসরি মণিপুরকে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। শাহরা ভেবেছিলেন এবার কড়া দাওয়াই দিয়ে শান্তি ফেরাবেন। লুট হওয়া ছয় সহস্রাধিক আগ্নেয়াস্ত্র সরকারের ঘরে জমা দেবার নির্দেশ দেওয়া হলেও ফিরেছে মাত্র এক হাজার। শাহ নির্দেশ দেন রাজ্যের সর্বত্র বাস চলাচল করবে। বিপুল নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে যাত্রীশূন্য বাস চালাতে গেলে প্রবল বাধা আসে আদিবাসীদের তরফে। ফের অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হয় এক জনের। আহত প্রায় ৫০ জন। নতুন করে ডাক দেওয়া হয় অনির্দিষ্টকালের বন্ধ। কেন্দ্রের বাহুবলী শাসক বোঝে না ক্ষমতা দিয়ে সব হয় না।
Editorial
শাহ ফের ব্যর্থ মণিপুরে

×
Comments :0