MID DAY MEAL

ভোট শেষ, খতম মিড ডে মিলের বিশেষ তহবিলও

জেলা

MID DAY MEAL

মলয়কান্তি মণ্ডল, রানিগঞ্জ

পঞ্চায়েত ভোটের মুখে চার মাসের জন্য মিড-ডে মিলে পড়ুয়াদের পাতে মাংস, ফল, ডিম চালু করেছিল রাজ্য সরকার। জানুয়ারি থেকে সপ্তাহে প্রতি পড়ুয়া পিছু ২০ টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ করে পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার জোর প্রচারও চালিয়েছিল। কিন্তু এখন রাজ্য সরকার তাদেরই তৈরি সেই 'স্পেশাল নিউট্রিশন ফান্ডে’ বা বিশেষ পুষ্টি তহবিলে টাকা দেওয়া বন্ধ করেছে। ফলে অর্থের অভাবে পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এ রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা। খাবারের মানের সঙ্গে আপস করতে হচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষকে।

সাধারণত মিড-ডে মিলে সপ্তাহে দু'দিন ডিম পাওয়ার কথা পড়ুয়াদের। জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় সেটাও দিতে পারছে না স্কুলগুলি। মুরগির মাংস, ডিম তো দূর, পুষ্টিকর অন্য খাবারও জোগানো যাচ্ছে না। বাজার অগ্নিমূল্য হওয়ায় ফলে মিড-ডে মিল খাতে সরকারি বরাদ্দ না বাড়ায় ছাত্রছাত্রীদের মধ্যাহ্নভোজনে সুষম আহারের জোগান দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। 

মিড-ডে মিল প্রকল্পে প্রাথমিক স্তরের ছাত্রপিছু প্রতিদিন ৫ টাকা ৪৫ পয়সা ও উচ্চ প্রাথমিকে (অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত) ৮ টাকা ১৭ পয়সা বরাদ্দ। রাজ্য দেয় ৪০ ভাগ অর্থ, ৬০ ভাগ দেয় কেন্দ্র।

ভারত সরকারের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক ও জাতীয় প্রকল্পের পুষ্টি সহায়তার সংজ্ঞায় অনুযায়ী প্রাথমিক শ্রেণির শিশুর জন্য দৈনিক অন্তত ১২ গ্রাম ও ৪৫০ ক্যালরি আর উচ্চ প্রাথমিক শ্রেণির জন্য দৈনিক ২০ গ্রাম ও ৭০০ ক্যালরি ধার্য করতে হবে। এখনকার বাজারমূল্যে আনাজপাতি, মশলা, জ্বালানি  (রান্নার গ্যাস অথবা কাঠকয়লা) সব জিনিস কিনে ছাত্রপিছু মাত্র ৫ টাকা ৪৫ পয়সায় যথাযথ পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া সম্ভব কিভাবে সেই প্রশ্ন শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত সব অংশের।

রানিগঞ্জের বেলুনিয়া গ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুকান্ত দাসের প্রশ্ন, ‘‘এখন বাজারে একটি ডিমের দাম ৫ টাকা ৫০ পয়সা। তাহলে ছাত্রছাত্রীদের সপ্তাহে দু’দিন ডিম কিভাবে খাওয়াবো?’’ 

সিহারশোল স্কুলের শিক্ষক নির্মাল্য সেনগুপ্ত বলছেন, ‘‘প্রকল্পের টাকায় কুলোয় না স্কুলের শিক্ষক ও এলাকার মানুষের সহায়তায় মাঝে মধ্যে স্কুলের পড়ুয়াদের মিড-ডে মিলে ডিম, মুরগির মাংস খাওয়ানো হয়। চিকেন খাওয়ানো হলে সেইদিনগুলিতে অনেক বেশি পড়ুয়া মিড-ডে মিল খায়।’’ 

বেশিরভাগ স্কুলের শিক্ষকদের ক্ষোভ, মিড-ডে মিল প্রকল্পের বরাদ্দ অপর্যাপ্ত টাকাও  নিয়মিত আসে না। ফলে সবজি ও মশলাপাতির দোকানে দীর্ঘকাল ধার-বাকি রাখতে হয়। অনেক দোকানি ধার রাখতে গররাজি হন। 

শিক্ষকরা বলেন, একপেট খিদে নিয়ে শিশুদের পড়ার বিষয় মাথায় রাখা সহজ নয়। ২০০৪ সালে এ রাজ্যে মিড-ডে মিল প্রকল্প শুরু হয়। তারপর প্রাথমিক স্তরে ছাত্রছাত্রীদের স্কুলছুটের সংখ্যা কমেছে। প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বজনীন করতে মিড-ডে মিলের বিকল্প নেই।

প্রাথমিক শিক্ষকদের সংগঠন এবিপিটিএ'র পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদিক মধুমিতা রায় বলছেন, ‘‘মিড-ডে মিল প্রকল্পে প্রাথমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রে মাথাপিছু ১০ টাকা ও উচ্চ প্রাথমিকে মাথাপিছু ১৫ টাকা করে বরাদ্দ করা দরকার’’ তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘এই বাজারে এত কম টাকায় সুষম আহার তুলে দেওয়া বাস্তবে সম্ভব নয় জেনেও দুই সরকারই উদাসীন রয়েছে।’’

‘নতুন ভারত’ বা ‘বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতি’ থেকে ‘এগিয়ে বাংলা’- নানা শব্দের নানা প্রচার হররোজ ধাওয়া করছে আমজনতাকে। প্রভাবশালীদের কারও বাড়িতে এসকেলাটের, কারও পরিচিতের বাড়িতে টাকা গুনতে আনতে হয় যন্ত্রও। অথচ সেই ভারতেই টাকার ঘাটতির কারণেই ছাত্রছাত্রীদের পুষ্টিকর খাবারে টান পড়েছে। মিড-ডে মিল চালানোটাই এখন স্কুলের শিক্ষকদের কাছে বড়ো চ্যালেঞ্জ।

গ্রাফিক্স: মনীষ দেব

Comments :0

Login to leave a comment