Tarigami Kashmir

বিভাজন বিরোধী দলগুলি সরকার গঠনে ঐক্যবদ্ধ হবে: তারিগামি

জাতীয়

গণশক্তি: জম্মু-কাশ্মীরের নির্বাচন এবারে এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?

তারিগামি: সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যকে দুই ভাগ করে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার পরে এটাই প্রথম বিধানসভা নির্বাচন। এই কারণে এই নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচন হচ্ছে এমন এক অঞ্চলে যেখানের মানুষ সাংবিধানিক গ্যারান্টির ক্ষয় দেখেছে। সেখানে এই ভোট তাই গণতন্ত্রের পরীক্ষাও। জম্মু-কাশ্মীরের মানুষ তাদের আওয়াজ বুলন্দ করতে চান এবং স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে চান। আগামী দিনে এই অঞ্চল কীভাবে পরিচালনা করা হবে, তার মুখ্য নির্ধারক এই নির্বাচন। গণতান্ত্রিক অধিকার পুণঃপ্রতিষ্ঠা এবং নাগরিক স্বাধীনতার জন্য মানুষের গভীর আকাঙ্খা রয়েছে।

গণশক্তি: ইন্ডিয়া মঞ্চ কি জম্মু-কাশ্মীরে সরকার গড়তে পারবে? বিজেপি বিরোধী যে দলগুলি ভোটের সময়ে ঐক্যবদ্ধ হয়নি, সরকার গঠনের সময়ে তারা কি সঙ্গে আসতে পারে?

তারিগামি: ইন্ডিয়া মঞ্চ হলো ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র আর অন্তর্ভূক্তিমূলক ভাবনার উপর তৈরি একটি মঞ্চ। আমি বিশ্বাস করি জম্মু-কাশ্মীরে ইন্ডিয়া মঞ্চের সরকার গঠনের জোরালো সম্ভাবনা আছে। বিজেপি-বিরোধী দলগুলি সকলে মিলে নির্বাচনের আগে হয়তো ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি। কিন্তু সরকার গঠনের সময়ের বাধ্যবাধকতা এই কাজে সহযোগিতা করবে। এই দলগুলি বিজেপি’র বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে এবং সংবিধানের মর্মবস্তুকে রক্ষা করতে ও মানুষের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে।

গণশক্তি: প্রায় চার দশক পরে ভোটে লড়ছে জামাত, যদিও নির্দল হিসেবে। এই বিষয়ে আপনার অভিমত?

তারিগামি: কয়েক দশক বাদে এই নির্বাচনে জামাতের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। কারণ দশকের পর দশক জামাত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে পাপ কাজ বলে চিহ্নিত করেছে, তারা কেন হঠাৎ নির্বাচনে অংশ নিল, তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। বছরের পর বছর তারা নির্বাচনের নিন্দা করেছে এবং মানুষকে বলেছে নির্বাচন থেকে দূরে থাকতে, তারপরেও তারা এই বার সেই নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢুকেছে যাকে তারা অশুভ কাজ বলতো। এই হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তন নিয়ে গভীর পর্যালোচনার প্রয়োজন আছে। তাদের জবাবদিহি করতে হবে কেন তারা মানুষকে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে, যা গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে এবং গোটা কাশ্মীরের কবরস্থানগুলিকে ভরিয়ে তুলেছে। আমি বিশ্বাস করি, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং দায়বদ্ধতা গুরুত্বপূর্ণ। যারা হিংসা এবং বিশৃঙ্খলা তৈরিতে ভূমিকা নিয়েছে, তারা নির্বাচনী লড়াইয়ে নামলেই অতীতটাকে মুছে ফেলতে পারে না। অতীতের ভূমিকা সম্পর্কে জনতার কাছে জবাবদিহি করার জন্য তারা বাধ্য।  

গণশক্তি: লোকসভা ভোটে ইঞ্জিনিয়ার রাশিদ জয়ী হয়েছেন, এই ভোটে তাঁর দল কী প্রভাব ফেলতে পারে? তিনি বিজেপি’র হয়ে কাজ করছেন বলে অভিযোগ আছে। আপনার কী ধারনা?

তারিগামি: ইঞ্জিনিয়ার রাশিদকে একটি নির্দিষ্ট ধারার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে এবং তাঁর আগের নির্বাচনী সাফল্যে দেখা যাচ্ছে কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় তাঁর প্রভাব আছে। যদিও, এই নির্বাচনে তাঁর দলের প্রভাব নির্ভর করবে কীভাবে মানুষ তাঁর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে উপলব্ধি করছে তার উপরে। তিনি বিজেপি’র স্বার্থে কাজ করছেন এই অভিযোগের সমালোচনামূলকভাবে অনুসন্ধান প্রয়োজন। অতীতেও বিজেপি তাদের হয়ে কাজ করেছে এমন ব্যক্তিদের ব্যবহার করেছে। যদি কেউ বিজেপি’র অ্যাজেন্ডা কার্যকরী করতে পরোক্ষেও কাজ করে সেটা উদ্বেগের বিষয়। রাশিদের উচিৎ নিজের অবস্থান স্পষ্ট করা। কারণ বিজেপি-র নীতি জম্মু-কাশ্মীরের জন্য ক্ষতিকর। যে কোনও শক্তি, যারা সরাসরি বা অন্তরালে বিজেপি-র সঙ্গে সমঝোতা করে চলছে তারা এখানের মানুষের প্রকৃত স্বার্থ রক্ষায় কোনও কাজ করছে না।

গণশক্তি: কুলগাম কেন্দ্রে এবারেও আপনি সিপিআই(এম) প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেন। কুলগামের নির্বাচনকে কীভাবে দেখছেন?

তারিগামি: কুলগাম সবসমই রাজনৈতিকভাবে সচেতন কেন্দ্র যেখানে বামপন্থী এবং প্রগতিশীল চিন্তার শক্তিশালী ঐতিহ্য রয়েছে। এখানের মানুষের মধ্যে বেকারি, গত দশ বছরের অনুন্নয়ন নিয়ে ক্ষোভ, রাজ্যের অধিকার ফেরানো ও সাংবিধানিক অধিকারের দাবি আছে। কুলগামের নির্বাচন শুধুমাত্র স্থানীয় শাসন নিয়ে নয়, বরং যুবদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করা, পরিকাঠামোর উন্নয়ন এবং সামাজিক ন্যায় সুনিশ্চিত করার জন্য। সিপিআই (এম)’র প্রতিনিধি হিসেবে সবসময় আমার লক্ষ্য থেকেছে মানুষের স্বার্থবাহী নীতির প্রতি, এবং সেই কারণেই আমি আত্মবিশ্বাসী যে কুলগামের মানুষ বিভাজনের রাজনীতির বদলে তাদের কল্যাণকে প্রাধান্য দেবে এমন রাজনীতিকেই বিচক্ষণতার সঙ্গে বেছে নেবেন।
 

Comments :0

Login to leave a comment