Md Salim press conference Kolkata

তৃণমূল এখন রক্ষণাত্মক কর্মসূচি নিচ্ছে: সেলিম

রাজ্য

‘গ্রাম জাগাও- চোর তাড়াও’ কর্মসূচি থেকে গণসংগ্রহ— মানুষ শুধু পাশে দাঁড়াচ্ছেন তাই নয়, সিপিআই(এম) নেতা, কর্মীদের কাছে আরজি জানাচ্ছেন আপনার লড়ুন, রাজ্যের এই শাসন থেকে পরিত্রাণ চাই। উলটোদিকে ‘দিদি’র কবচ, মাদুলি নিয়ে তৃণমূল যেখানে যাচ্ছে মানুষের তাড়া খাচ্ছে। পরিস্থিতির এই বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরেই সোমবার সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, পরিস্থিতি এমনই যে তৃণমূলকে এখন আর আগ্রাসী নয়, রক্ষণাত্মক কর্মসূচি নিতে হচ্ছে, গত এক দশকে এই প্রথম। ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ আসলে রক্ষণাত্মক কর্মসূচি। 
   রাজ্যজুড়ে ‘দিদির দূত’রা প্রায় প্রতিদিনই জনরোষের মুখে পড়ছেন। গ্রামে গ্রামে বিক্ষোভ। সোমবারই মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘এটা আমারই প্রকল্প। আপনার সমস্যা থাকলে নিশ্চয়ই বলবেন। সমস্যা তো থাকেই। তবে কারও কথা শুনে কুৎসা-অপপ্রচারে কান দেবেন না।’ আর এদিন দুপুরেই সিপিআই(এম) রাজ্য দপ্তরে সাংবাদিক বৈঠকে মহম্মদ সেলিম বলেন, মিডিয়া বাইনারির প্রচারেই ব্যস্ত। কিন্তু বাস্তবতা হলো গত এক দশকে এই প্রথম তৃণমূলকে এত রক্ষণাত্মক কর্মসূচি নিতে হলো। সাধারণভাবে মমতা ব্যানার্জি বিশ্বাস করেন আক্রমণই রক্ষণের সেরা কৌশল। চিট ফান্ড কেলেঙ্কারির সময়েও সেই পথেই হেঁটে ‘চোরের মায়ের বড় গলা’র মতো ‘আমরা সবাই চোর’ বলে মিছিল করেছিলেন, বলে দিয়েছিলেন শ্যামল সেন কমিশন করেছি, ৫৫০ কোটির তহবিল করেছি, সবাই টাকা ফেরত পাবে। কিন্তু গ্রামবাংলার পরিস্থিতি এখন এমনই যে এবার আর আগ্রাসী কর্মসূচি নয়, ‘সুরক্ষা কবচ’ নিয়ে নামাতে হচ্ছে দলীয় বাহিনীকে। কবচ, মাদুলি নিয়েও রেহাই মিলছে না, তাড়া খেতে হচ্ছে, দুর্নীতির জবাব চাইছেন মানুষ, প্রশ্ন করছেন মানুষ। আমি চাই ‘সুরক্ষা কবচ’ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পাড়ায় পাড়ায় যান, পারলে নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে একবার ঘুরে আসুন। 
  মানুষের ক্ষোভের মুখে শাসক দলের নেতা, কর্মীরা তখন রাজ্যজুড়ে চলা সিপিআই(এম)’র গণসংগ্রহ কর্মসূচিতে অভূতপূর্ব সাড়ার কথা উল্লেখ করেই এদিন সাংবাদিক বৈঠকে মহম্মদ সেলিম বলেন, গত বছরের নভেম্বর থেকে ‘গ্রাম জাগাও-চোর তাড়াও’ কর্মসূচি চলেছে জেলায় জেলায়। মিডিয়ায় ধরা না পড়লেও প্রতিটি মিছিলে, কর্মসূচিতে মানুষের সাড়া দেখা গেছে। এখন গণসংগ্রহ কর্মসূচি চলছে। পার্টি নেতৃত্বও লাল শালু বা কুপন বা বালতি হাতে অর্থ সংগ্রহ কর্মসূচিতে শামিল হয়েছেন। অভিজ্ঞতা বলছে, মানুষ সোৎসাহে সাহায্য করছেন আমাদের, বলছেন, আপনরা লড়ুন, আমরা এই অবস্থার পরিত্রাণ চাই। গ্রামবাংলার এই পরিস্থিতি মিডিয়া দেখতে না পারলেও বাংলার জনগণ দেখতে পাচ্ছেন। যে সিপিআই(এম)’কে এতদিন খালি চোখে দেখতে পেতেন না, এখন প্রতিদিন দলের ছোট, বড় নেতা থেকে মুখ্যমন্ত্রীকেও বামেদের নাম বলতে হচ্ছে। 
  মহম্মদ সেলিম এদিন বলেন, আমরা পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছি। যে ভাবনা দিয়ে বিকেন্দ্রীকরণ শুরু হয়েছিল, গ্রামসভা, ওয়ার্ড কমিটির কথা বলেছিলাম আমরা, ‘মানুষের হাতে পঞ্চায়েত’ ফিরিয়ে দেওয়ার সেই লড়াইয়ের প্রস্তুতি চালাচ্ছি আমরা। আবাস যোজনার যে বিক্ষোভ চলছে তা তো তৃণমূলের এই দুর্নীতি-দুষ্কৃতীরাজের যে অর্থনীতি, তারই ফসল। লুট করে পঞ্চায়েত দখল করো, তারপর সেই পঞ্চায়েত ব্যবহার করে লুটকে প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা দাও। আবাস যোজনার ক্ষেত্রে তো গ্রামসভা করে খসড়া তালিকা প্রকাশ করার কথা ছিল, কী হয়েছে? বালি পাচার থেকে গোরু, কয়লা, তোলাবাজি, চালচুরি, মিড ডে মিলের খাবার চুরি, কার্যত দুর্নীতির শাসন তৈরি হয়েছে। ক্ষোভও বাড়ছে পালটা। তাই কবচ, মাদুলি, সুরক্ষাকবচ। মোঘল-রাজপুত জমানাতেও এই কবচের দরকার হত, যার মূল কথা হলো আমি তোমাকে আঘাত করব কিন্তু তুমি আমায় আঘাত করতে পারবে না। তার মানে চুরি করবে, জোচ্চুরি করবে, গোরু পাচার করবে, মানুষের ঘরের টাকা কেড়ে নেবে, কিন্তু কিছু বলা যাবে না, ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ আছে। কিন্তু তাতেও তো গ্রামে গ্রামে রেহাই মিলছে না। এবার সাঁজোয়া গাড়ি নিয়ে দূতদের যেতে হবে গ্রামে।
  এদিন সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন কংগ্রেসের ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রার পশ্চিমবঙ্গের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অধীর চৌধুরি যে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তাতে কি সিপিআই(এম) সাড়া দেবে? সেলিম বলেন, আমাকে যেমন চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তেমনি বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমরা পার্টিতে আলোচনা করব। আগামীকালই রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সাপ্তাহিক বৈঠক আছে, আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কংগ্রেসের এই কর্মসূচিতে ভালো ভিড় হচ্ছে, সাংবাদিকরা তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মহম্মদ সেলিম বলেন, এটা তো ভালো। সাফল্য কামনা করছি। বিজেপি-র যে বিভাজনের রাজনীতি, ভারতের ধারণাকেই ভাঙার চেষ্টা, তার বিরুদ্ধে ভালোবাসার কথা, ঐক্যের কথা, শান্তির কথা বলা হচ্ছে। সঙ্গে এরাজ্যের দাবিগুলিকেও তাঁরা যুক্ত করছে। গণতন্ত্র রক্ষার প্রশ্নে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রক্ষার লড়াইয়ে, বিজেপি-তৃণমূলের বিরুদ্ধে যারাই রাস্তাই নামবে, আমাদের তাতে সমর্থন রয়েছে। সেই সব মানুষের ঐক্য চাই আমরা। বিজেপি-আরএসএস-র মতো শক্তি, তৃণমূলের মতো শক্তির বিরুদ্ধে, যারা মুখ ফুটে কথা বলতে চাইছে তাঁদের সবার পাশে থাকব আমরা, তাঁদের সবার ঐক্য চাই। 
   একইসঙ্গে বারেবারে মিডিয়া মমতা ব্যানার্জিকে বিজেপি-বিরোধী শক্তি হিসেবে দেখাতে চাইছে পরিকল্পিতভাবে সেকথা উল্লেখ করেই মহম্মদ সেলিম বলেন, শিবসেনা, আকালি দল আর তারপর তৃণমূল, এই তো ছিল সেই সময় এনডিএ সরকারে। তবে তৃণমূলের মতো ধারাবাহিক শরিক খুব কম পেয়েছে বিজেপি। মধু তো নিশ্চয় আছে। তৃণমূলের এমন একটা কোনও কাজ, নীতি, কর্মসুচি দেখান যা আরএসএস-র দর্শন, সংস্কৃতির পরিপন্থী। আরএসএস-র হিন্দুত্বের ধারণাকে বরং পুষ্ট করে ওঁর কাজকর্ম, কথাবার্তা।
   অমর্ত্য সেনের সাম্প্রতিক বক্তব্য নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে মহম্মদ সেলিম বলেন, চিট ফান্ডের সময় থেকে যেটা শুরু হয়েছিল যে সব খবরই মমতা-ময়ী করতে হবে সেই প্রবণতা এখনও যেন চলছে। সাংবাদিকরা নির্দিষ্টভাবে জিজ্ঞেস করেছেন, উনি উত্তর দিয়েছেন। ‘এবিলিটি’ আর ‘ক্যাপাবিলিটি’র মধ্যে ফারাক আছে, অর্মত্য সেন তা জানেন। সব মানুষের সম্ভাবনা থাকে, তবে সবাই নিজেকে সেই জায়গায় নিজে যেতে পারেন না। এবিলিটি আর ক্যাপাবিলিটির মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়ায় অজ্ঞতা, অহংবোধ, ঔদ্ধত্য। অমর্ত্য সেন পরিষ্কার বলেছেন, অনেকেরই সম্ভাবনা আছে, ওঁরও আছে। সঙ্গে ‘কিন্তু’ বলেও বাক্য বলেছেন। 
  মুখ্যমন্ত্রী মেঘালয়ের ভোটেও প্রচারে যাবেন বলেছেন-এই নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে সেলিম বলেন, সে তো যাবেনই। ত্রিপুরা থেকে গোয়া, মেঘালয়, বোঝাই তো গেছে বিজেপি-র সহায়ক শক্তি হতেই গেছে। আর অনুব্রত গ্রেপ্তার হওয়ার পরে এখন গোরু পাচারের নতুন রুট উত্তরবঙ্গ হয়ে মেঘালয়। ওখানে যাকে দায়িত্ব দিয়েছে, সেও গোরু পাচারের কারবারের লোক। সঠিক তদন্ত হলে সব সামনে আসবে।

Comments :0

Login to leave a comment