Saline Death Case

স্যালাইন শুধুই স্যালাইন নয়

ফিচার পাতা

ডাঃ ফুয়াদ হালিম 

মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে সম্প্রতি জাল স্যালাইনে প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। অসুস্থ হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন প্রসূতি। আবার সেই ঘটনার প্রতিবাদে, রাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্র, যুব, মহিলাদের উপর পুলিশ লাঠি চালিয়েছে সেই মেদিনীপুরেই। কলকাতাতেও এর প্রতিবাদে মিছিল করতে বাধা দিয়েছে পুলিশ। সভা করার জন্য স্থায়ী মঞ্চ তৈরিও করতে দেওয়া হয়নি। অথচ প্রতিবাদ করা স্বাধীন দেশে নাগরিকদের অধিকার। সংবিধানেও তার অধিকার স্বীকৃত। তাহলে রাজ্যের সরকার বাধা দিতে চাইছে কেন? 

এই ক্ষেত্রে প্রথমেই একটি প্রসঙ্গ উল্লেখের দাবি রাখে। ইলেক্টোরাল বন্ড চালু করেছে বিজেপি সরকার। সেই বন্ডে টাকা দিয়েছে অনেক ওষুধ তৈরির সংস্থাও। আর দেশে সেই ইলেক্টোরাল বন্ড মারফত নির্বাচন করা, দল চালানোর জন্য টাকা যারা তুলেছে, তৃণমূল কংগ্রেস তাদের মধ্যে সামনের সারিতে। প্রচুর টাকা তারা ইলেক্টোরাল বন্ড থেকে পেয়েছে। এখনও পর্যন্ত যে তথ্য এই সম্পর্কে প্রকাশিত হয়েছে, তার ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে ৩৭টি ওষুধ সংস্থা এবং স্বাস্থ্য সংস্থা প্রায় হাজার কোটি টাকার বন্ড কিনেছে। রাজনৈতিক দল এবং ওষুধ কোম্পানিগুলির স্বার্থ জুড়ে গেছে যেভাবে হোক ক্ষমতায় টিকে থাকার উপর। অথচ সাধারণ মানুষের ওষুধ পাওয়া, চিকিৎসা পাওয়ায় রাষ্ট্রের ভূমিকা আছে। এটি তাঁর সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার। কিন্তু আমাদের রাজ্যে, দেশে তা হচ্ছে না। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ঘটনা তার একটি প্রমাণ।

বিষাক্ত সেই স্যালাইন এবং পশ্চিমবঙ্গের অবস্থার বিষয়ে আসার আগে আর একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। প্রসূতিদের প্রতি যত্ন, তাঁদের স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেওয়ার বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ পিছিয়ে পড়ছে। গত কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গে গোটা দেশের তুলনায় প্রসূতি মৃত্যুর হার বাড়ছে। ওষুধের বিষক্রিয়া, জাল ওষুধ, অপরিণত গর্ভ ধারণ, সরকারি ক্ষেত্রের হাসপাতালগুলির বেহাল পরিকাঠামো ইত্যাদি কারণ এর পেছনে রয়েছে।  যেমন ২০১৭-২০১৯, এই সময়ে ভারতে প্রতি এক লক্ষে ১০৩ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। ঐ সময়ে পশ্চিমবঙ্গে সেই হার ছিল ১০৯। আবার ২০১৮-২০২০ সালে দেশে তা ছিল ৯৭, সেখানে এই রাজ্যে ছিল ১০৩। অথচ ২০০৭-২০০৯-এর হিসাব ধরলে দেশে প্রতি এক লক্ষে তখন এই হার ছিল ২১২,পশ্চিমবঙ্গে ছিল ১৪৫। অর্থাৎ দেশের তুলনায় রাজ্যে কম ছিল। কিন্তু সম্প্রতি এই রাজ্যে প্রসূতি মৃত্যু বেড়েছে দেখা যাচ্ছে। এর কারণ হিসাবে বিশেষজ্ঞরা চিকিৎসার পরিকাঠামোকে দায়ী করছেন। তার মধ্যে জাল ওষুধ যেমন আছে তেমনই রয়েছে হাসপাতালগুলির সংক্রমিত পরিবেশ।

মেদিনীপুরের ঘটনাকে এই বাস্তবতার ভিত্তিতে বিচার করতে হবে।

মেদিনীপুরের সরকারি সেই হাসপাতালে নিশ্চিতভাবেই ওই বিতর্কিত স্যালাইনের গুণমান বজায় ছিল না। পশ্চিমবঙ্গ ফার্মসিউটিক্যালের উৎপাদন ক্ষেত্রে অনুসন্ধান চালিয়ে সেই রিপোর্টই দিয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ টিম। তার ভিত্তিতে উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তার পরেও রমরম করে চলেছে ওই সংস্থার রিঙ্গার ল্যাকটেট। কি রহস্য আছে এর পেছনে- সেই প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক এবং তা উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালসের এই স্যালাইন ঘিরে গত মার্চ থেকে অভিযোগ জমা পড়ছে। অন্তত ২৭টি অভিযোগ জমা পড়েছে। ১৬ বার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। প্রতিবারই দেখা গিয়েছে এই সংস্থার রিঙ্গার্স ল্যাকটেট স্যালাইন শরীরে দেওয়ার উপযুক্ত নয়। তবু এই স্যালাইন চলেছে অপরাধচক্রের দাপটে। তাদের বাঁচাতেই দোষ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসকদের ওপর। তিন বলেন, বিষয়টি কেবল একটি স্যালাইন বা একটি হাসপাতালের নয়। সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থায় বহু জায়গায় এমন নিম্নমানের ওষুধ সরবরাহ চলছে। পিছনে মদত রয়েছে। আন্দোলন জারি থাকবে।

জাল স্যালাইন কারবারীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সাসপেন্ড করেছে রাজ্য প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী নিজে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা করেছেন। দায়ের হয়েছে এফআইআর। সাসপেন্ড করা হয়েছে এমন চিকিৎসককেও অপারেশন থিয়েটারে যিনি ছিলেনই না। মেদিনীপুর মেডিক্যালে জাল স্যালাইনকাণ্ডেও দোষী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দোষ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে চিকিৎসকদের ওপর। কিন্তু যে ড্রাগ কন্ট্রোলে ওষুধের গুণমান পরীক্ষা হওয়ার কথা, সেখানে রয়েছে শূন্যপদ। পদ পূরণ হয় না। যথেচ্ছ অবহেলা সরকারের, ওষুধের মান পরীক্ষায়। দায়িত্ব কার? সরকারের, স্বাস্থ্য মন্ত্রীর।

স্যালাইন ও ওষুধের গুণমাণ নিয়ে সন্দেহ আগে থেকেই হয়েছিল কর্নাটক স্বাস্থ্য দপ্তরের। এরপরেই সে রাজ্যের বেল্লারিতে পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালের তৈরি অত্যন্ত নিম্নমানের স্যালাইনে মর্মান্তিকভাবে ছ’ প্রসূতি মৃত্যুর পর আরও নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল কর্নাটক সরকার। গত বছর ৯ নভেম্বর কর্নাটকের বিল্লারিতে সেই বিষাক্ত স্যালাইনকাণ্ড ঘটে। তাতে মর্মান্তিকভাবে প্রথমে চার জন এবং পরে আরও দু’জনের মৃত্যু হয়। একটি তদন্ত কমিটি গড়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করে কর্নাটক সরকার। রাজীব গান্ধী ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্স ঐ ঘটনার তদন্ত শুরু করে কর্নাটক সরকারের নির্দেশে। তারা ঐ স্যালাইনকে অত্যন্ত নিম্নমানের  এবং নিম্নমানের স্যালাইনেই অতগুলি মৃত্যু হয়েছে বলে রিপোর্ট দেয়। সে রাজ্যের সরকারের কাছ থেকে অভিযোগ যায় কেন্দ্রীয় স্তরে সিডিএসসিও বা সেন্ট্রাল ড্রাগ স্ট্যানডার্ড কনট্রোল অর্গানাইজেশনের কাছে। ওই স্যালাইনের নির্মাতা ছিল পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল। এরপর গত ৩ ডিসেম্বর সিডিএসসিও- হেড কোয়ার্টার্সের পক্ষ থেকে একটি চিঠি পৌছায় সিডিএসসিও পূর্বাঞ্চল দপ্তরে। এই চিঠির ভিত্তিতে পরবর্তী ৩ দিন ধরে উত্তর দিনাজপুরে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালস সংস্থার চোপড়া ইউনিটে কমপাউন্ড সোডিয়াম ল্যাকটেট ইনজেকশন উৎপাদন ক্ষেত্রে তদন্ত বা অনুসন্ধান চলে। 

ফরিস্তা বাণিজ্য প্রাইভেট লিমিটেডের ইউনিট পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালের ওষুধ উৎপাদন ও মজুতকরণ স্থানে এই তদন্ত বা অনুসন্ধান কার্য চালান সিডিএসসিও ইস্টার্ন জোনের ড্রাগ ইন্সপেক্টর ডাঃ নগেন্দ্র কুমার, শিলিগুড়ি আরডিও ড্রাগ ইন্সপেক্টর শান্তনু প্রসাদ দত্ত, উত্তর দিনাজপুর জেলার ড্রাগ ইন্সপেক্টর মুতাহার শেখ, সিডিএসসিও ইস্টার্ন জোনের এডিসি (ওয়ান) অশোক কুমার, অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর অব ড্রাগ কন্ট্রোল সঞ্জীব সামন্ত। শুধু তাই নয়, একই সঙ্গে কর্নাটক সরকারের ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগের ৬ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট ড্রাগ কন্ট্রোলার এই অনুসন্ধান কাজে শামিল ছিলেন। এছাড়াও তদন্তের সময়ে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগের বহু আধিকারিক উপস্থিত ছিলেন তদন্তে।

এই তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের ১০ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল-কে সমস্ত উৎপাদনমূলক কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশিকা জারি হয় ডেপুটি ডিরেক্টর অব ড্রাগ কন্ট্রোলের তরফে। জানা গেছে এই স্যালাইনের মান নিয়ে ২৭টি অভিযোগ পেয়েছিল কর্নাটক সরকার যা নথিভুক্ত করা হয়েছে। তথ্য বলছে এর মধ্যে ২৬টি অভিযোগই এসেছে ২০২৩ সালের ১০ জুলাইয়ের পর থেকে। উল্লেখ্য, কর্নাটকের বহু জায়গায় স্যালাইন সরবরাহ করেছিল পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল। অভিযোগগুলির ভিত্তিতে ১৬টির ক্ষেত্রে স্যাম্পেল নিয়ে পরীক্ষা করে দেখা গেছে জীবাণুনাশের বিষয়ে সেগুলি কখনোই উন্নত মানের নয় ( এনএসকিউ= নট অব স্ট্যান্ডার্ড কোয়ালিটি)। এবং এটি বেশ উদ্বেগজনক হয়ে দেখা দিল। 

অনুসন্ধানকারী টিমের বক্তব্যে জানা গেছে, সংস্থার উৎপাদন রেজিস্ট্রারে ব্যাচ ম্যানুফ্যাকচারিং রেকর্ড (বিএমআর)-এ দেখা গেল মেটেরিয়ালস হিসাবে লেখা রয়েছে ইউএসপি সোডিয়াম ল্যাকটেট। অথচ ওরা ব্যবহার করেছিল ল্যাকটিক অ্যাসিড, অর্থাৎ ল্যাকটিক অ্যাসিড ওই সংস্থা কাঁচামাল হিসাবে কিনেছিল। মনোগ্রাফে আবার লেখা সেডিয়াম ল্যাকটেট সলিউশন।  বিশেষজ্ঞদের কথায় এই তিনটি কাঁচামাল দিয়েই স্যালাইন তৈরি হতে পারে কিন্তু সব কয়টিরই আলাদা পরিমাপ রয়েছে। এগুলি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা ছিল না পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালের উৎপাদন রেজিস্ট্রারে। ফলে এটা বোঝা যাবে না যে নিয়ম অনুযায়ী ওই স্যালাইন তৈরি হয়েছে কি না। 

যেখানে স্যালাইন তৈরি হয়, সেই স্থান স্টেরিলাইজেশন বা জীবাণুমুক্ত করার জন্য হিটেড চেম্বারে রাখতে হয়। অর্থাৎ যে হিট সেখানে দেওয়া হবে তা লোডের পরিমাণের ওর নির্ভর করছে। সাধারণভাবে বলতে গেলে দ্রবণের পরিমাণের ওপর হিট দেওয়া নির্ভর করে। অল্প মাত্রার দ্রবণের জন্য একরকম হিট, বেশি মাত্রার দ্রবণের জন্য আর এক রকম হিট প্রয়োজন  হয়। অর্থাৎ ভাগের হিসাবে রকমফের আছে। এক্ষেত্রে সংস্থার বক্তব্য থেকে সেই লোডিং প্যাটার্ন পরিষ্কারভাবে জানা যায়নি। সেরকম কোনও রেকর্ড মেলেনি। কত ভাগে কি করা হয়েছে তার হদিশ নেই। পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালের উৎপাদিত স্যালাইনের গুণমান পরীক্ষায় রয়েছে আরও অসঙ্গতি। যেমন অনুসন্ধানকারী দলের বক্তব্য, বিজ্ঞানসন্মতভাবে হাই প্রেসার জোনে যা রাখার কথা তা হয়নি। লকিং সিস্টেম ছিল সাধারণ মানের, ইন্টারলকিং সিস্টেম সেখানে ছিল না। ফলে বাইরে থেকে বাতাস ভেতরে ঢোকার সম্ভাবনা থাকতেই পারে। এতে উৎপাদিত স্যালাইন নষ্ট হওয়ারই আশঙ্কা।

উপরন্তু স্টেরিলাইজড করার জন্য ডাবল ডোর স্টেরিলাইজার সিস্টেম ব্যবহার করা হয়নি বলে বক্তব্য অনুসন্ধান দলের— যা স্টেরিলাইজ জোনের মধ্যে থাকার কথা। কিন্তু এই ডাবল ডোর সিস্টেম ছিল খারাপ। ফলে স্যালাইনের উপকরণ যেখানে রাখা হয়েছে তা নিম্নমানের বলেই মনে হয়েছে তদন্তকারীদের। এছাড়াও স্টেরিলাইজড জোনের মধ্যে জীবাণু প্রবেশ করেছে কিনা তা নিয়ে ওই সংস্থা সঠিক করে কিছু তথ্য দিতে পারেনি। রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে উৎপাদিত স্যালাইনের ব্যাকটেরিয়াল কাউন্ট নেওয়া হয়েছে সংস্থার পক্ষ থেকে, কিন্তু ফাঙ্গাল কাউন্ট নেওয়া হয়নি। অর্থাৎ ওর মধ্যে ফাঙ্গাল বা ছত্রাক প্রবেশ করেছে কিনা তার কোনও রেকর্ড নেই কোম্পানির খাতায়। জানা গেছে, তৈরি হওয়া স্যালাইন নট স্ট্যান্ডার্ড কোয়ালিটি বা নিম্ন মানের তকমা পাওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল তাদের স্যালাইনের যে ব্যাচগুলি বেরিয়ে গেছে তা ফেরত আনার ব্যবস্থা করলেও কতগুলি ফেরত এসেছে বা আদৌ এসেছে কিনা তা তারা বলতে পারেনি তদন্তকারী টিমের কাছে।

এইসব কারণে ২০২৪ সালের ১০ ডিসেম্বর ড্রাগ অ্যান্ড কসমেটিক অ্যাক্ট অ্যান্ড রুলস ১৯৪৫ অনুসারে ৮৫ ধারায় পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালের সমস্ত উৎপাদন প্রক্রিয়া বন্ধ করার নির্দেশ দেয় শিলিগুড়ি ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর।     

তবে ঘটনার শুরু আরও আগে। স্যালাইন নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় গত মার্চ মাসে কর্নাটক সরকার ঐ কোম্পানিকে কালো তালিকভুক্ত করার জন্য একটি অর্ডার করে। কারণ পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালের তৈরি স্যালাইন কোয়ালিটি টেস্ট ফেল করে সে রাজ্যে। কিন্তু কর্নাটক সরকারের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থার ঐ ব্ল্যাক লিস্ট করার  অর্ডারের বিরুদ্ধে ৪ এপ্রিল আদালত থেকে একটি স্টে অর্ডার নিয়ে আসে পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল। এরপর নভেম্বরে ঘটে পরপর প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা এবং স্যালাইনকে ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য কর্নাটক ড্রাগ কন্ট্রোলারকে সাসপেন্ড করা হয় বলে জানা গেছে। তারপর রাজীব গান্ধী ইউনিভার্সিটি হেলথ সায়েন্সের তদন্ত হয়। এরপর কেন্দ্র ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটা যৌথ অনুসন্ধান হয় তিন দিন ধরে এবং সেই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে এ রাজ্যের সরকার ঐ কোম্পানিকে উৎপাদন বন্ধের নোটিস দেয়। এখন প্রশ্ন, যে ব্যাচগুলি ইতিমধ্যে বেরিয়ে গেছে এবং ছড়িয়ে পড়েছে, সেগুলির ক্ষেত্রে কি হবে? সেগুলির নমুনা পরীক্ষা বা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কিছু ভাবা হচ্ছে না সরকারি স্তরে। সেগুলি ফিরিয়ে আনার কোনও ব্যবস্থা নেই।

কর্নাটক সরকার ওষুধের নিম্নমানের সূচনা পেয়ে ভারতের ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল (ডিসিজিআই)-কে চিঠি দেয় বিষয়টি দেখার জন্য। কারণ কর্নাটক সরকারের মনে হয়েছিল যে সেন্ট্রাল ড্রাগ ল্যাবরেটরি যা কলকাতায় রয়েছে, তারা পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থার ওষুধের বিষয়ে যে রিপোর্ট দিয়েছে, তা আগে বিশদে পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। এরপর দেশের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তদন্ত শুরু হয় ঐ কোম্পানির উৎপাদিত ওষুধের বিষয়ে। এই খবরে ওড়িশা ও আসাম সরকার অত্যন্ত উদ্বেগ প্রকাশ করে। কারণ পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালের রিঙ্গার ল্যাকটেট ঐ রাজ্যগুলিতেও পৌঁছেছিল ইতিমধ্যে। দ্য হিন্দু - তে ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ এ খবর প্রকাশিত হয়েছে।            

Comments :0

Login to leave a comment