ঊর্বা চৌধুরি
‘‘চা বেচে বেঁচেছি। ভাইদের দেখতে হতো। একটু বড় হলে মা বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। আমার ছোটরা ইস্কুল গেছে। আমায় ভর্তি করেনি কখনও।’’ বললেন পড়ুয়া হতে চাওয়া কলকাতার এক নারী গৃহ শ্রমিক। সারাদিন অপরের বাড়িতে কাজ করার পর, সন্ধ্যায় তিনি কাজ করেন পাড়ার এক হোটেলেও। বাসস্থান এলাকায় প্রাপ্তবয়স্ক ‘যারা লেখাপড়া জানে না, তাদের জন্য ক্লাস হবে’ জানতে পেরে যোগাযোগ করেন তিনি। বঙ্গীয় সাক্ষরতা প্রসার সমিতি’র বিদ্যাসাগর বয়স্ক সাক্ষরতা কেন্দ্রের ‘ক্লাস’গুলি তার মতো পড়ুয়াদের জীবন সংগ্রামের বৃত্তান্তের ভিতের উপর দাঁড়িয়ে, যা প্রকৃত প্রস্তাবে এই রাজ্যের আর্থিক শ্রেণিগত অসাম্য সহ নানা সামাজিক বঞ্চনার প্রায়-সম্পূর্ণ ছবি তুলে ধরতে পারে।
সাক্ষরতার প্রসার, নিরক্ষরতার উৎসমুখ রোধ, বিদ্যালয় শিক্ষার সুনিশ্চিতকরণ, সচেতনতা ও সক্ষমতার বিকাশে সহায়কের ভূমিকা গ্রহণের লক্ষ্য নিয়ে এই রাজ্যে কাজ করার সূত্রে বঙ্গীয় সাক্ষরতা প্রসার সমিতির লব্ধঅভিজ্ঞতা বহুমুখী। যার অন্যতম হলো লিঙ্গ রাজনীতির চলন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা। এই লেখা শুরু হচ্ছে যে বাক্য দিয়ে, সেও এক নির্দিষ্ট অভিজ্ঞতা– সাক্ষরতা আন্দোলনের বহুমাত্রিক কাজ করতে গেলে স্পষ্টত দেখা যায় যে, পিতৃতান্ত্রিক আবহে অক্ষরজ্ঞান, সচেতনতা এবং সক্ষমতা অর্জন ও বিকাশের প্রশ্নে লিঙ্গগত বৈষম্য এক প্রকট অন্তরায়। ফলে নারী, রূপান্তরিত ও রূপান্তরকামী মানুষের মতো উৎপীড়িত ও প্রান্তিক লিঙ্গ পরিচিতির মানুষের নিত্যদিনের সমস্যা থেকে বৃহৎ পরিসরের বিভিন্ন সমস্যার উপর, বিশেষভাবে দৃষ্টিপাত করা এবং সেইমতো কাজ করা সাক্ষরতা আন্দোলনের প্রগতির ক্ষেত্রে জরুরি।
লিঙ্গ-সমতার দিকটিকে মাথায় রেখে কাজ শুরু করার আগে লিঙ্গগত বৈষম্যের বাস্তবতাকে নিরীক্ষণ করার জন্য গত ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ ২০২৫-এ বঙ্গীয় সাক্ষরতা প্রসার সমিতির উদ্যোগে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি পাইলট সমীক্ষার কাজ করা হয়। সমীক্ষাটি হয় হুগলীর কোন্নগর, উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগর ব্লক, পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং ব্লক, বীরভূমের সাঁইথিয়া ব্লকের মোট ৮টি গ্রামে ও শহরাঞ্চলের মধ্যে হাওড়া, বরানগর, সল্টলেক, কলকাতার মানিকতলা, বেলেঘাটা, নয়াবাদ এলাকায়। কথা বলা হয় ১৮ থেকে ৫৯ বছর বয়সি মোট ২৭২ জন নারীর সঙ্গে। সমীক্ষার মূল লক্ষ্যকে মাথায় রেখে, একটি কর্মশালার মাধ্যমে প্রশ্নসূচি তৈরি হয়েছিল লিঙ্গ বৈষম্যের নানা সূচকের প্রেক্ষিতে। প্রশ্নসূচি তৈরির কাজ থেকে শুরু করে সমীক্ষা পর্যন্ত সমগ্র কাজে যোগদান করেন সাক্ষরতা আন্দোলনের কর্মী-সংগঠক, পেশাদার গবেষণা কর্মী, মানসিক স্বাস্থ্যকর্মী, বিদ্যালয় শিক্ষক ও নারী আন্দোলনের কর্মীরা। সমীক্ষার তথ্য সংগ্রহের জন্য সূচক-ক্ষেত্রগুলি হলো– নারীদের শিক্ষা-সাক্ষরতা, স্বাস্থ্য, ঘরের কাজ, জীবিকা, নারীর বিরুদ্ধে হিংসা, বিবাহ ও সন্তানপালন, নারী-স্বাধীনতা সম্পর্কে বোঝাপড়া। সংগৃহীত সংখ্যাগত ও গুণগত তথ্যের মধ্যে থেকে কিছু তথ্য নিচের সারণিতে উল্লেখ করা হলো-
আলোচিত প্রসঙ্গ হুগলী (মোট উত্তরদাতা ৭২) উত্তর ২৪ পরগনা (মোট উত্তরদাতা ৫৬) বীরভূম (মোট উত্তরদাতা ৭৪) পশ্চিম মেদিনীপুর (মোট উত্তরদাতা ৯) শহরাঞ্চল (মোট উত্তরদাতা ৬১)
নিরক্ষর ১১ ৭ ৩২ ১ ৭
নিম্ন প্রাথমিক ও প্রাথমিক পাশ ১৫ ৮ ১৮ ০ ১১
উচ্চ প্রাথমিকে বিদ্যালয়— ছুট ও উচ্চ প্রাথমিক পাশ ১২ ১৫ ২ ০ ৪
বিদ্যাসাগর সাক্ষরতা কেন্দ্রে পড়তে আগ্রহী ১৬ ১০ ৪১ ০ ১৯
বিদ্যাসাগর সাক্ষরতা কেন্দ্রে পড়াতে আগ্রহী ২৫ ১৯ ১১ ৫ ৩৩
অপুষ্টি হ্যাঁ ১৫ ২ ১২ ২ ৩
না ১৩ ৯ ১৪ ১ ১২
জানেন না, পরীক্ষা হয়নি ৪৪ ৪৫ ৪৮ ৬ ৪৬
অ্যানিমিয়া হ্যাঁ ১৫ ৫ ৫ ২ ১১
না ১৫ ৮ ১২ ২ ৯
জানেন না, পরীক্ষা হয়নি ৪২ ৪৩ ৫৭ ৫ ৪১
প্রোটিন জাতীয় খাদ্যগ্রহণ সপ্তাহে ১ দিন বা তার কম ৪ ৫ ৫০ ১ ৪
সপ্তাহে ১ দিনের বেশি ৬৮ ৫১ ২৪ ৮ ৫৭
ঘরের কাজ পরিবারের নারী পুরুষ মিলে করছেন ২৩ ১০ ৯ ৩ ৩৩
কেবল পরিবারের নারীরা করছেন ঘরের বাইরে আর্থিক কাজে যুক্ত ২২ ৩০ ৪৩ ০ ২০
ঘরের বাইরে আর্থিক কাজে যুক্ত নন ২৭ ১৬ ২২ ৬ ৮
প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের শাসন, মারধর করা, গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ শাসন, গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ সমর্থন করেন
৮ ১৩ ৩৩ ২ ১২
সমর্থন করেন না ৬৪ ৪৩ ৩৮ ৭ ৪৯
নারী নির্যাতন, যৌন হেনস্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার কোন কোন কর্তৃপক্ষ সম্পর্কে জানেন পুলিশ/ পঞ্চায়েত/ মোড়ল/ আঞ্চলিক রাজনৈতিক মহিলা সমিতি ৭২ ৫৬ ৭৪ ৯ ৬১
ইন্টারনাল কমপ্লেইন্ট কমিটি ০ ০ ০ ০ ০
এই সমীক্ষা কেবল কিছু তথ্য জোগাড়ের জন্য কোনও যান্ত্রিক উপায়ে হয়নি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় কতদূর পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে, এই প্রশ্নের সঙ্গে সঙ্গে উঠে এসেছিল সেই আলোচনা, যেখানে নারীরা বলছিলেন নিজেদের অক্ষরজ্ঞানহীন হয়ে থাকার বা নিম্ন প্রাথমিক কিংবা বড়জোর প্রাথমিক পর্যন্ত লেখাপড়া টানতে পারার প্রেক্ষাপট– দারিদ্র এ সব ক্ষেত্রে অনিবার্যভাবে সাধারণ একটি বাস্তবতা হলেও, নারীজন্ম নেহাত কম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়নি। ছোট ভাইবোনের দেখভাল, ‘মেয়ে’ বলেই লেখাপড়া না হলেও হয়, কম বয়সে বিয়ে দিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ– এগুলি লেখাপড়া করার মতো মৌলিক অধিকার-চর্চা থেকে বাতিল হয়ে থাকার অন্যতম কারণ হিসাবে বলেন এঁরা। এক্ষেত্রে একটি নজর কাড়া বিষয় হলো– আক্ষেপ! লেখাপড়া না করতে পারার আক্ষেপ নিয়ে বাঁচছেন তাঁরা– কেন আক্ষেপ, সেই আক্ষেপের দাম কত আনা– সেসব কাহিনি জানতে চাইলে উঠে আসছে নানা কথা। তবে, সেই আক্ষেপজাত সবচেয়ে গঠনমূলক কথাটা হলো– পাড়ায় বয়স্ক সাক্ষরতা কেন্দ্র শুরু করা হলে, সিংহভাগ নারী লেখাপড়া শিখতে যাবেন। আবার একদল নারী, যাঁদের অক্ষরজ্ঞান রয়েছে, তাঁরা রাজি হচ্ছেন এই জাতীয় কেন্দ্রে পড়াতে। সমীক্ষার মাধ্যমে যে চমৎকার দিকটির খোঁজ পাওয়া গেল তা হলো– শ্রমজীবী নারীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া শ্রেণিগত ও লিঙ্গগত বঞ্চনা নিয়ে তিনি দিবারাত্র কপাল চাপড়ে মরছেন না– তিনি উত্তরণমুখী। তিনি লেখাপড়া শেখাকে নিজের মুক্তির অন্যতম উপায় বলে চেনেন। সেই সূত্রেই সাক্ষরতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সংগঠক কর্মীদের কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায় যে, সাক্ষরতা প্রসারের কাজ তাঁদের করতে হবেই।
সমীক্ষা চলাকালীন জানা যায়, বিরাট সংখ্যক নারী জানেন না পুষ্টির প্রশ্নে বা রক্তাল্পতার (অ্যানিমিয়া) প্রশ্নে তাঁদের শারীরিক অবস্থা কেমন। প্রশ্ন হলো, হঠাৎ নিজের শরীর সম্পর্কে নারীদের এই তথ্যগুলি জানতে হবে কেন? জানাটা জরুরি হয়ে পড়ছে, কারণ এই দুই ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের নারীদের শারীরিক অবস্থা ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেল্থ সার্ভে–৫-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সি নারীদের ৭১.৫ শতাংশ অ্যানিমিয়া আক্রান্ত (পুরুষদের মধ্যে এই হার ৩৯.২ শতাংশ)। অথচ নিজেদের পুষ্টি ও রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সম্পর্কে জানা বোঝা বেশিরভাগ নারীর নেই। এমনকি এই দুর্দশার বাস্তবতা সত্ত্বেও, রাষ্ট্রও এমন কোনও কার্যকরী বন্দোবস্ত রাখেনি যা দিয়ে, সর্বজনীনভাবে নারীদের বুনিয়াদি স্বাস্থ্যের ধারাবাহিক নিরীক্ষণ সম্ভব হয়। পশ্চিমবঙ্গে নারীদের মধ্যে আমিষ খাওয়ার চল অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বেশি থাকলেও, সমীক্ষায় জানা যায় বীরভূমের সাঁইথিয়া ব্লকের আদিবাসী নারীরা আমিষ খাবার অত্যন্ত কম পরিমাণে খাচ্ছেন– দারিদ্রের কারণে, ক্রয়ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কারণে। অবশ্য এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, এই দারিদ্র কেবলমাত্র উক্ত অঞ্চলের নারীদেরই পুষ্টিকর খাবারের ঘাটতির কারণ হচ্ছে না– সকলেরই পুষ্টিকর খাবারের ঘাটতির কারণ হচ্ছে।
সমীক্ষায় পাওয়া তথ্যের মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য হলো ঘরের কাজে যোগদান সংক্রান্ত তথ্য– এই কাজ পরিবারের উৎপাদন সংক্রান্ত বা আর্থিক কার্যকলাপ নয়, ব্যক্তিগত পারিবারিক ঘরের কাজ। দেখা যাচ্ছে ২১১ টি গ্রামীণ পরিবারগুলির মধ্যে মাত্র ৪৫ টি পরিবারের পুরুষেরা ঘরের কাজে নারীদের সহায়তা করছে। বাকি ৯৫টি পরিবারে উত্তরদাতা নারী ঘরের বাইরে রোজগারের কাজেও যোগ দিচ্ছেন আবার ঘরের কাজও করছেন সম্পূর্ণ একা হাতে, কোনও পুরুষ সদস্যের সাহায্য ছাড়াই। শহরাঞ্চলে এই চিত্র খানিক উন্নত, সেখানে ৬১টি পরিবারের মধ্যে ৩৩টি পরিবারে নারী সদস্যের সঙ্গে ঘরের কাজে পুরুষেরাও যোগ দিচ্ছেন, ২০জন কর্মরত নারী ঘরের কাজ করছেন পুরুষ সদস্যের সাহায্য ছাড়া। মোটের উপর দেখা যাচ্ছে– ঘরের কাজে পুরুষদের যোগদান অত্যন্ত কম। বাইরে কাজ করার কারণে পুরুষদের এই কম যোগদান– এমন কারণ প্রদর্শন করা হলেও, নারীদের সঙ্গে তুলনামূলক বিচারে বোঝা যাচ্ছে এ কোনও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ নয়, স্রেফ অজুহাত হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এখন প্রশ্ন হলো পুরুষের ঘরে না খাটার এই অভ্যাসকে কী চোখে দেখেন উত্তরদাতা নারীরা? সমীক্ষার তথ্য বলছে– বেশিরভাগ নারী এই অভ্যাসকে কার্যত পরিত্যাজ্য অভ্যাস হিসাবে দেখেন,‘‘সকলেরই ঘরের কাজ করা উচিত, কিন্তু ছেলেদের বলে লাভ নাই, করবে না’’– এই হলো গ্রাম-শহরের শ্রমজীবী নারীর মধ্যে ভালো সংখ্যকের নৈতিক অবস্থান ও প্রতিক্রিয়া। তাঁরা পুরুষের ঘরের কাজ না করার মধ্যে কোনও গৌরব, পৌরুষ কিছুই খুঁজে পান না– খুঁজে পান বাবুয়ানি, আলস্য এবং অসহযোগের অদ্ভুত প্রবণতা। এক অল্পবয়সি মেয়ে আবার শ্লেষের প্রশ্ন করে বসেন সমীক্ষককেই,‘‘খাওয়া যদি দু’জনের কাজ হয়, তবে রান্না করা কেন দু’জনের কাজ নয়!’’
গুরুতর দুশ্চিন্তার তথ্য উঠে আসে নারীর বিরুদ্ধে হিংসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরগুলিতে। ২৭২ জনের মধ্যে ৭৮ জন উত্তরদাতা নারী মনে করছেন, বয়োজ্যেষ্ঠদের নির্দেশ অমান্য করলে পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের উঁচু গলায় ধমকে শাসন করা বা তাঁদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। অর্থাৎ মারধর করা ছাড়া, ধমকধামক বা গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের মতো আচরণও যে গৃহহিংসার এক একটি রূপ, সে সম্পর্কে তাঁদের বোঝাপড়া নেই বললেই চলে। আবার কর্মস্থলে নারীর প্রতি হিংসার অভিযোগ দায়ের করার কর্তৃপক্ষ হিসাবে ২৭২ জনের মধ্যে একজনও ইন্টারনাল কমপ্লেইন্ট কমিটি (আইসিসি) সম্পর্কে কিচ্ছু জানেন না – জানেন না সংগঠিত ক্ষেত্রে, কর্পোরেট সংস্থায় চাকরিরত উত্তরদাতাও। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য উত্তরদাতাদের মধ্যে সিংহভাগ অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক বা গৃহবধূ। এঁরা অফিসকাছারির মতো কর্মস্থলে অপরাধ ঘটলেও মূলত থানাকেই একমাত্র অভিযোগস্থল হিসাবে বুঝছেন। কেউ কেউ এ প্রশ্নে অভিযোগস্থল হিসাবে চিনছেন আঞ্চলিক রাজনৈতিক মহিলা সমিতিকে।
এই লেখায় সমীক্ষায় উঠে আসা তথ্যের কিছু অংশ নিয়ে আলোচনা হলো। এর ভিত্তিতে বঙ্গীয় সাক্ষরতা প্রসার সমিতি বীরভূমে গত ২৫ থেকে ২৭ এপ্রিলে দ্বাদশ রাজ্য সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে বেশ কিছু গবেষণামূলক ও প্রতিবিধানমূলক কাজ করার সিদ্ধান্ত করেছে। লিঙ্গসাম্যের দিকটিকে আরও বেশি নজর দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে রাজ্য স্তরে ও জেলা স্তরে ‘সমতা’ নামক উপসমিতি গঠন করে কাজ করার। সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বছরভর সচেতনতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সমুদয় স্তরে ধারাবাহিক কর্মশালা, আলোচনাচক্রের আয়োজন করার কাজের পরিকল্পনা তো রয়েইছে, রয়েছে আরও কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয়ে ছোট ছোট গবেষণা করার পরিকল্পনা। মোটের উপর বঙ্গীয় সাক্ষরতা প্রসার সমিতি, তার মূল দর্শন – সাক্ষরতার প্রসার, সচেতনতা, সক্ষমতার বিকাশ– বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দৃঢ়নিশ্চয় ও সুনির্দিষ্ট অবস্থান গ্রহণ করতে এই পাইলট সমীক্ষার কাজ শুরু করেছে, যা পরবর্তীকালে সমিতির জেলা কমিটিগুলির উদ্যোগে জেলায় জেলায় বিস্তার করা হবে।
‘‘মেয়েদের কথা আবার কে শোনে?’’ এই প্রশ্ন দিয়ে শুরু হওয়া এক সাক্ষাৎকারের শেষ যখন হয়,‘‘পাড়ায় বড়দের জন্য ক্লাস হলে, আমি পড়াতে যাব; আমি তো আমার শ্বশুর-শাশুড়িকে পড়িয়েছি’’ – তখন সঙ্কটের মধ্যেই সম্ভাবনা যে রয়েছে, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। সমীক্ষাটিতে লব্ধ সেই বোঝাপড়া বঙ্গীয় সাক্ষরতা প্রসার সমিতির বরাবরের অভিজ্ঞতা ও কাজকে ফের একবার অপরিহার্য হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে। সাক্ষরতা কেন্দ্র চালনার মতো মৌলিক কাজ থেকে শুরু করে সমিতির বহুমাত্রিক কাজের সুষ্ঠু পরিকল্পনার ভিত্তিভূমিকে বোঝার জন্য সংঘটিত এই পাইলট সমীক্ষা আসলে সমিতির পূর্ব-নির্ধারিত আরও বিবিধ কাজের সূচক।
Comments :0