২০২৪ সালের বিশ্ব ক্ষুধা সূচক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্ব জুড়ে ৮১৮ কোটি মানুষের মধ্যে ৭৩.৩০ কোটি মানুষ গুরুতর অপুষ্টির শিকার। খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার বর্ধিত ব্যয়ের জন্য ২০০.৮ কোটি মানুষ পুষ্টিকর খাদ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
মোদী দাবি করে চলেছেন ভারতবর্ষ বিশ্বের অন্যতম সেরা বৃহৎ আর্থিক শক্তি হয়ে উঠেছে তাঁর নেতৃত্বে। স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ২০৪৭ সালে দেশ নাকি ৩০ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থনীতি হবে। এই মুহূর্তে দেশে ভারতের বিলিয়নেয়ারের সংখ্যা ৩৩৪ জন। দেশে ১,৫৩৯ জন ব্যক্তির ১০০০ কোটি টাকা বা তার বেশি সম্পদ রয়েছে। এই ঝকঝকে ভারতের চিত্রের উলটোদিকে আর একটা ভারতবর্ষ আছে যা খুবই উদ্বেগজনক। বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের সদ্য প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতের অপুষ্টিজনিত মানুষের সংখ্যা ২০ কোটি যা জনসংখ্যার প্রায় ১৪%। মোদীর নেতৃত্বের সরকার অবশ্য এই রিপোর্টকে অস্বীকার করে। কিন্তু এই রিপোর্টে স্পষ্ট উল্লেখ করা করা হয়েছে, এটি তৈরি হয়েছে ভারত সরকারের পরিসংখ্যান ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন মন্ত্রক এবং নীতি আয়োগ কর্তৃক প্রকাশিত পরিসংখ্যানগুলির ওপর ভিত্তি করেই। বিশেষত মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকের রিপোর্টে উল্লিখিত জন্ম মৃত্যু, শিশু এবং মাতৃ মৃত্যু সংক্রান্ত প্রকাশিত পরিসংখ্যানগুলির ওপর ভিত্তি করেই এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে,। এটা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে বিশ্ব ক্ষুধা সূচক রিপোর্টে। ফলে এই রিপোর্টকে অস্বীকার করার বাস্তব কোনও ভিত্তিই নেই।
এই রিপোর্ট অনুযায়ী ১২৭টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১০৫ তম। এই রিপোর্টে দেশগুলির অবস্থানকে ৫টি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে শেষ দুটি ভাগ হলো ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ ও ‘গুরুতর পরিস্থিতি। ভারতের পরিস্থিতিকে ‘গুরুতর’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দেশে খাদ্যদ্রব্যের ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার ২০২২ সালের ৩.৮ শতাংশের তুলনায় ২০২৪ সালে বেড়ে হয়েছে ৭.৫ শতাংশ অর্থাৎ দ্বিগুণেরও বেশি। ফলে খাবারের খরচ দ্বিগুণ হওয়ার কারণে দরিদ্র মানুষদের খাবার কেনা আরও দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। অথচ বর্তমান আর্থিক বছরে খাদ্যে ভরতুকির পরিমাণ বিগত বছরের ২১২,৩৩২ কোটি টাকার থেকে ৩.৩৪ শতাংশ কমিয়ে ২০৫,২৫০ কোটি টাকা করা হয়েছে। ছয় বছরের কম বয়সি প্রায় ৭.৪৪ কোটি শিশুর ওপর একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল Poshan Tracker Data, ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে। এই সমীক্ষা অনুযায়ী এদের মধ্যে ৩৭.৫১ শতাংশ স্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধি নেই, ১৭.৪৩ শতাংশ কম ওজনের এবং ৫ বছরের কম বয়েসেই ৬ শতাংশ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এই করুণ পরিণতির দিকে দেশ যাচ্ছে কেন? পরিত্রাণের উপায় কি? রাস্তা একটাই খাদ্য নিরাপত্তা আইন যা ২০১৩ সালে দেশে গৃহীত হয়েছিল, সেটা আইন অনুযায়ী প্রত্যেক ভারতবাসীর জন্য খাবার দায়িত্ব পালন করতে হবে দেশের সরকারকেই। এবাবদ খরচ বাড়নোর পরিবর্তে ক্রমশ কমিয়ে যাওয়ার অর্থ দেশে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি। ক্রমবর্ধমান খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধ করার জন্য সার, জ্বালানি ইত্যাদি খাতে ভরতুকি বাড়ানো। অথচ এর ঠিক উলটো কাজটাই করছে মোদী সরকার। গ্রামীণ কর্মসংস্থান বাড়িয়ে মানুষের রোজগার বাড়ানো দরকার। যেখানে ১০০ দিনের কাজ দেওয়াকে নিশ্চিত করা, তার মজুরি বৃদ্ধি করা দরকার সেক্ষেত্রে এই প্রকল্পে প্রতি বছর সরকার বরাদ্দ কমিয়েই চলেছে। তাই খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধ, খাদ্যে ভরতুকি বাড়ানো, সার জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে, এই সরকারের জনবিরোধী নীতি পরিবর্তনের লক্ষ্যে ব্যাপক গণআন্দোলন গড়ে তোলা আশু প্রয়োজনীয় কাজ।
Comments :0