ARGENTINA VS POLAND

এবার নতুন বিশ্বকাপ, দুরন্ত জয়ের পরে বললেন মেসি

খেলা

FIFA WORLD CUP QATAR FOOTBALL 2022 WORLD CUP ম্যাচ শেষে মেসির সঙ্গে লেওয়ানডস্কি

‘শুরু হলো নতুন বিশ্বকাপ’। বলছেন লিওনেল মেসি। সৌদি আরবের কাছে গ্রুপের প্রথম পর্বে পরাজয়ের পরে ধ্বস্ত আর্জেন্টিনার মানুষকে আশ্বাস দিয়েছিলেন দলের অধিনায়ক, ‘ভরসা রাখুন আমাদের ওপরে’। কথা রেখেছেন তিনি। গ্রুপের শেষ ম্যাচে পোল্যান্ডকে কার্যত কাঠের পুতুল বানিয়ে রেখে দু’গোলে ম্যাচ জিতেছে আর্জেন্টিনা। শুধু জেতেইনি। এই বিশ্বকাপের সবচেয়ে ভালো খেলাও খেলেছে। দৃষ্টিনন্দন, ধারালো, সমন্বিত, ছন্দবদ্ধ। এর পরেই মেসির মন্তব্য, ‘ ঠান্ডা মাথায় থাকতে হবে, প্রত্যকে ম্যাচ আলাদা। একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গ্রুপে শুরুতেই পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গিয়েছিল, সেই জাল কেটে বেরিয়ে এসেছি। এখন আরেকটি বিশ্বকাপ’। 


মেসিদের সামনে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া। প্রতিপক্ষের থেকে অন্য দুশ্চিন্তা বেশি। প্রথমত, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আবার মাঠে নামতে হবে। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্কালোনিও। বলেছেন, দু’দিনের মাথায় পরের ম্যাচ খুবই আশ্চর্য ব্যাপার। অথচ গ্রুপে আমরা শীর্ষে। কিন্তু এই সময়সূচি পূর্ব নির্ধারিত। ক্লান্তি এবং বিশ্রামের অভাব আর্জেন্টিনাকে ভাবাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, ডি মারিয়ার আঘাত রয়েছে। পোল্যান্ড ম্যাচের মাঝখান থেকে ডি মারিয়াকে তুলে নিয়েছিলেন স্কালোনি। খুবই ভালো খেলছিলেন তিনি। দর্শকরা বিস্মিত হয়েছেন। কিন্তু পরে বোঝা গেছে ডি মারিয়ার পায়ে টান ধরেছে। ম্যাচের পরে কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়ে তিনি প্রাতঃরাশের পরে আলট্রাসাউন্ড করিয়েছেন। তেমন বড় আঘাত নয়, পেশি ছিঁড়ে যায়নি। কিন্তু পেশিতে টান রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তিনি নিশ্চিত নন। আর্জেন্টিনা শিবিরের খবর, ডি মারিয়া খেলতে চান কিন্তু শেষমূহূর্তে সিদ্ধান্ত নেবেন কোচ। 


পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথমার্ধেই পুরো দাপট কায়েম করেছিল আর্জেন্টিনা। যে খেলা এতদিন দেখা যায়নি, সেই খেলা। ৩৭ মিনিটে পেনাল্টি বক্সে হেড করতে উদ্যত মেসির মুখে গোলরক্ষকের হাত লাগায় পেনাল্টি দেন রেফারি। ‘ভার’ দেখে পেনাল্টি। যতক্ষণ ‘ভার’ পরীক্ষা চলছিল পোলিশ গোলরক্ষক সেজেনি মেসিকে বলেন, ‘বাজি ধরছি পেনাল্টি হবে না’। কিন্তু পেনাল্টির নির্দেশই আসে। সেজেনি মেসির শট আটকে দেন। এই পেনাল্টির সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। গোল না হওয়ায় প্রশ্নের আর কোনও অর্থ থাকেনি। কিন্তু থাকতে পারত। মানসিক ভাবে ধাক্কা খেতে পারত দল। মেসি নিজেই বলেছেন, আমার ভুল শুধরে নিয়েছে গোটা দল। হতাশ হবার বদলে আর্জেন্টিনা আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে এসেছে। 


দ্বিতীয়ার্ধের ৬৮ সেকেন্ডেই গোল অ্যালিয়েস্টর গোল পেয়ে যান বুদ্ধিদীপ্ত প্লেসিংয়ে। জাতীয় দলের হয়ে তাঁর প্রথম গোল। তারপর থেকে পোল্যান্ডের অর্ধেই খেলা হয়েছে। মনে হয়েছে, এই মাঠে যেন একটিই অর্ধ রয়েছে। অর্ধবৃত্তাকার একটি ব্যূহ তৈরি করে এগতে থাকে আর্জেন্টিনা। দুই প্রান্ত থেকে বল ‘রোটেট’ করানো শুরু হয়ে। একের পর এক পাস এবং নিখুঁত পাসে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় পোল্যান্ড। প্রথম ম্যাচে এঞ্জো ফার্নান্ডেজ যেমন গোল করেছিলেন এই ম্যাচে প্রায় তারই প্রতিরূপ আলভারেজের দ্বিতীয় গোল। মেসির ভাষায়, এই সময়ে আমরা সেই খেলা খেলেছি যা আমরা খেলতে চাই। 


এইসব কিছু সত্ত্বেও এদিনের ম্যাচের ‘সেরা মূহূর্ত’ হয়ে রয়েছে মেসির সোলো রান, বল নিয়ে একক দৌড়। মাত্র ১৫ সেকেন্ডের ওই দৌড় এমবাপের মতো দ্রুত গতির, নেইমারের মতো চাতুরির কিন্তু মেসির পেটেন্ট নমনীয়তা, ড্রিবল, বল আর তিনি ছাড়া ময়দানে যেন কেউ কোথাও নেই। এই দৌড় গোল দেয়নি, গোলের সুযোগও তৈরি করেনি, কিন্তু দশ বছর পরে চোখ বন্ধ করলে এই মূহূর্তই ভেসে উঠবে। এদিন দেশ ও ক্লাব মিলে ৯৯৯তম ম্যাচ ছিল তাঁর, বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে রেকর্ড ২২তম ম্যাচ, যা মারাদোনার থেকে একটি বেশি। লিও ইদানীং এমন সোলো রান করেন না, ক্লাবেও নয়। বরং নিচে থেকে খেলা তৈরি করেন, জায়গা বদল করে অন্যদের জন্য জমি তৈরি করেন। এদিন মেসিকে দেখা গেছে পোলিশ রক্ষণে ত্রাস তৈরি করে দিতে। তিনি এমনভাবে ড্রিবল করছেন যেখানে তিনি শেষ পর্যন্ত জিতুন আর না-ই জিতুন, সতীর্থরা ফাঁকা জমি পেয়ে যাচ্ছে। লেওয়ানডস্কি পর্যন্ত লজ্জা খুইয়ে জামা ধরে টেনেছেন। 

 

Comments :0

Login to leave a comment