Brigade Md Salim

শরীরে যতক্ষণ রক্ত আছে দাঙ্গাবাজদের বিরুদ্ধে লড়বে বামপন্থীরা: সেলিম

রাজ্য ব্রিগেড

রবিবার ব্রিগেডে মহম্মদ সেলিম। ছবি ও ভিডিও: প্রিতম ঘোষ

প্রতীম দে ও অরিজিৎ মণ্ডল

যারা দুরবীন দিয়ে লালঝাণ্ডা দেখতে পাচ্ছিল না আজকের সমাবেশে তাদের বুকে কাঁপন ধরেছে। খেটে খাওয়া মানুষ সমবেত হয়েছেন। খেটে খাওয়া মানুষকে খুঁটে খেতে হচ্ছে। আর যারা লুটে খাচ্ছে তারা লুটের বাজার বড় করতে চাইছে।
রবিবার ব্রিগেডের ময়দানে একথা বলেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
সেলিম বলেন, মোদী মমতার সরকার কাজ করার জায়গা ছোট করে দিচ্ছে।কোনও রাজ্য বা কেন্দ্রের সরকারে নিয়োগ হচ্ছে না। পুলিশে বা শিক্ষকের নিয়োগ হলে দুর্নীতির পাহাড়। সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যের মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছে। ২৬ হাজার চাকরি গিয়েছে।
সেলিম বলেন, এই ব্রিগেড প্যারেড ভরানোর ক্ষমতা লালঝাণ্ডা ছাড়া আর কারও হিম্মত নেই। এবার এলাকায় এলাকায় অন্যদের যুক্ত করতে হবে।  
তিনি বলেন, আরজি কর ধর্ষণ-খুন কাণ্ডে বিচার চাইলেন রাজ্যবাসী। আর কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকার বিচার পিছিয়ে দিচ্ছে। কেউ ভেবেছিল বিচারের দাবিতে মধ্যরাতে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নামবেন? আসলে মানুষ জাগ্রত হচ্ছেন।
তিনি বলেন, দিন পালটাচ্ছে। কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ লালঝাণ্ডার ওপর হাত তুলতে ভাবতে হচ্ছে। গরিব মানুষ এককাট্টা হলে তাকে কেউ আঘাত করতে সাহস করে না। সে কারণে একতায় ফাটল ধরাতে চাইছে দুই দল। 
প্রতিদিন লড়াইয়ের নাটক হচ্ছে। আসলে আরএসএস’র স্ক্রিপ্টে দু’দলই নাটক করছে। কলকাতা পুলিশ বা রাজ্য পুলিশ ঘৃণাভাষণের বিরুদ্ধে একটিও মামলা করেনি। দাবি করছি, ঘৃণা যারা ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করতে হবে। না হলে সব থানায় আমরা এফআইআর দায়ের করব। অথচ এই পুলিশমন্ত্রীর নেতৃত্বে পুলিশ প্রতিবাদীদের ওপর, বামপন্থী কর্মীদের ওপর হাজার হাজার মিথ্যা মামলা দায়ের করে রেখেছে। 
আমাদের এই কর্মী বাহিনী, তাদের জন্য ছাউনি করতে হয়নি। প্রচণ্ড রোদে দুপুরবেলা কিভাবে বসবেন এই মানুষ মিডিয়া গবেষণা করছিল। 
সেলিম বলেন, আমরা লড়াইয়ের বার্তা দিতে এসেছি। আজ থেকে লড়াই শুরু।তিনি বলেন, মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জে গিয়েছি। কোথাও পুলিশের গুলিতে, কোথাও দাঙ্গাবাজের আক্রমণে মানুষ মারা গেলেন তাঁদের কাছে গিয়েছিলাম ঐক্যের বার্তা নিয়ে। 
তিনি বলেন, একদিন তৃণমূল অম্বিকেশ মহাপাত্রের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। লোকশিল্পীর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। তিনি এখন ঘরছাড়া। শপথ নিচ্ছে, এই শক্তিকে আমরা রাজ্যছাড়া করতে চাই।
সেলিম বলেন, মোদীর নজরদারি চলছে, আমাদের জীবনের ওপর নিয়ন্ত্রণ চাপিয়ে দিচ্ছে। সংবিধানকে লঙ্ঘন করছে। ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র তৈরি করতে ধর্মের উন্মাদনা তৈরি করছে। যে আরএসএস তিন দশক ধরে গণহত্যা করেছে, দাঙ্গা করেছে আজকে তারা ঘর বেঁধেছে এরাজ্যে।
ঝাণ্ডা শক্ত করতে হবে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছিলেন, দাঙ্গা করতে এলে মাথা ভেঙে দেব। মমতা ব্যানার্জি বলতে পারেন না। আর জ্যোতি বসু বলেছিলেন সরকার না চাইলে দাঙ্গা হয় না। আজ রাজ্য তা দেখছে। 
সেলিম বলেন, ওরা বলেছিল লাল হটাও দেশ বাঁচাও। লাল হটেছে কিন্তু দেশ বাঁচেনি। তাই লালঝাণ্ডাকে আবার শক্তিশালী করতে হবে।
যারা বলেছিল সিপিআই(এম) শেষ, বিজেপি-তৃণমূল বলেছিল। আমরা বলছি হ্যাঁ আমরা বেঁচে আছি। আধপেটা খেয়ে ঘরছাড়া হয়েও বেঁচে আছি। ওরা আমাদের সংস্কৃতি, সম্প্রীতি সব শেষ করতে চাইছে। আজকের লড়াই হলো দিশা পালটাতে হবে। সেই নতুন দিশার জন্য আমাদের লড়াই করতে। 
সেলিম বলেন, রাজ্যজুড়ে ব্রিগেড গড়ে উঠবে। যারা বিজেপি তৃণমূলের সঙ্গে নেই তাদের সবাইকে নিয়ে ছাব্বিশের লড়াই লড়ব। জমির পাট্টা কেড়ে নিয়েছিল। লড়াইয়ের মুখে প্রশাসনকে নাকখত দিয়ে সেই জমি ফেরত দিতে হয়েছে। 
গরিবের লড়াই গরিব লড়বে। আমরা জাত-পাত, মন্দির-মসজিদে যদি ভাগ না হই, তা’হলে লড়তে পারব। দেশ স্বাধীন করার লড়াই এভাবেই হয়েছিল। জমির লড়াই এভাবেই হয়েছিল। শরীরে যতক্ষণ এক বিন্দু রক্ত থাকবে এই দাঙ্গাবাজদের বিরুদ্ধে লড়াই লড়ে যেতে হবে। আমাদের লড়াই শিক্ষার জন্য, কাজের জন্য। মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির জন্য। লালঝাণ্ডার বাইরেও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ, গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষকে একজোট করতে হবে।
তিনি বলেন, সব মালিকদের নাম ঠিকানা নিতে বলেছে থানাকে। এখন তো শুধু বাস দিয়েছে, এরপর তো মানুষ বাঁশ দেবেন তখন কী করবে!  
সেলিম বলেন, মুর্শিদাবাদের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাইছি। তাহলে সামনে আসবে কারা এই চক্রান্ত করেছে। বিজেপি তৃণমূল বলছে বাইরে থেকে লোক এসেছে, কি করে বাইরে থেকে লোক এলো? কেন গোয়েন্দা বিভাগের কাছে কোন খবর থাকলো না। কেন সেদিন পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে গেলো না গ্রামে।
তিনি বলেন, লড়াই আসলে হিন্দু মুসলমানের লড়াই না। গরিবের হয়ে লড়াই করতে হবে। শিক্ষার দাবিতে লড়াই করতে হবে। ২৬ এর লড়াই এখন থেকে শুরু হোক। গ্রামে গ্রামে এই বার্তা পৌঁছে দিতে হবে।  

Comments :0

Login to leave a comment