CHILD Marraige

সমাধান রাস্তাতেই

সম্পাদকীয় বিভাগ

সম্প্রতি বাল্যবিবাহকে ‘সামাজিক শত্রু’ আখ্যা দিয়েছে খোদ সুপ্রিম কোর্ট। সমস্যার  গভীরতা খুবই ভয়াবহ এই কারণে যে, এর মোকাবিলায় কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলির ভূমিকা, যা  বিপদকে আরও বাড়িয়েই তুলছে।  বাল্যবিবাহ নির্মূলের কাজ কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের যেভাবে করা উচিত ছিল তার প্রতি কোনও আগ্রহ  তারা দেখায়নি। বাল্যবিবাহ বেড়ে চললেও রাজ্যগুলি ২০০৬ সালের বাল্যবিবাহ নিষেধ আইনের সঠিক প্রয়োগই যে করছে না সর্বোচ্চ আদালতের ক্ষোভ সেখানেই । বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকলেও  এই ঘটনা যে বেড়েই চলেছে, সবচেয়ে  উদ্বেগের বিষয় এটাই। আশঙ্কার কারণ এখানেও যে, চলতি আইনের সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করা সত্ত্বেও বাল্যবিবাহ নিষেধ আইনের সংশোধনী বিল ২০২১ সংসদে পেশও হয়েছিল। কিন্তু সেই বিল সংশ্লিষ্ট স্ট্যান্ডিং কমিটিতে পাঠিয়ে দেওয়া  হয়। বিলটি তিন বছর ধরে সংসদের বিবেচনাধীন। বেটি বাঁচওয়ের গালভরা প্রচারের ফাঁক গলে ক্রমবর্ধমান বাল্যবিবাহ, নাবালক বা নাবালিকার বুদ্ধিগত, সামাজিক এবং মানসিক উন্নয়ন ব্যাহত করছে; এমনকি জীবনের ঝুঁকিও তৈরি করছে ‌অনেক সময়। কিন্তু সবটা অরণ্যে রোদন হয়েই থেকে যাচ্ছে। দারিদ্র, লিঙ্গ অসাম্য, শিক্ষার অভাব, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক প্রতিকুলতা, বহুবিধ কারণ রয়েছে এর পিছনে। কিন্তু শাসকের সদিচ্ছা কোথায় সেদিকে নজর দেবার! 
এই প্রেক্ষাপটে যদি আমাদের রাজ্যের দিকে তাকানো যায় তাহলে আশঙ্কার বেশ কিছু চিত্র বেরিয়ে আসছে। কিশোরী থেকে তরুণী- পড়াশোনা ছেড়েছে,  কাজ নেই, কোনও প্রশিক্ষণও পাচ্ছে না এই সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। সাম্প্রতিক পরিবার ভিত্তিক সমীক্ষা জানাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে কিশোরী, তরুণীদের মধ্যে ৫২শতাংশেরই এই অবস্থা। বিজেপি-শাসিত দুই রাজ্য ত্রিপুরা এবং উত্তর প্রদেশের পরেই এক্ষেত্রে স্থান পশ্চিমবঙ্গের। এরাজ্য বাল্যবিবাহ মারাত্মকভাবে বাড়ছে। রাজ্যে নাবালিকাদের বিয়ে, নাবালিকাদের সন্তান ধারণ যে বাড়ছে,  তা  স্পষ্ট করেছ আরও একটি সমীক্ষায়। ‘মেন অ্যান্ড উওমেন, ২০২৩’ জানিয়েছে রাজ্যে বাল্যবিবাহের প্রবণতা তাৎপর্যপূর্ণভাবে বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে ছাত্রী, কর্মরতা মহিলাদের ধর্ষণের ঘটনা রাজ্যে বাড়ছে। স্কুল, কলেজে কিংবা কর্মক্ষেত্রে যাওয়া মহিলারা, তাঁদের পরিবারগুলি আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। অপরাধ রোধে সরকারের দুর্বলতা মহিলাদের ক্ষেত্রে পরিবেশ প্রতিকূল হয়ে উঠছে। সোজা কথায় কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের ব্যর্থতায় গ্রাম, শহরে পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়া, বেকার মেয়েদের সংখ্যা বাড়ছে, তাদের বিপদও বাড়ছে। ফলে তাঁদের একটি বড় অংশকে অভিভাববকরা নির্দিষ্ট বয়সের আগেই বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। বিয়ে হচ্ছে নাবালকদের  সঙ্গে, যাঁরা ভিন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক। ভয়াবহ উদ্বেগে এবং ভয়ের বিষয় এখানেই।
পশ্চিমবঙ্গে এখন  ১৫ থেকে ২৫বছরের তরুণদের মধ্যে স্কুল, কলেজ-ছুট, কোনও কাজে যুক্ত নয়, কোনও প্রশিক্ষণও পাচ্ছে না এমন অংশ  এরাজ্যে এখন বেড়েই চলেছে। তরুণদের বড় অংশ, যাঁরা পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে, তাঁরা ভিন রাজ্যে কাজ করতে যায়। মেয়েদের খুবই সামান্য পরিযায়ী শ্রমিক হয়। তরুণরা এই ভাবে উপার্জন করতে পারলেও তরুণীদের থাকতে হচ্ছে বাড়িতে। তাঁদের বড় অংশই  পড়াশোনার চৌহদ্দিরর বাইরে।  সম্প্রতি রাজ্যে কিশোরী, তরুণীদের মধ্যে পড়াশোনা ছাড়ার প্রবণতা যে বিপজ্জনকভাবে বেড়েছে তা আরও বেশ কিছু সামাজিক সমীক্ষায় প্রকাশ পাচ্ছে। তাই রাজ্যে নাবালিকা বিয়েও বাড়ছে। বরং দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় এই প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গ  গত কয়েক বছরে অনেকটাই পিছিয়েছে। নাবালিকা বিয়ের  বিচারে পাঁচ বছর আগে পশ্চিমবঙ্গের আগে ছিল শুধু বিহার। এখন পশ্চিমবঙ্গই এক নম্বরে। 
কিন্তু কেন্দ্রে মোদীর সরকারের মতো এরাজ্যে মমতা ব্যানার্জির সরকারের এদিকে নজর দেবার কোনও সদিচ্ছা নেই। তাই মেয়েদের রাত দখল-দিন দখল থেকে রাস্তা দখল ছাড়া অন্য কোনও পথ আছে কি? সমাজকে শোধরানোর জন্য গোটা নাগরিক সমাজকেই রাস্তায় থাকতে হবে। সমাধান খুঁজতে হবে রাস্তাতেই।

Comments :0

Login to leave a comment