প্রসূন ভট্টাচার্য- শিলিগুড়ি
আর জি করের ঘটনায় সিবিআই তদন্তে রাজ্যবাসীর কাছেও এখন স্পষ্ট, পদ্মফুল দিয়ে ঘাসফুলকে উপরানো যাবে না। শুক্রবার শিলিগুড়িতে সিপিআই(এম)’র দার্জিলিঙ জেলা সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশে এই মন্তব্য করে পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, যারা আগে ভেবেছিল বিজেপি’কে দিয়ে তৃণমূলকে জব্দ করা যাবে কিংবা তৃণমূলকে দিয়ে বিজেপি’কে ঠেকানো যাবে তাদের কাছেও এখন দুই দলের বোঝাপড়া উন্মোচিত হয়ে গেছে। মোদীর সিবিআই মমতা ব্যানার্জির পুলিশের সাজানো তদন্তেই সিলমোহর দিয়েছে।
সেলিম বলেছেন, তৃণমূল এবং বিজেপি কেউ কারো বিরুদ্ধে লড়ছে না, ওদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করছে লালঝাণ্ডাই। ন্যায়বিচারের জন্য, জমির পাট্টা, বেকারের কাজ, খাদ্যের অধিকারের জন্য, চা বাগানের শ্রমিকের মজুরির জন্য, কারখানার শ্রমিকের জন্য, কৃষকের জন্য, খেতমজুরের জন্য, সব শ্রমজীবী মানুষের জন্য লাল ঝাণ্ডার লড়াই। শ্রমজীবী মানুষ তাঁদের দাবিতে ব্রিগেড সমাবেশের ডাক দিয়েছে, আমরা তার প্রতি পূর্ণ সংহতি জানাবো।
সিপিআই(এম)’র দার্জিলিং জেলা ২৪তম সম্মেলন এদিনই শুরু হয়েছে শিলিগুড়ির মিত্র সম্মিলনী হল’এ। তার আগে শহরের টিকিয়াপাড়া মাঠে প্রকাশ্য সম্মেলনে ভাষণ দেওয়ার সময় সেলিম আর জি করের ঘটনার তদন্তের নামে সিবিআই’র প্রহসন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তার পিছনের রাজনৈতিক চক্রান্ত তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, মেদিনীপুরে সরকারি হাসপাতালে ভেজাল স্যালাইনের সাপ্লাইতে মায়ের মৃত্যু হলো। এই সাপ্লাই কারা করেছে? কারা কাটমানি খেয়েছে? এভাবে স্বাস্থ্যদপ্তরের দুর্নীতিতে গরিবের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। এই চক্রের কারণেই আর জি করে তরুণী চিকিৎসককে খুন করা হয়েছে। মোদী-মমতার বোঝাপড়ায় তার কোনো তদন্ত হলো না, এখনও ন্যায়বিচার অধরা। মোহন ভাগবৎ আগেই বলেছিলেন আর জি কর নিয়ে মমতা ব্যানার্জির সরকারের পদক্ষেপকেই সমর্থন করার কথা, মোদীর পুলিশ আর মমতা ব্যানার্জির পুলিশ এক লাইনে দাঁড়িয়ে সেই কাজই করেছে। এই জন্যই আমরা কর্মরত বিচারপতির অধীনে বিচারবিভাগীয় তদন্ত চেয়েছিলাম।
তিনি বলেন, একজন সিভিক ভলান্টিয়ারকে বাঁচানোর জন্য প্রমাণ লোপাটে মমতা ব্যানার্জির সরকার গোটা প্রশাসনকে নামিয়েছিল, একথা কে বিশ্বাস করবে? একা সঞ্জয়কে দোষী বানিয়ে মমতা ব্যানার্জি আর তাঁর ভাইপো গোড়া থেকে সঞ্জয়কে মেরে দিতে বলেছিলেন। আরও কারা যুক্ত ছিল খুঁজে বের করতে হবে, সঞ্জয়কেও তার জন্য মুখ খুলতে হবে।
একে কনকনে ঠাণ্ডা, তার মধ্যে একটানা ঝিরঝিরে বৃষ্টি। শিলিগুড়িতে এই পরিবেশের মধ্যেও টিকিয়াপাড়া মাঠে সমতল ও পাহাড় থেকে অনেক মানুষ সমবেত হয়েছিলেন সিপিআই(এম)’র জেলা সম্মেলন উপলক্ষে প্রকাশ্য সমাবেশে। সভায় মহম্মদ সেলিম ছাড়াও সভায় ভাষণ দেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য জীবেশ সরকার ও প্রবীন পার্টি নেতা অশোক ভট্টাচার্য। সভাপতিত্ব করেন পার্টির দার্জিলিঙ জেলা সম্পাদক সমন পাঠক। দুর্যোগের মধ্যেও সমবেত মানুষকে অভিনন্দন জানিয়ে জেলায় পার্টি এবং গণআন্দোলনকে তীব্রতর করার আহবান জানিয়েছেন তাঁরা। জাতি ধর্ম ভাষা নির্বিশেষে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়েছেন।
এদিন দুপুরে প্রথমে শিলিগুড়িতে হিলকার্ট রোডে পার্টির জেলা দপ্তর অনিল বিশ্বাস ভবনের সামনে জেলা সম্মেলন উপলক্ষে পার্টির পতাকা উত্তোলন প্রবীণ পার্টি নেত্রী অঞ্জলি বাগচী। শহীদ বেদীতে মাল্যদান করেন পার্টি নেতৃবৃন্দ। এরপর প্রকাশ্য সমাবেশের পরে শুরু হয় সম্মেলনের প্রতিনিধি অধিবেশনের পর্ব। সম্মেলন স্থলের নামকরণ হয়েছে কমরেড সীতারাম ইয়েচুরি নগর ও সম্মেলন মঞ্চের নামকরণ হয়েছে কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মঞ্চ। সম্মেলনে পার্টির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জিয়াউল আলম, রাজ্য কমিটির সদস্য সলিল আচার্য ও কিশোর দাশও উপস্থিত রয়েছেন। প্রকাশ্য সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন অন্যান্য বামপন্থী দলের নেতৃবৃন্দও।
সম্মেলনে খসড়া রাজনৈতিক সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করে দার্জিলিঙ জেলা কমিটির সম্পাদক সমন পাঠক এই জেলার বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে বলেছেন, বহু ভাষা, ধর্ম ও জনজাতির বাস এই জেলায়। তাঁদের শ্রেণী চেতনায় ঐক্যবদ্ধ করে সংগ্রাম গড়ে তোলাই আমাদের চ্যালেঞ্জ। জাতিসত্ত্বার ভিত্তিতে জেলার সমতল ও পাহাড়ে চা শ্রমিকদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করা হয়েছিল, কিন্তু মজুরি ও জমির লড়াইতে তাঁদের একজোট করায় ইতিবাচক ফল দেখা যাচ্ছে।
সম্মেলনের শুরুতে শোকপ্রস্তাব উত্থাপন করেন পার্টি নেতা দিলীপ সিং, আয়ব্যায়ের হিসাব পেশ করেছেন নুরুল ইসলাম। সম্মেলন পরিচালনা করছে দিলীপ সিং, ঝড়েন রায়, সুষমা লাকড়া, ক্ষুদিরাম রায়, স্নিগ্ধা হাজরা এবং কেবি ওয়াতারকে নিয়ে গঠিত সভাপতিমণ্ডলী। সম্মেলনে প্রতিনিধিরা এদিনই আলোচনা শুরু করেছেন, সম্মেলন শেষ হবে শনিবার।
Comments :0