Belgachhia Dumping Ground

সঙ্কটে ধস বিধস্ত বেলগাছিয়ার ভাগাড়বাসী

জেলা

খোলা আকাশের নিচে ত্রিপল টাঙিয়ে বসবাস করছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার।

এক মাসের বেশি সময় ধরে ফাটল ধরা কংক্রিটের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত ও ফাটল ধরে হেলে পড়া বাড়িতেই বসবাস করছেন বেলগাছিয়া ভাগাড়ের বাসিন্দারা। গত মাসের ২০ তারিখে বেলগাছিয়া ভাগাড় সংলগ্ন অঞ্চলে ধসের ফলে ফাটল ধরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের বসবাসের ঘর। ফাটল ধরে যাতাযাতের রাস্তায়। ভেঙে পড়ে বসবাসের ঘরবাড়ি।
গত ২০ মার্চ বেলগাছিয়া ভাগাড়ে ধসের ঘটনা ঘটে। ধসের জেরে ঝিল রোডের পাঁচটি বাড়ি পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। এ ছাড়া,  সরকারি হিসাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরও ৭০টি বাড়ি। ওই ঘটনার পরে রাজ্যের মন্ত্রী সহ কেএমডিএ’র পদস্থ অফিসার ও হাওড়া পৌরসভার কর্তারা দফায় দফায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। কিন্তু পরিদর্শনের পরেও বুধবার ভাগাড়ে গিয়ে দেখা গেল,  ধসের পরের চিত্র কিছুমাত্র পাল্টায়নি। ভাঙা ঘরের মেঝেতে বসেই পড়াশোনা করতে স্কুলে পড়া ছেলে মেয়েরা। এখনও ত্রিপলের নীচে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আশ্রয়ে রয়েছেন বহু মানুষ। 
একমাসের বেশি হলেও বদলায়নি এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট ও ভেঙে পড়া ঘরবাড়ির ছবি। ফাটল ধরা কংক্রিটের রাস্তা দিয়ে এখনও বিপদ মাথায় নিয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারা। যে সমস্ত পরিবার অন্যত্র চলে যায়নি তাঁরা তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাধ্য হয়ে বসবাস করছেন ফাটল ধরে হেলে পড়া বাড়িতেই। আবার যাদের বাড়ি একেবারে ভেঙে গেছে তাঁরা খোলা আকাশের নিচে ত্রিপল টাঙিয়ে বসবাস করছেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। তীব্র গরমে সূর্যের প্রখর তাপে বাধ্য হচ্ছেন থাকতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের থাকার জন্য লোহার কন্টেনারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এই তীব্র গরমে লোহার কন্টেনারের ঘরে থাকা যে কোন ভাবেই সম্ভব নয় মনে করেই বাধ্য হয়ে ফাটল ধরা ঘরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা। তাদের দাবি বিকল্প পুনর্বাসন না পেলে তাঁরা নিজেদের ঘর ছেড়ে যাবেন না। এদিকে ভাগাড়ে আবর্জনা ফেলা বন্ধ থাকায় আয়ের উৎস বন্ধ হতে বসেছে। এক বেলা খেয়ে কোন রকমে জীবন যাপন করছেন অনেক পরিবার। 
ভাগাড়ে ধসের পর ঘটনাস্থলে গিয়ে বহু প্রতিশ্রুতির কথা শোনা গিয়েছিল রাজ্যের মন্ত্রী থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের মুখে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান রাজ্যের মন্ত্রী থেকে শুরু করে শাসক দলের নেতারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের  স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। যে যে অবস্থায় ছিল তারা একই অবস্থায় পড়ে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন,  ১১৩টি পরিবার এখনও এলাকার একটি স্কুল ও ক্লাবে রাত্রিবাস করছে। আবার অনেক পরিবার তাদের ভিটে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র যেতে চান নি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুইবার জোর করে বাড়ি খালি করতে গেলে প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়েন তারা। ফিরে যেতে হয় জেলা প্রশাসনের কর্তাদের। বাসিন্দারা জানান ঘটনার পর থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে খাবারদাবার, জামাকাপড় ও পানীয় জল সরবরাহ করা হলেও বর্তমানে সেই সব সাহায্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বাসিন্দারা জানান ভাগাড়ের আবর্জনা থেকে প্লাস্টিক,  লোহা, তামা বা অন্যান্য সামগ্রী খুঁজে বের করে তা বিক্রয় করে অনেকের সংসার চলতো। ভাগাড়ে আবর্জনা ফেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আয় কমেছে বহু মানুষের। মাথার উপর থেকে ছাঁদ ও আয় কমে যাওয়ায় চরম অসুবিধায় পড়েছেন ভাগাড়বাসী। উপযুক্ত পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা। 

Comments :0

Login to leave a comment