demands for Yogi's resignation.

যোগীর ইস্তফারও দাবি উঠল

জাতীয়

চরম অব্যবস্থার জন্য রাজ্য-কেন্দ্রকে দায়ী করলেন বিরোধীরা
দশদিন আগেই আগুন লেগেছিল বেশ বড় আকারেই। ভস্মীভূত হয়েছিল সরকারি হিসাবে ১৮ হলেও বেসরকারি মতে ১৮০-রও বেশি তাঁবু বলে জানা যায়। এমন ভয়াবহ ঘটনা থেকেও যে শিক্ষা নেয়নি রাজ্য কিংবা স্থানীয় প্রশাসন, এর মর্মান্তিক পরিণতি বুধবার প্রত্যক্ষ করল মহাকুম্ভই। এদিন ভোররাতে ‘শাহী স্নান’-এর হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে সরকারি হিসাবমতো ৩০ জনের। জখম ৯০ জনেরও বেশি। এমন ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই নিরাপত্তা ব্যবস্থার গাফিলতি, সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় গুরুতর ত্রুটির অভিযোগই উঠে আসছে। দেশের বিরোধী নেতৃবৃন্দ স্পষ্টতই প্রশাসনিক ত্রুটি, উদাসীনতার পাশাপাশি মান্যগণ্য ব্যক্তিদের ‘নিরাপদে’ স্নানের ব্যবস্থার দিকে বেশি নজর দেওয়ার মাসুল গুনতে হলো সাধারণ দর্শনার্থীদের বলে অভিযোগ করেছেন। বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের পরেও এমন অব্যবস্থা কেন— প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। এমনকি মহাকুম্ভকে নিজেদের রাজনৈতিক প্রচারেও যথেচ্ছ ব্যবহার করছে বিজেপি বলেও তাঁদের অভিযোগ। এমন ঘটনার জন্য কেন্দ্রের এনডিএ এবং উত্তর প্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকারের চূড়ান্ত অপদার্থতাকেই দায়ী করেছে বিরোধীরা। দাবি উঠেছে, পদপিষ্টের দায় স্বীকার করে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যোগীর ইস্তফারও। পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথের সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগ রেখে গিয়েছেন বলে দাবি করার পাশাপাশি নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েই দায় সেরেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
এদিন তথাকথিত তিথি অনুসারে ছিল মৌনী অমাবস্যা। সেকারণেই মহাকুম্ভে ‘শাহী স্নান’ এবং লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থীর ভিড় জমে সঙ্গম প্রাঙ্গণে। এরই সঙ্গে প্রতিদিনই নেতা-মন্ত্রী থেকে সরকারি কর্তাব্যক্তিদের মতো মান্যগণ্য ব্যক্তিত্ব বা ভিআইপি-দের হাজিরাও চলছে প্রতিনিয়ত। সেই ভিড় সামলানোর পাশাপাশি এই ভিআইপি-দের প্রতি প্রশাসনের ‘অতি নজর’ দেওয়াও চলছে। একারণেই এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে বলার সঙ্গে প্রশাসনিক গাফিলতিকেই শূলে চড়িয়েছে বিরোধীরা। লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী ‘ব্যবস্থাপনায় চূড়ান্ত ত্রুটি এবং ভিআইপি-দের আনাগোনাকেই দায়ী করেছেন। এদিন এক্স হ্যান্ডেলে তিনি নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে এবং জখমদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে ‘ভিআইপি সংস্কৃতি’ অবিলম্বে বন্ধের দাবি তুলেছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘সাধারণ দর্শনার্থীদের তুলনায় ভিআইপি-দের প্রতি বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে।’ এরই সঙ্গে তাঁর সুপারিশ, ‘মহাকুম্ভে এখনও আরও স্নান বাকি আছে। এমন মর্মান্তিক ঘটনা এড়ানোর জন্য নিরাপত্তা এবং সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা আরও আঁটসাঁট করা জরুরি।’ রাহুল গান্ধীর থেকেও আরও তীক্ষ্ণ ভাষায় কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি ‘কাঁচা প্রস্তুতি, ভিআইপি-দের যাতায়াত, আত্মগরিমা প্রচারে ব্যস্ততা এবং অব্যবস্থাকেই’ সরাসরি দায়ী করেছেন তিনি। বিপুল অর্থ ব্যয় করার পরেও এত ত্রুটি থাকে কীভাবে বলে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। খাড়গে মনে করেন, ‘সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য থাকার ব্যবস্থা, খাদ্য এবং প্রাথমিক চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত করা উচিত। একই সঙ্গে ভিআইপি-দের জাতায়াতে লাগাম টানা প্রয়োজন।’ এমন পরিস্থিতিতে কংগ্রেস কর্মীদের দুর্গতদের পাশে থেকে সব ধরনের সাহায্য করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এদিনের মর্মান্তিক ঘটনা এত বড় ধরনের কুম্ভ সামলাতে উত্তর প্রদেশ সরকারের ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছে সিপিআই(এম)। এক্স হ্যান্ডেলে পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করা সত্ত্বেও এদিনের পদপিষ্টের ঘটনা যোগী আদিত্যনাথ সরকারের ব্যবস্থাপনার গুরুতর ত্রুটিই উন্মোচিত করে দিয়েছে।’ শোকগ্রস্ত পরিবারগুলির প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে সিপিআই(এম)। এদিন কলকাতায় সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরোর সদস্য ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, এত প্রচার এবং বিজ্ঞাপন করে, ধর্মীয় আবেগকে উসকে দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে জড়ো করল উত্তর প্রদেশের যোগী আদিত্যনাথের সরকার ও কেন্দ্রের মোদী সরকার। কিন্তু তাঁদের জন্য উপযুক্ত পরিকাঠমোর ব্যবস্থা করতে পারেনি। যোগী ও মোদী, উভয় সরকারই এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। এরা কেবল প্রচারে আছে, কিন্তু মানুষের জীবন সুরক্ষিত করতে এঁরা কোনও ভূমিকা পালন করতে পারে না। মহম্মদ সেলিম এদিন এই ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছেন। একইসঙ্গে, আহতদের সুষ্ঠু চিকিৎসার বন্দোবস্ত করার জন্য উভয় সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। কুম্ভমেলায় পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিমান বসু বলেছেন, ভাবাবেগ নিয়ে যেখানে এত মানুষের সমাগম হয় সেখানে সরকারের যে তৎপরতা ও ব্যবস্থাদির দরকার ছিল তা না থাকায় মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গিয়েছে। মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় শোক ও নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।
সমাজবাদী পার্টি প্রধান অখিলেশ সিং যাদব উত্তর প্রদেশ সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করে অবিলম্বে মহাকুম্ভের মতো এমন বৃহদাকার ধর্মীয় অনুষ্ঠানের প্রশাসনিক এবং প্রস্তুতিগত ব্যবস্থাপনা রাজ্য সরকারের বদলে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘যাঁরা এতদিন ধরে ‘বিশ্বমানের ব্যবস্থাপনা’ বলে বাগাড়ম্বর করছিলেন কিংবা আত্মপ্রচারে ব্যস্ত ছিলেন তাঁদের এতজনের মৃত্যুর নৈতিক দায় স্বীকার করে নিয়ে এখনই পদত্যাগ করা উচিত।’’ ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন এমন মর্মান্তিক ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত যাতে আগামীদিনে পুনরাবৃত্তি না ঘটে বলে জানিয়েছেন। তিনি আশাপ্রকাশ করেন, এই ঘটনার বিশদে তদন্ত করবে কেন্দ্রীয় সরকার যাতে পরবর্তী ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যায়। শিবসেনা (ইউবিটি) মনে করে, ভিআইপি-দের জন্য বেশ কয়েকটি অঞ্চল বিধিবদ্ধ করে দেওয়ার ফলেই এমন ঘটনা ঘটেছে। দলের সাংসদ সঞ্জয় রাউথ এদিন বলেছেন, ‘’১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে মহাকুম্ভের জন্য। তার পরেও এমন ঘটনা ঘটলো কেন? এত টাকা তাহলে কোথায় গেল? বিজেপি এই মহাকুম্ভকে সামনে রেখে রাজনৈতিক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এরা কুম্ভকে হাতিয়ার করে ভোটে জিততে চায়। এদের কোনও বিশ্বাস নেই, আছে স্রেফ রাজনীতি। আর তার জন্য প্রাণ যাচ্ছে সাধারণ মানুষের।’’ মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে ৩০ জনের মৃত্যুর ঘটনাকে রাউথ সরাসরি ‘রাজ্য প্রশাসনের দ্বারা খুন’ বলে অভিযোগও করেছেন।
এদিকে, দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে প্রচারে ব্যস্ত থাকা প্রধানমন্ত্রী মোদী পদপিষ্টের ঘটনা কানে যেতেই কিছুক্ষণের জন্য মহাকুম্ভে স্নান বন্ধ করে দেওয়ার পরামর্শ দেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে বলে এদিন দাবি করেন। তিনি দাবি করেন, ‘‘মৌনি অমাবস্যা উপলক্ষে বহু মানুষের সমাগম হবে বলে প্রথম থেকেই আমি যোগাযোগ রেখে চলছিলাম উত্তর প্রদেশ সরকারের সঙ্গে। ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গেও কথা বলি।’’ যাঁর নিহত হয়েছেন তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন মোদী। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহও প্রধানমন্ত্রীর সুরে গলা মিলিয়ে বলেছেন, ‘‘যোগী আদিত্যনাথ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলা হচ্ছে কেন্দ্রের তরফে। আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার।’’ আবার ভিএইচপি এদিনের ঘটনাকে অত্যন্ত বেদনাদায়ক মন্তব্য করে ‘ব্যবস্থপনায় যদি কোনও ধরনের ত্রুটি থাকে সেই ঘাটতি পূরণ করে নিতে সক্ষম হবে প্রশাসন’ বলে দাবি করেছে।
মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।

Comments :0

Login to leave a comment