Editorial

মার্কিন পৌষ মাস

সম্পাদকীয় বিভাগ

গত পাঁচ বছরে বিশ্বজুড়ে মোট অস্ত্র রপ্তানির ৪৩ শতাংশ নিজেদের দখলে আনতে সক্ষম হয়েছে। অথচ আগের পাঁচ বছরে আমেরিকার ভাগে ছিল ৩৫ শতাংশ। হিসাব পরিষ্কার রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধকে কাজে লাগিয়ে এবং গাজায় ইজরায়েলি গণহত্যাকে পূর্ণ সহায়তা দিয়ে অস্ত্রের বাজারে আমেরিকা তাদের দখলদারি অনেকটা বাড়িয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হয় ২০২২ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে। ইজরায়েলের গাজায় ধ্বংসলীলা শুরু হয় তারপরে। উভয় ক্ষেত্রেই আমেরিকা প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী। বস্তুত ইউক্রেনকে সামনে রেখে আমেরিকাই তিন বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়েছে। যুদ্ধ যাতে তাড়াতাড়ি শেষ না হয় তারজন্য অর্থ, অস্ত্র, কূটনীতি ইত্যাদি সব রকমে সাহায্য দেওয়া হয়েছে। দেশ ধ্বংসের কিনারায় পৌঁছে গেলেও ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি জেলেনেস্কি যাতে রণে ভঙ্গ না দেয় তার সব ব্যবস্থাই করেছে আমেরিকা। যে কারণে রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক হস্তক্ষেপ করেছে তার মূলেও রয়েছে আমেরিকা। শুধু তাই নয়, রাশিয়া ভীতি তুঙ্গে তুলে দিয়ে গোটা ইউরোপেও আমেরিকা তাদের অস্ত্র বিক্রি অনেকটা বাড়িয়ে নিয়েছে। এটাই সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার কৌশল। পাশাপাশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে এই পাঁচ বছরে (২০২০-২৪) ইউক্রেন হয়ে উঠেছে বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র ক্রেতা। বিশ্বের মোট বিক্রিত অস্ত্রের ৮.৮ শতাংশ কিনেছে ইউক্রেন। দ্বিতীয় স্থানে আছে ভারত ৮.৩ শতাংশ অস্ত্র কিনে। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম আছে যথাক্রমে কাতার, সৌদি আরব এবং পাকিস্তান। তেমনি অস্ত্র রপ্তানির দিক দিয়ে আমেরিকার পরেই আছে ফ্রান্স। তারপর রাশিয়া, চীন ও জার্মানি।
গত পাঁচ বছরে ইউক্রেন অস্ত্র কেনা ১০০ গুণ বাড়িয়েছে। আর ইউরোপের দেশগুলি বাড়িয়েছে ১৫৫ শতাংশ। এই সময়ে ভারতের অস্ত্র আমদানি ৯.৩% কমলেও এটা ভাবার কারণ নেই ভারত সামরিক খাতে ব্যয় কমাচ্ছে। বরং উল্টোটাই সত্য। চীনের সঙ্গে এবং পাকিস্তানের বিরোধ তীব্র আকার নেবার পর থেকেই ভারত সামরিক খাতে খরচ হু হু করে বাড়াতে থাকে। ফ্রান্স, আমেরিকা এবং ইজরায়েলের কাছে বিরাট মূল্যের অস্ত্র কেনার চুক্তি করেছে। সেসব অস্ত্র এখনও ভারতে এসে পৌঁছায়নি বা অবে আসতে শুরু করেছে। তাছাড়া ভারত প্রতিরক্ষা শিল্পে দেশি ও বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগে অবাধ ছাড়পত্র দেওয়ায় দেশেই উৎপাদন করা হচ্ছে অনেক অস্ত্র ও সরঞ্জাম।
আগে ভারতের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ ছিল রাশিয়া। ২০১০-১৪ সালে ভারতের অস্ত্র আমদানির ৭২শতাংশ এসেছে রাশিয়া থেকে। ২০১৫-১৯ সালে ৫৫ শতাংশ এবং ২০২০-২৪ সালে ৩৬ শতাংশ। গত ১৫ বছরে ভারত আমেরিকা, ফ্রান্স এবং ইজরায়েল থেকে অস্ত্র কেনা বাড়িয়েছে। এই তিন দেশই এখন ভারতের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী।
সামরিক খাতে ব্যয়ের নিরিখে বিশ্বে ভারতের স্থান চতুর্থ। শীর্ষে আছে আমেরিকা। বাকি সব দেশ মিলিয়ে সামরিক খাতে যত অর্থ ব্যয় করে আমেরিকা একাই তার থেকে বেশি অর্থ ব্যয় করে। সামরিক খাতে ব্যয়ে দ্বিতীয় চীন, তৃতীয় রাশিয়া, চতুর্থ ভারত। আমেরিকা, চীন ও রাশিয়া তাদের অস্ত্র নিজেরাই তৈরি করে তাই তাদের অস্ত্র আমদানি তেমন করতে হয় না। ভারতও এখন সেই পথ অনুসরণ করতে চাইছে। কিন্তু অস্ত্র গবেষণায় অন্যরা যত ব্যয় করে ভারত তার তুলনায় কিছুই প্রায় করে না। তাই অস্ত্রে স্বনির্ভর হওয়া খুবই কঠিন। ফলে আ‍‌মেরিকা-ইজরায়েলের উপরই ভরসা করতে হবে ভারতকে।
 

Comments :0

Login to leave a comment