তৃণমূল বা বিজেপি’র মতো কোনও দলের মন্ত্রী এতটা নৃশংস ও অমানবিক হতেই পারেন। তাদের দলের ডিএনএ-তেই সেই বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাই বলে একজন শিক্ষা মন্ত্রী যিনি কিনা একদা অধ্যাপনাও করেছেন, তিনি সন্তানসম ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে এতটা নিষ্ঠুর, নির্মম ও বিবেকহীন হন কি করে? আসলে ক্ষমতার দম্ভ তার এতটাই আকাশচুম্বী হয়েছে যে তিনি ধরাকে সরা ভাবতে শুরু করেছেন। তার ঔদ্ধত্য এতটাই অভ্রংলেহি হয়ে উঠেছে যে ছাত্র-ছাত্রীদের গণতান্ত্রিক অধিকার দাবিকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিতে দু’বার ভাবেন না। মুখ্যমন্ত্রীর হাত তার মাথায় আছে বলে ভাবছেন চাবকে সবাইকে সিধে করে দিতে পারেন। কপালে যেহেতু মন্ত্রীর টিকা তাই মনে করছেন কার এত দুঃসাহস তার পথ আটকায়। এটাও মনে করেন তিনি যখন শিক্ষা মন্ত্রী তখন ছাত্র-ছাত্রীরা করজোড়ে নতজানু হয়ে তার পদধূলি নেবে। তিনি চুরি-দুর্নীতি-কেলেঙ্কারি-লুঠতরাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও ছাত্ররা তাকে দেখে উদ্বাহু নৃত্য করবে এবং ধন্য ধন্য করবে। আর কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বছর বছর ছাত্র সংসদ নির্বাচন না করে ছাত্র-ছাত্রীদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে ভাবছেন চিরকাল তাদের জো হুজুরে বানিয়ে রাখবেন। আর কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বহিরাগত দুষ্কৃতীদের জড়ো করে শাসক দলের মজলিশখানা বানাবেন। কিন্তু যদি অন্যথা হয়, যদি বেয়াদপি করে, নির্বাচনের দাবি করে, গণতান্ত্রিক অধিকার চায় তাহলে এমন অবস্থা করে দেবেন যাতে নির্বাচনের কথা ভুলেও উচ্চারণ না করে। তিনি সেটাই করতে চেয়েছেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে তিনি তার আসল চেহারাটা দেখিয়ে দিয়েছেন। বিজেপি’র কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছ থেকে নৃশংসতা ও বর্বরতার শিক্ষা নিয়ে সেটা হাতে কলমে প্রয়োগ করেছেন ছাত্র-ছাত্রীদের নিজের গাড়িরতলায় পিষে মারার ব্যবস্থা করে। উত্তর প্রদেশে মোদীর মন্ত্রীর গাড়ি আন্দোলনরত কৃষকদের ওপর সবেগে চালিয়ে দিয়ে চারজন কৃষককে হত্যা করে নিজের ক্ষমতার সীমাহীন দম্ভের পৈশাচিক নিদর্শন গোটা দুনিয়াকে দেখিয়ে ছিলেন। এরাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী সেই বর্বরতার পথে মন্ত্রিত্বের ক্ষমতা ও দম্ভের প্রকাশ ঘটিয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছেন তিনিও কম যান না। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ছাত্র-ছাত্রীদের খুন করতে না পারলেও তিনজনকে গুরুতর জখম করে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। তারই পাশাপাশি তিনি যে কত বড় অভিনেতা সেটা প্রমাণ করতে সোজা পিজি হাসপাতালে গিয়ে নাটক জমিয়ে দিয়েছেন।
একদা অধ্যাপক, এখন তৃণমূলী অধ্যাপকদের নেতা, সর্বোপরি রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী নিজের গাড়ির চাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের পিষে দিয়ে ফিরেও তাকালেন না ছেলেমেয়েগুলো মরে গেছে না বেঁচে আছে। একবারও ভাবলেন না ওদের বাঁচানোর জন্য হাসপাতালে পাঠানো জরুরি কি না। বদলে পেছনে না তাকিয়ে সাঁই সাঁই করে গাড়ি চালিয়ে পৌঁছে গেলেন পিজি হাসপাতালে। সেখানে আক্রান্ত হবার, আহত হবার নিখুঁত অভিনয় করলেন। ছাত্র-ছাত্রীদের ঘাড়ে সব দায় চাপিয়ে দিয়ে অনুগত মিডিয়ার সামনে নিজেকে নির্দোষ মহান সাজার চেষ্টা করলেন। এই না হলে তৃণমূল নেতা। এমন অভিনয় পটুত্বের কল্যাণেই নেত্রীর কল্যাণে পূর্বতন চোর শিক্ষা মন্ত্রীর জেলবাসের পর বহাল তবিয়তে শিক্ষা মন্ত্রীর ক্ষমতা চেটেপুটে ভোগ করছেন। এ যাত্রায়ও নেত্রীর কাছে একশোয় একশো নম্বর পেতে তিনি মরিয়া।
নেত্রী তাকে যত নম্বরই দিন রাজ্যের ছাত্রসমাজ, তাদের অভিভাবক, সর্বোপরি শিক্ষানুরাগী গণতান্ত্রিক নাগরিক সমাজ রাশি রাশি ঘৃণা আর ধিক্কার সহযোগে তাকে শূন্য ছাড়া আর কিছুই দেবেন না। তার আচরণে প্রশ্ন উঠে গেছে আদতে তিনি শিক্ষামন্ত্রী না দাগী অপরাধী। তবে যাদবপুরের ঘটনা প্রমাণ করে দিয়েছে বাংলার শিক্ষা মন্ত্রীর পদে থাকার কোনও যোগ্যতা বা এক্তিয়ার তার নেই।
education minister or something else
শিক্ষামন্ত্রী না অন্য কিছু

×
Comments :0