তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই যিনি নেত্রীর অতি ঘনিষ্ঠ সঙ্গী, একদা যিনি নেত্রীর পরই দলে সবচেয়ে প্রভাবশালী হিসাবে পরিচিত ছিলেন সেই পার্থ চ্যাটার্জি শিক্ষা মন্ত্রী হিসাবে দুর্নীতির দায়ে কয়েক বছর ধরে জেলে। মোটা টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের অবৈধদের চাকরি দিয়ে শত শত কোটি টাকা কামানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এরপরও নেত্রীর কাছে তিনি এতটাই বিশ্বস্ত ছিলেন যে জেলের কার্যত স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যাবার পরও শিক্ষা মন্ত্রীর পদ থেকে দীর্ঘদিন অপসারণ করা হয়নি। দুনিয়াকে দেখানো হয়েছে যত দুর্নীতি করুন বা বেআইনি কাজ করুন অথবা যতখুশি টাকা লুট করুন মমতা জমানায় তিনি সসম্মানে শিক্ষা মন্ত্রী পদে বহাল থাকেন। পার্থ চ্যাটার্জির পর এবার বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগে এফআইআর হয়েছে। এফআইআর’র যেসব ধারা যুক্ত হয়েছে তার সব কটিই জামিন অযোগ্য। অর্থাৎ একবার গ্রেপ্তার হলে জামিন মেলা কঠিন। পূর্বসূরি প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রীর মতো বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রীরও দীর্ঘস্থায়ী জেলবাস একরকম নিশ্চিত। অবশ্য উচ্চ আদালতের গুঁতোয় পুলিশ এফআইআর করতে বাধ্য হলেও শেষ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করবে বলে মনে হয় না। ওপরওয়ালার নির্দেশে হয়তো কোনও তদন্তই হবে না। সেক্ষেত্রে আদালতের হুকুম জরুরি হয়ে পড়তে পারে।
মজার ব্যাপার হলো যে সরকারের পুলিশ সেই সরকারেরই শিক্ষা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে নিজের গাড়ির তলায় চাপা দিয়ে খুনের চেষ্টার অভিযোগে এফআইআর করেছে। আবার সেই সরকারের নির্দেশেই সেই পুলিশ খুনের চেষ্টায় অভিযুক্ত শিক্ষা মন্ত্রীর নিরাপত্তা বহুগুণ বাড়িয়ে জেট ক্যাটাগরি করেছে। যে রাজ্যে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নেই, ক্যাম্পাসে বহিরাগত শাসক দলের গুন্ডাদের হাতে ছাত্র-ছাত্রীরা অসহায়, যেখানে মহিলাদের সম্ভ্রম, শালীনতা, নারীত্ব বিপন্ন সেখানে ছাত্র-খুনের চেষ্টার অভিযোগে পুলিশের এফআইআর’র মুখে শিক্ষা মন্ত্রীর নিরাপত্তা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। তবে পুলিশ শিক্ষা মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করতে এলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ বাধা দেবে? চোরের দলের চোরের সরকারের মহিমা বোঝা দায়।
ভাবতে লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায় এই শিক্ষা মন্ত্রীই একদা অধ্যাপক ছিলেন। ভাবা যায় একজন অধ্যাপক যিনি আবার শিক্ষা মন্ত্রী তিনি কিনা নিজের গাড়ির নিচে চাপা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মেরে ফেলার চেষ্টা করেন। এরপরও তিনি বুক ফুলিয়ে গলা উঁচু করে কথা বলেন নির্লজ্জভাবে। এই শিক্ষা মন্ত্রীই একবার প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিলেন যারা খেটে তাঁকে ভোটে জিতিয়েছে দলের সেই ছেলে মেয়েদের চাকরি দেবেন। ইনি শুধু মন্ত্রী নন শিক্ষা মন্ত্রী। ইনি মন্ত্রিত্ব করেন, ক্ষমতা জাহির করেন কিন্তু শিক্ষাক্ষেত্রে ন্যূনতম কোনও কাজ করতে পারে না। শিক্ষক-অধ্যাপক ছাত্রদের ন্যায্য দাবিপূরণ করতে পারেন না। তাদের সঙ্গত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বহিরাগত দুষ্কৃতীর দখলে। পঠন-পাঠন শিকেয়। শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির ঘাঁটি। জেলবাসী ও জেলমুখী শিক্ষা মন্ত্রীরা দায়িত্ব নিয়ে নিখুঁত পরিকল্পনা করে বাংলার শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে চলেছেন।
Education Ministers
শিক্ষা মন্ত্রীরা হয় জেলে নয় জেলের পথে

×
Comments :0