Farmer suicide bardhaman

ঋণের ফাঁসে জড়িয়ে আত্মঘাতী কৃষক

রাজ্য

Farmer suicide bardhaman

সংসারে তীব্র অভাব ও ঋণের ফাঁসে জড়িয়ে ভাতারের বেলেণ্ডায় ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হলেন এক কৃষক। আত্মঘাতী কৃষকের নাম মহফুজ আলি শাহ (৪৫)। ভাতার থানার রাধানগরে তাঁর বাড়ি। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যা থেকে তাঁর খোঁজ মিলছিল না। রাতে বেলেণ্ডাপুলের কাছে রেললাইনে এক ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে জিআরপি। তারা দেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তে পাঠায়। 

 

রেল লাইনে ঝাঁপ দিয়ে তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জিআরপির অনুমান। বৃহস্পতিবার সকালে পরিবারের লোকজন তাঁর খোঁজে ভাতার থানায় যান। সেখানে গিয়ে পরিবারের লোকজন মৃতের ছবি দেখে দেহটি মহফুজের বলে শনাক্ত করেন। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তীব্র আর্থিক সংকটের কারনেই তিনি বেশ কিছুদিন ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। তাঁর স্ত্রী ও দুই ছেলে আছে। তাঁরা স্কুলে পড়েন।  প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, মহফুজ শাহের ৮-১০ বিঘে জমি। কয়েক বছর ধরেই চাষ করে তাঁর ক্ষতি হয়েছে। সরকারী সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারেনি। গত আমন চাষে তাঁর ধান পোকায় নষ্ট হয়ে যায়। তারপর থেকেই মানসিকভাবে প্রচন্ড ভেঙ্গে পড়েন। গ্রাম্য মহাজন ছাড়াও কৃষি ঋণ তাঁর ছিল। বন্ধন সহ মাইক্রোফিনান্সে এই এলাকায় একাধিক মহিলা  ঋণগ্রস্ত। সেই ঋণও তাঁর পরিবার নিয়েছিল কিনা জানা যায়নি। 

 

তবে বাজারে প্রচুর দেনা ছিল এমন কথায় শুনিয়েছেন প্রতিবেশীরা। খুবই কষ্ট করে পরিশ্রমেও সংসার ভাল করে চলছিল না। গ্রামের আর্থিক মন্দাকেই দুষেছেন এখানকার চাষীরা। যে সমস্ত মানুষ শুধুমাত্র চাষের উপর নির্ভরশীল তাঁরা কেউই ভালো নেই। চাকরী করেন পাশাপাশি চাষ করেন তাঁরা কিছুটা ভাল থাকলেও গাঁয়ের গরিব মানুষ খুবই কষ্টে আছেন। অধিকাংশ মানুষ গ্রাম্য মহাজনের কাছে চড়া সুদে টাকা ধার নিতে বাধ্য হয়েছেন। মহফুজ শাহও ধার করেছিলেন। বুধবার সন্ধ্যায়  সাইকেল নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়েছিলেন তারপর আর রাতে ঘরে ফেরেননি। ভোরবেলায় ট্রেনে মাথা দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন এমনটাই আশঙ্কা করছেন গ্রামের মানুষ। মহাজনী ঋণের চাপ সহ্য করতে পারেননি ফলে বাঁচার প্রতি অনীহা থেকেই  ট্রেনে ঝাঁপ দেন তিনি। বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ যদিও এই মৃত্যুকে মুখ্যমন্ত্রীর বানানো ছকে ফেলেই জানিয়েছে মানসিক অবসাদে কৃষকের মৃত্যু হয়েছে কিন্তু এর পেছনে যে মহাজনী ঋণের চাপ, অভাব বড় কারন তা চেপে যাবার চেষ্টা হয়েছে। 


 গ্রামবাসী জাবেদ আলি অভিযোগ করেছেন, ধান কেনার নামে সরকার ইঁদুর মারার কল খুলে রেখেছে। সরকারকে সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করতে হবে সেই টাকা নিয়ে আর বোরো চাষ করা সম্ভব নয়। তাই  ক্ষুদ্র চাষীরা গ্রামের মহাজনের কাছেই অভাবী বিক্রি করে দেনার শোধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে ফড়ে আর মিলমালিকরা উপকৃত হচ্ছেন সরকারী নীতিতে। অন্যদিকে গ্রামে কৃষকদের মধ্যে যাতে ক্ষোভ দানা বাঁধতে না পারে তার জন্য ধর্মের নামে বিভেদ তৈরি করছে তৃণমূল-বিজেপি।

Comments :0

Login to leave a comment