অনেক সহ্য করেন, আর নয়। যাবতীয় ভয় ভীতি কাটিয়ে, সরকারের ধমক-চমক, হুমকিকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে রাজ্যের কোষাগার থেকে বেতন পাওয়া কর্মচারী শিক্ষকরা বুঝিয়ে দিয়েছেন হকের দাবিতে তারা কতটা এককাট্টা। ধর্মঘট আটকাতে করণীয় কোনও কিছুই বাদ রাখেনি মমতা ব্যানার্জির সরকার। গরহাজির হলে বা ধর্মঘট করলে কড়া ব্যবস্থা নেবার ঘোষণা ছিল।
বেতন কাটা, চাকরি খাওয়া, চাকরি জীবন থেকে একদিন বাদ দেওয়া থেকে শুরু করে অনেক হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তোয়াক্কা করেননি সিংহভাগ শিক্ষক-কর্মচারী। কাজে যোগ না দিয়ে বাইরে বিক্ষোভ অবস্থান করেছেন। মিছিলও করেছেন। ফলে অধিকাংশ অফিস অচল হয়ে যায়। দু’-একজন হলেও কাজ করেননি প্রায় কেউই। স্কুলগুলিরও একই ছবি।
বেশিরভাগ শিক্ষকই যাননি। নামমাত্র সংখ্যায় হাজির থাকে ছাত্র-ছাত্রীরা। কোনও কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গেট খোলারও কেউ ছিল না। বকেয়া মহার্ঘভাতা, রাজ্য সরকারের সমস্ত শূন্য পদে স্বচ্ছভাবে নিয়োগ সহ একাধিক দাবিতে এই ধর্মঘট মমতা জমানায় কর্মচারী শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি স্পর্ধিত প্রকাশ ঘটেছে এই ধর্মঘটে যা এককথায় নজিরবিহীন।
মমতাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে চাবুক দিয়ে ন্যায্য আন্দোলন দমিয়ে রাখা যাবে না। এই বার্তাও মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে তাঁর মরজিই শেষ কথা, তাঁর হুকুমই নতমস্তকে মেনে নিতে এমনটা যেন তিনি আর না ভাবেন। মহার্ঘভাতা নিয়ে কর্মচারী-শিক্ষক এবং অন্যান্য অংশের মানুষের মধ্যে বিভাজনের যে সূক্ষ্ম রাজনীতির খেলা তিনি খেলতে চাইছেন সেটাও ব্যর্থ হবে বলে বার্তা দেওয়া হয়েছে।
মহার্ঘভাতার দাবি বহুদিনের। বস্তুত তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ন্যায্য ডিএ থেকে ধারাবাহিক বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষক কর্মচারীরা। সরকার কোনও মতেই ডিএ দিতে রাজি নয়। হাইকোর্ট ডিএ-কে কর্মচারীদের অধিকার হিসাবে রায় দেবার পরও সরকার ডিএ দিতে অস্বীকার করছে। সরকারি পদে লক্ষ লক্ষ শূন্য পদে নিয়োগ বন্ধ রাখা হয়েছে। বদলে অস্থায়ী, ঠিকা কর্মী দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে সামান্য মজুরিতে। কয়েক লক্ষ দলীয় কর্মীকে সিভিক পুলিশ নাম দিয়ে পুলিশ প্রশাসনে ঢোকানো হয়েছে।
এখন তাদের একাংশকে স্থায়ী করার চেষ্টা হচ্ছে। কর্মী নিয়োগ না করে অবসর প্রাপ্তদের পুনর্নিয়োগ করা হচ্ছে সামান্য বেতনে অস্থায়ীভাবে। ফলে রাজ্যের বেকার ছেলেমেয়েরা সরকারি চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
শিল্পে-বাণিজ্যে কোনও বিনিয়োগ নেই। গত এক দশকে কোনও বড় শিল্প হয়নি। এমনকি মাঝারি শিল্পও হয়নি। উলটে বন্ধ হয়েছে পুরানোগুলি। ফলে বেসরকারি ক্ষেত্রেও কাজের আকাল রুজির সন্ধানে এরজ্যের বেকাররা চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে ভিন রাজ্যে। উচ্চ শিক্ষিত, যোগ্য, দক্ষ ছেলে মেয়েদের জন্য এরাজ্যে কোনও কাজ নেই।
যে কাজ জোটে তার মজুরি গড়পড়তা মাসে দশ হাজারের বেশি নয়। তাতেও বারো-চৌদ্দ ঘণ্টা কাজ। ছুবি নেই, কাজের গ্যারান্টি নেই। নেই অন্য কোনোরকম সুযোগ-সুবিধা। নিম্নমানের নিম্ন মজুরির অনিশ্চিত অর্থনীতি গ্রাস করেছে বাংলাকে। সরকারি ক্ষেত্রে যে কটি নিয়োগ হয়েছে সেটা মোটা টাকা ঘুষের বিনিময়ে অযোগ্য অপদার্থদের। সরকারি চাকরি বিক্রি তৃণমূলীদের সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।
এমন একটা রাজ্যে সরকার দু’হাতে ঋণ নিচ্ছে আর হরি লুটের মতো তা বিলি করছে। কোনও পরিকল্পনা নেই। সামাজিক প্রকল্পে সরকারের ব্যয় জরুরি। কিন্তু টাকা বিলি করে মানুষকে সক্ষম ও স্বনির্ভর করা যায় না। পাশাপাশি বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করতে হয়। কর্মসংস্থান তৈরি পরিকল্পনা করে ধাপে ধাপে এগোতে হয়। এরাজ্যে সেসবের বালাই নেই। শুধু ভোট কেনার ফন্দি। এমন সর্বনাশ ব্যবস্থার বিরুদ্ধেই মোক্ষম ধাক্কা দিয়েছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা
Comments :0